দুর্ঘটনায় মন্ত্রী নিহত
৪ জুন ২০১৪ময়না তদন্তের রিপোর্টে বলা হয় দুর্ঘটনার কারণে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গোপীনাথ মুন্ডের শরীরের ভেতরে গুরুতর আঘাত লাগে এবং তাতেই হার্টফেল করে তাঁর মৃত্যু হয়৷ আহত অবস্থায় প্রথমে তাঁকে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সে নিয়ে গেলে ডাক্তাররা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন৷ গোপীনাথ মুন্ডের মরদেহ এরপর নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লির বিজেপির সদর দপ্তরে৷ প্রধানমন্ত্রী মোদী থেকে বিজেপির নবীন-প্রবীণ নেতা, মন্ত্রী এবং কর্মীরা মরদেহে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন৷
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক শোকবার্তা পাঠিয়ে বলেছেন ভারত এক বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতা এবং বাংলাদেশ তাঁর এক বন্ধুকে হারালো৷
মঙ্গলবার ভোরে বিমানবন্দরে যাবার পথে দিল্লির পৃথ্বীরাজ রোড আর তুঘলক রোডের মোড়ে অন্য একটি গাড়ির সঙ্গে মুন্ডের গাড়ির ধাক্কা লাগে৷ পুলিশের মতে, অন্য গাড়িটি ট্রাফিক সিগনাল অমান্য করায় এই দুর্ঘটনা ঘটে৷ অন্য গাড়িটি পুলিশ নিজেদের হেফাজতে নিয়ে গাড়ির চালক গুরজিন্দর সিংকে গ্রেপ্তার করে৷ গোপীনাথ মুন্ডের মরদেহ বিমানে নিয়ে যাওয়া হয় মহারাষ্ট্রের লাটুরে৷ সেখান থেকে তাঁর গ্রামের বাড়ি ভীড জেলায়৷ বুধবার সেখানেই তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হবে৷
উল্লেখ্য, দিল্লিতে যে হারে গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে, তারসঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে ট্রাফিক নিয়মবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা, বিশেষ করে তরুণ সম্প্রদায়ের মধ্যে৷ দ্বিতীয়ত ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে মোটর ড্রাইভিং শেখার স্কুলগুলির সঙ্গে পরিবহণ বিভাগের যোগসাজশ আছে এমনটাই সন্দেহ অনেকের৷ টাকার বিনিময়ে ঘরে বসেই পেয়ে যায় লাইসেন্স৷ তাই রোজ গোটা কয়েক জীবন অকালে চলে যায় রাজধানী শহর দিল্লিতে৷ পুলিশ জরিমানা করে ঠিকই, কিন্তু তাতে ট্রাফিক নিয়ম লঙ্ঘনকারীর হেলদোল নেই৷ কয়েক শো টাকা দিয়ে চলে যায় বলে অভিযোগ৷
কেমন নেতা ছিলেন মুন্ডে?
মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে বিজেপি নেতা গোপীনাথ মুন্ডের এক অগ্রণী ভূমিকা ছিল৷ ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিজেপি-শিবসেনা জোটকে ২৩টি আসনে জেতাতে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য৷ তিনি ছিলেন বিজেপির অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির মুখ৷ আগামী বছর অক্টোবর মাসে মহারাষ্ট্র বিধানসভার ভোট৷ মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে মুন্ডের সঙ্গে শিবসেনার কাজিয়া শুরু হয়৷ কিন্তু রাজনীতিতে পোড় খাওযা মুন্ডের পাল্লা ছিল ভারি৷ রাজ্যের অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির নেতা হিসেবে তাঁর অকালমৃত্যুতে সেখানে সৃষ্টি হলো একটা শূন্যতা৷ গ্রামীণ মহারাষ্ট্র ছিল তাঁর প্রভাব প্রতিপত্তির শক্ত ভিত৷
গোপীনাথ মুন্ডের রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয় কার্যত তাঁর আত্মীয় বিজেপির বলিষ্ঠ নেতা প্রয়াত প্রমোদ মহাজনের কাছে৷ তিনিই ছিলেন মুন্ডের রাজনৈতিক গুরু, বন্ধু ও পথপ্রদর্শক৷ প্রমোদ মহাজনের এক বোনকে বিয়ে করেন মুন্ডে৷ কিন্তু ২০০৬ সালে নিজের দাদার হাতে প্রমোদ মহাজনের মৃত্যু হলে গোপীনাথ মুন্ডে হয়ে পড়েন একা এবং একঘরে৷ রাজনৈতিকভাবে একেবারে কোণঠাসা হয়ে পড়েন বিজেপির অন্যান্য নেতাদের চাপে৷ কিন্তু কয়েক বছর এইভাবে থাকার পর আবার তিনি জেগে ওঠেন ফিনিক্স পাখির মত৷ তাঁর ৩৬ বছরের রাজনৈতিক জীবন ছিল নানা ঘাত প্রতিঘাতে দীর্ণ৷ কিন্তু তিনি হার মানেনি৷ ছাত্র জীবনে সংঙ্ঘপরিবারের সক্রিয় সদস্য হিসেবে শুরু হয় তাঁর রাজনৈতিক জীবন৷ তারপর ১৯৯৫তে বিজেপি-শিবসেনা জোট সরকারে তিনি হন উপ-মুখ্যমন্ত্রী৷ সেখান থেকে মোদী সরকারের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী ২০১৪ সালে৷ মহারাষ্ট্রের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর অভাব অনুভব করবে বিজেপি৷
১৯৪৯ সালে মহারাষ্ট্রের আর্থিক দিক থেকে অনগ্রসর মারাঠাওয়াড়া অঞ্চলের ভীড জেলার পার্লি গ্রামে গোপীনাথ মুন্ডের জন্ম৷ কমার্স ও আইনে স্নাতক৷ জরুরি অবস্থার সময় জয়প্রকাশ নারায়নের আন্দোলনে শামিল হয়ে তিনি জেল খাটেন ১৬ মাস৷