1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারত-‌চীন ‌স্নায়ুযুদ্ধ

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
৭ আগস্ট ২০১৭

ভুটান-ভারত-‌চীন সীমান্তের ডোকলাম নিয়ে বিবাদ তুঙ্গে৷ ১৯৬২ সালের পর ভারত-চীনের মধ্যে এমন টানাপোড়েন দেখা যায়নি৷ পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম বলছে এটা ‘চীনা আগ্রাসন’ আর চীন বলছে, ভারত সেনা প্রত্যাহার না করলে যুদ্ধের পথে হাঁটবে তারা৷

https://p.dw.com/p/2hnoI
ভারত সীমান্তের কাছে চীনের সেনাবাহিনীর অনুশীলনছবি: picture-alliance/AP Photo/CCTV

ভুটানের মাটিতে ঢুকে সড়ক নির্মাণ করছিল চীন, অভিযোগ ভারত ও ভুটানের৷ গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে গোলমাল শুরু হয়েছে ভারত-ভুটান-চীন সীমান্তের ডোকলামে৷ সড়ক নির্মাণের কাজ বন্ধ করতে সেখানে সেনাবাহিনী পাঠিয়ে দেয় ভারত৷ এরপর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে৷ দু'পক্ষই ডোকলামকে ঘিরে বিপুল সৈন্য সমাবেশ ঘটায়৷ বিতর্কিত এলাকার আশেপাশের বিভিন্ন সামরিক ছাউনিতে এবং অস্থায়ী শিবিরে দু'পক্ষই প্রায় ৪০০০ করে সৈন্য পাঠিয়ে দেয়৷ এখন ডোকলামে মুখোমুখি দুই দেশের সেনা৷

এ সবের মধ্যেই এক বিবৃতিতে বেজিং ১৮৯০ সালের চীন-ব্রিটিশ চুক্তির উল্লেখ করেছে৷ তাদের দাবি, চুক্তি অনুযায়ী ডোকলাম চীনের এক্তিয়ারভুক্ত৷ ভারত অবশ্য আগেই এই দাবির বিরোধিতা করেছে৷ ডোকলামে সড়ক নির্মাণের আগে সীমান্ত সৌজন্যের খাতিরে ভারতকে আগাম জানানো হয়েছিল বলে দাবি চীনের৷ দীর্ঘ টানাপড়েন চলাকালীন ভারত ও চীন উভয়েই পিছপা হতে নারাজ৷ একদিকে, চীন তাদের সরকারি সংবাদমাধ্যম, বিদেশ মন্ত্রক ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে কাজে লাগিয়ে বার বার যুদ্ধের হুমকি দিয়ে চলেছে৷ অন্যদিকে, ভারতের সেনাপ্রধান, প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং বিদেশমন্ত্রী চীনা হুঁশিয়ারির জবাব দিচ্ছেন৷ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নাম না করে ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘‘চীনের নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব বা উন্নয়নের পক্ষে ক্ষতিকর এমন কোনো বিষয় মেনে নেওয়া হবে না৷’’

চীনের আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে চিন্তিত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নেতাজি সুভাসচন্দ্র বসুর প্রপৌত্র তথা লোকসভার সাংসদ সুগত বসু৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানান, ‘‌‘‌আজকের বিশ্বে ভারত এবং চীন একসঙ্গে প্রভাবশালী হয়ে উঠছে৷ এই দু'টি দেশ যাতে যুদ্ধের দিকে না যায়, সেটা সত্যিই বড় চ্যালেঞ্জ৷ ভারত কূটনৈতিক সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ বিভিন্ন সংবাদপত্রে চীনের আগ্রাসী মনোভাব শোনা যাচ্ছে৷ আসলে একটি রাস্তা বানাতে গিয়ে চীন ওদের বাতাংলা থেকে শিলিগুড়ি করিডর বা চিকেন নেক পর্যন্ত নেমে এসেছে৷ এটা চিন্তার বিষয়৷ আমার মনে হয়, এখন ভারতের পক্ষ থেকে ভারত মহাসাগরে কৌশলগত অবস্থান নেওয়ার প্রয়োজন আছে৷ তবে ভারত-‌চীন সম্পর্ক শুধুমাত্র ডোকলামে কী হচ্ছে, তার ওপর দাঁড়িয়ে নেই৷’’

‘‘ভারত-চীন সম্পর্ক শুধুমাত্র ডোকলামে কী হচ্ছে, তার ওপর দাঁড়িয়ে নেই’’

ডোকলাম নিয়ে ১৫ পাতার দীর্ঘ কূটনৈতিক বিবৃতি প্রকাশ করেছে চীনের বিদেশ মন্ত্রক৷ তাতে বলা হয়েছে, ‘‘‌ডোকলামে ভারতীয় সেনার সংখ্যা কমে গেছে৷’’ দাবি করা হয়েছে, ‌১৮ জুন ২৭০ জন ভারতীয় সেনা দু'টি বুলডোজার নিয়ে ডোকলামে এসেছিলেন৷ এক সময় সেখানে প্রায় ৪০০ ভারতীয় সেনা ছিল৷ অথচ এখন সেখানে মাত্র ৪০ জন সেনা আছেন!‌

চীনের এই বিবৃতির পরে ভারত অবশ্য পালটা দাবি করেছে, যে দিন থেকে দু'দেশের সেনা ডোকলামে মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে, সেদিন থেকেই ৩৫০ জন ভারতীয় সেনা সেখানে রয়েছেন৷ এখনও সেনা প্রত্যাবর্তনের ঘটনা ঘটেনি৷

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আলোচনার পথে হাঁটার বার্তা দিচ্ছেন৷ তিনি ‌বলেছেন, ‘‌‘‌আলোচনা ও বিতর্কই এশিয়ার প্রাচীন ঐতিহ্য৷ সংঘাত মেটাতে সেই আলোচনার পথেই বিশ্বাসী ভারত৷’’

Karte Doklam Hochebene ENG
ভুটান-ভারত-‌চীন সীমান্তের ডোকলাম নিয়ে বিবাদ তুঙ্গে

ভারতীয় কূটনীতিকরা মনে করছেন, ভারতের পাশাপাশি চীনও ডোকলাম নিয়ে উত্তেজনা কমাতে চাইছে৷ চীনের বিবৃতি থেকে তারই ইঙ্গিত মিলেছে৷ মনে করা হচ্ছে, সীমান্তে উত্তেজনা কমানোর জন্য দু'দেশের পক্ষ থেকেই সক্রিয়তা শুরু হয়েছে৷ চীন আসলে স্নায়ুর লড়াইয়ে ভারতকে বেশ কিছুটা চাপে ফেলতে চেষ্টা করছে৷ কিন্তু এখন চীনের উপরেও মার্কিন চাপ বাড়ছে৷ সামনেই চিনা কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেস৷ আবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও সেপ্টেম্বর মাসে চীনে ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে যাবেন৷ ফলে দু'পক্ষই উত্তেজনা কমাতে চাইছে৷ ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের চীন সফরের সময়েই উত্তেজনা কমানোর চিত্রনাট্য তৈরি হয়েছিল বলে কূটনীতিকরা মনে করছেন৷

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা ‘গ্লোবাল টাইমস’-এর নিবন্ধে প্রতিরক্ষা, কূটনৈতিক ক্ষেত্রে চীনা বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন, ডোকলাম থেকে ভারতীয় সেনাকে হটাতে দু'সপ্তাহের মধ্যে চীন ছোট মাপের ‘মিলিটারি অপারেশন'-এ যেতে পারে৷ গোটা পরিস্থিতির জন্য মোদীর দিকেই আঙুল তুলে বলা হয়েছে, ‌মোদী চীনের প্রতি কড়া অবস্থান নিতে গিয়ে নিজের দেশকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন৷

এদিকে ইয়াঙ্গনে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভিডিও বার্তায় মোদী বলেছেন, ‘‘এই শতাব্দীতে গোটা বিশ্বই পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত৷ একে-অপরের উপর নির্ভরশীল৷ সামনে এখন অনেক চ্যালেঞ্জ৷ আমি আত্মবিশ্বাসী, এশিয়ার প্রাচীন ঐতিহ্য আলোচনা ও বিতর্কের মধ্যেই এর সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে৷’’

ভারতের বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও বলেছেন, ‘‘যুদ্ধকে এড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমে সংকট মেটানো বুদ্ধিমত্তার পরিচয়৷’’

তবে দুই দেশের রাষ্ট্র নায়করা প্রকাশ্যে যা-‌ই বলুক না কেন, উভয় দেশের অন্দরে কিন্তু যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব জাগিয়ে তোলা হয়েছে৷ প্রশ্ন হচ্ছে, এতে কার লাভ?‌

আপনার মতামত জানান নীচের ঘরে...