1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তিস্তা কেন গুরুত্বপূর্ণ

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি১২ জানুয়ারি ২০১৪

তিস্তা নদী ভারত ও বাংলাদেশের কাছে অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়৷ নতুন তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি ভারত ও বাংলাদেশের ২৫ কোটি মানুষের কাছে আশার আলো জাগিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু ভূ-রাজনৈতিক কারণে আজও তা কার্যকর হয়নি৷ এর সমাধান কী?

https://p.dw.com/p/1Ap1V
ছবি: DW/A. Chatterjee

নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ৷ ভারতের পশ্চিমবঙ্গও একই বন্ধনিভুক্ত৷ দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশ প্রধানত কৃষিপ্রধান৷ জলের ওপর নির্ভরশীল৷ জলের ব্যবহারও মোটামুটি একই ধরণের৷ তাই অভিন্ন নদীগুলির জল ভাগাভাগি করা ছাড়া পথ নেই৷ সেক্ষেত্রে আন্তঃসীমান্ত নদীগুলির গুরুত্ব অনস্বীকার্য৷ ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আছে ৫৪টি আন্তঃসীমান্ত নদী৷ এর মধ্যে ৪৩টি অভিন্ন নদীর বেশিরভাগ জল আটকে রাখে ভারত, যেটা প্রতিবেশি দেশের পক্ষে কার্যত অবিচার৷ ৫৪টি অভিন্ন নদীর মধ্যে একমাত্র গঙ্গানদীর জলবণ্টন চুক্তি কার্যকর হয় ১৯৯৬ সালে যার মেয়াদ মাত্র ৩০ বছর৷ তিস্তা নদীর জলবণ্টন চুক্তি সমান গুরুত্ব রাখে উত্তর-পূর্ব বাংলাদেশের জন্য৷ কিন্তু এই চুক্তিতে ভূ-রাজনৈতিক রং চড়ানোর দরুণ আজও তা কার্যকর হয়নি৷

Brücke Fluß Teesta Indien
দার্জিলিংয়ে তিস্তার ওপর করোনেশন সেতুছবি: DW/A. Chatterjee

কেন হয়নি তার কারণটা সহজবোধ্য৷ পশ্চিমবঙ্গের বক্তব্য, উত্তরবঙ্গের ছয়টি জেলার দশ লাখ হেক্টর জমি তিস্তা নদীর জলের ওপর নির্ভরশীল৷ উপরন্তু তিনটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ চলেছে, তার একটি সিকিমের সঙ্গে৷ উল্লেখ্য, তিস্তা নদী সিকিম হয়ে উত্তরবঙ্গের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যায় উত্তর-পূর্ব বাংলাদেশে৷ তাই নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় জল ছাড়া না হলে কলকাতা বন্দরের নাব্যতা কমে যাবে পলি জমার কারণে৷ বাংলাদেশের প্রস্তাব ছিল গাজোলডোবায় ৫০:৫০ অনুপাতে জল ভাগাভাগির৷ ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার মানলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার তা মানতে নারাজ৷ যুক্তরাষ্ট্রীয় কারণে রাজ্য সরকারের অনুমোদন দরকার বলে তিস্তা চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হওয়া সত্ত্বেও তা আজ পর্যন্ত দিনের আলো দেখেনি৷

ভারত-ভিত্তিক গ্লোবাল থিংক-ট্যাংক মনে করেন, তিস্তা নদীর জলের সমবণ্টন হলে একটি যৌথ বিনিয়োগ প্রকল্পের মাধ্যমে শুখা মরশুমে তিস্তা অববাহিকা অঞ্চলে জলের প্রবাহ বাড়িয়ে উভয়দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি সম্ভব৷ সমস্যা হলো, দুটি দেশই নিজেদের জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে বিতর্কিত আন্তঃসীমান্ত নদীপ্রবাহ ইস্যুটি বিচার করছে৷ স্ট্র্যাটিজিক ফোরসাইট গ্রুপ নামে একটি সংস্থা মনে করে, তিস্তা চুক্তি কার্যকর হলে বর্ষার সময় জল ধরে রেখে শুখা মরশুমে তা কাজে লাগানো যায়৷ শুখা-প্রতিরোধক ফসল চাষের মাধ্যমে উত্তরবঙ্গ এবং উত্তর-পূর্ব বাংলাদেশি জেলাগুলিতে আর্থিক রূপান্তর আনা যেতে পারে৷ ভারত-বাংলাদেশের নদী কমিশনের এক্ষেত্রে আরো সক্রিয় হওয়া জরুরি৷ বিশেষজ্ঞ মহলের অন্যান্য সুপারিশ হলো, জল-কূটনীতি সমাধানের একমাত্র পথ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতামূলক একটা কাঠামো৷ দ্বিপাক্ষিক স্তরে নিষ্পত্তি যদি না হয়, তাহোলে তা বহুপাক্ষিক স্তরে নিয়ে যেতে হবে৷ নিতে হবে এক সুসংহত নদী অববাহিকা নির্দেশিকা৷ উজানের দিকে ভারতের ভৌগলিক অবস্থানের জন্য বেশি দায়িত্ব নিতে হবে ভারতকে৷

Staudamm Fluß Teesta Indien
জলপাইগুঁড়ির কাছে তিস্তা নদীতে বাঁধছবি: DW/A. Chatterjee

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হিমালয় পর্বতমালার গড় তাপমাত্রা বাড়ছে৷ বর্ষা আসছে দেরিতে৷ ধানচাষের ক্ষতি হচ্ছে৷ নদীর অববাহিকা ক্রমশ যাচ্ছে শুকিয়ে৷ নীচে নেমে যাচ্ছে ভূগর্ভস্থ জলস্তর৷

Fluss Teesta
ছবি: DW/A. Chatterjee

হিমালয়ের সাড়ে সাত হাজার ফুট উচুঁতে অবস্থিত হিমবাহ থেকে উৎসারিত ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তা নদী সিকিম হোয়ে পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হোয়ে গেছে বাংলাদেশে৷ প্রবাহপথে তিস্তার সঙ্গে মিশেছে অনেক শাখানদী৷ পশ্চিমবঙ্গ-সিকিম সীমান্তে মিশেছে রংপো নদী৷ কালিম্পং-দার্জিলিঙ সীমায় রংগিত নদী৷ শিলিগুড়ির উত্তরে সেবকে তিস্তা গিয়ে পড়ে সমতলে৷ নদীর দু'পাশে পাহাড়ি ঢালে ঘন সবুজ বনরাজি৷ নদীপক্ষে রুপালি বালি৷ অতীতে তিস্তা নদীর তিনটি ধারা ছিল৷ করতোয়া, আত্রেয়ী ও পুনর্ভবা৷ এই তিন ধারার মিলিত নাম ত্রিস্রোতা৷ তারই অপভ্রংশ থেকে নাম হয় তিস্তা৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, তিস্তার ওপর জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণে ভূমিধস ও ভূমিকম্পের আশঙ্কা বেড়ে গেছে৷ বিঘ্নিত হয়েছে পরিবেশের ভারসাম্য৷ তার নেতিবাচক প্রভাব স্বচক্ষে দেখে এলাম৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য