1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নরওয়ে হত্যাকাণ্ড

২২ এপ্রিল ২০১২

গত বছর জুলাই মাসের ২২ তারিখে নরওয়ের রাজধানী অসলো এবং উটোয়া দ্বীপে হত্যাকাণ্ড ঘটান আন্ডার্স ব্রাইভিক৷ এ সপ্তাহে শুরু হয়েছে ৭৭ জনকে হত্যার বিচারকার্য৷ ৩৩ বছর বয়সি ব্রাইভিক জানিয়েছেন, সুযোগ পেলে একই ঘটনা তিনি আবারো ঘটাবেন৷

https://p.dw.com/p/14j55
ছবি: Reuters

গত বছরের জুলাই মাসে আন্ডার্স ব্রাইভিক ৭৭ জন নিরীহ মানুষের জীবন কেড়ে নেন৷ ব্রাইভিক'কে আটক করা হয় সঙ্গে সঙ্গে, সেই দিনই৷ এ সপ্তাহে শুরু হয়েছে ব্রাইভিক'এর বিচার৷ আদালতে হাজির করা হচ্ছে প্রতিদিনই৷ তাকে পড়ে শোনানো হয়েছে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ৷ হত্যাকাণ্ডের পুরো কাহিনী তাকে শোনানো হয়েছে, দেখানো হয়েছে বেশ কিছু ভিডিও চিত্র৷ ব্রাইভিক সব শান্তভাবে দেখেছেন এবং জানিয়েছেন যে সেই হত্যাকাণ্ডের জন্য তিনি মোটেই দুঃখিত নন৷ প্রয়োজনে তিনি আবারো তা করবেন৷ তিনি বার বার আদালতে বলতে থাকেন যে তিনি নির্দোষ৷ তিনি কোনো অপরাধ করেননি৷ তিনি জানিয়েছেন যে, ২০০৬ সাল থেকে তিনি এ ধরণের ঘটনার পরিকল্পনা করেছেন৷

সরকারি দপ্তর এবং উটোয়া দ্বীপের পর তার লক্ষ্য ছিল লেবার পার্টির অফিস এবং নরওয়ের রাজ প্রাসাদ৷ আদালতে এই কথাগুলো ব্রাইভিক স্বীকার করেছেন৷ যদি তিনি ধরা না পড়তেন তাহলে এই বোমা বিস্ফোরণগুলো তিনি ঘটাতেন৷

আদালতে সরাসরি এবং খোলাখুলিভাবে এসব স্বীকারোক্তি প্রসঙ্গে ব্রাইভিক'এর আইনজীবি গের লিপেসটাড জানান, ‘‘ব্রাইভিক'এর অধিকার আছে নিজের মত প্রকাশের৷ সব কিছু জানানোর৷ নরওয়ের আইন ব্যবস্থাও তা সমর্থন করে, সেই অধিকার সবাইকে দেয়া হয়েছে৷ এটা মানবাধিকারেরই একটি অংশ৷''

Norwegen Utøya Terror Angehörige der Opfer auf Utöya
নরওয়ের উটোয়া দ্বীপে হত্যাকাণ্ড চালান ব্রাইভিকছবি: dapd

প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন এই ধরণের মনোভাব? ব্রাইভিক মুসলিম বিরোধী – তা তিনি বেশ স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন৷ নরওয়ের সমাজে ইদানিং ‘মাল্টি কালচারাল' বা বিভিন্ন গোত্রের মানুষের বসবাস দেখা যাচ্ছে এবং ক্রমশই তা বাড়ছে৷ তা নরওয়ের জন্য কখনোই সুখকর হতে পারে না৷ এসব বন্ধ করতেই ব্রাইভিক হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে জানিয়েছেন৷ তার ভাষ্য মতে যে সব তরুণ-তরুণীদের তিনি হত্যা করেছেন, তারা এসবের বিরোধীতা করছিল না৷ তারা অভিবাসীদের, মুসলমানদের সমাজে গ্রহণ করেছিল, মেনে নিয়েছিল৷ ব্রাইভিক দেশ রক্ষায় মহৎ কাজে নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন৷ এবং সেই মহৎ কাজ হল ৭৭ জন মানুষকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করা৷

উটোয়া দ্বীপে গত বছরের জুলাই মাসে চলছিল একটি সামার ক্যাম্প৷ সেখানে উপস্থিত ছিল কয়েকশ তরুণ-তরুণী৷ তাদের মধ্যে ৬৯ জন মারা যায়৷ অর্থাৎ বাকিরা বেঁচে যায় প্রাণে৷ তাদের মধ্যেই একজন বিয়র্ন মাগনুস জ্যাকবসেন ইলার৷ সে উপস্থিত ছিল আদালত প্রাঙ্গনে৷ তার কথায়, ‘‘উটোয়া দ্বীপে ব্রাইভিক'কে আমরা যেরকম দেখেছিলাম সেই তুলনায় এই ব্রাইভিক অনেক শান্ত৷ সে চাইলেও আর কারো জীবন কেড়ে নিতে পারবে না৷ এটা নিঃসন্দেহে অনেক স্বস্তির৷''

ব্রাইভিক'এর বিচারকার্যে বার বার তাকে প্রশ্ন করা হচ্ছিল সে একা কাজ করেছে কিনা, তার সঙ্গে কেউ জড়িত ছিল কিনা৷ ব্রাইভিক এর আগে জানিয়েছে সে ‘নাইটস টেম্পলার' গোষ্ঠির সদস্য৷ তবে অনেক অনুসন্ধান করেও এই গোষ্ঠি আসলেই বাস্তবে রয়েছে কিনা তার কোনো হদিস পাওয়া যায় নি৷

বিচারকার্য চলার সময় একজন বিচারক তার নিজস্ব ওয়েবসাইটে জানান যে ব্রাইভিক'এর মৃত্যুদণ্ড হওয়া উচিত৷ এ খবর প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাকে বিচারকার্য থেকে সরিয়ে ফেলা হয়৷ বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে আদালত৷ রাষ্ট্র পক্ষের কৌশুলি সিয়াক হাহাইম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমাদের দেশের আইন ব্যবস্থায় অনেক ধরণের কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে৷ যেমন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড৷ অপরাধী কোনোদিনই কারাগার থেকে মুক্ত হবে না৷ মৃত্যুদণ্ড নিয়ে আরেকটি বিতর্কের কোন প্রয়োজন রয়েছে বলে আমি মনে করি না৷ নরওয়েসহ ইউরোপের কোনো দেশেই মৃত্যুদণ্ডের বিধান নেই৷''

তবে আদালতের কৌসুলীরা এখন একটি বিষয় প্রমাণ করতে ব্যস্ত আর তা হল ব্রাইভিক মানসিক ভারসাম্যহীন কিনা৷ যদি তা হয়ে থাকে তাহলে তাকে বাকি জীবন একটি মানসিক হাসপাতালে কাটাতে হবে৷ তবে নিজের স্বীকারোক্তিতে ব্রাইভিক জানিয়েছেন যে, তিনি কম্পিউটার গেইম ‘মডার্ন ওয়ারফেয়ার' এবং ‘ওয়ার্ল্ড অফ ওয়ারক্র্যাফ্ট' নিয়মিত খেলতেন৷ রাইফেল চালাতে এবং গুলি করতে কেমন লাগে সে বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়ার জন্য তিনি এ ধরণের খেলা বেছে নিয়েছিলেন৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার, (এএফপি, রয়টার্স)

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য