1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ

রেশমী নন্দী
৩০ অক্টোবর ২০১৭

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও এর মোকাবেলা নিয়ে কথাবার্তায়, বিশেষ করে নানা সময়ে নেয়া নানা পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনায় ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন শব্দ৷ সেগুলোর প্রায়োগিক অর্থ জানা থাকলে আলোচনার প্রকৃতি বুঝতে সুবিধা হয়৷ তেমন কিছু শব্দ...

https://p.dw.com/p/2mfBn
Deutschland Dampf und Abgase  der Chemiefirma Oxea
ছবি: Getty Images/L. Schulze

মাইগ্রেশন: এমন কোনো পদক্ষেপ, যার ফলে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানো বা রোধ করা যায়৷ যেমন বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ কমাতে গাছ লাগানো, নবায়নযোগ্য শক্তি, যেমন সৌর বা বায়ু বিদ্যুতের নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন বা উৎকর্ষ সাধন, পুরোনো যন্ত্রপাতিকে আরো উন্নত করা, যাতে তা ব্যবহারে কম শক্তির প্রয়োজন হয়৷

অ্যাডাপটেশন:  জলবায়ুর পরিবর্তন ও এর প্রকৃত বা সম্ভাব্য প্রভাবের সাথে প্রাকৃতিক বা মানুষের জীবনাচরণ পরির্তনের মাধ্যমে খাপ খাইয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া যাতে ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায় বা সম্ভাবনার যথার্থ ব্যবহার করা যায়৷ 

ক্লাইমেট টেকনোলজি অ্যান্ড নেটওয়ার্ক (সিটিসিএন): এ নেটওয়ার্ক উন্নয়নশীল দেশগুলির অনুরোধে ব্যবহৃত প্রযুক্তিকে কম কার্বন নিঃসরণ এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপক উপযোগী করে উন্নয়নের উদ্যোগ নেয়৷ প্রযুক্তিগত সমাধান, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও নীতি-নির্ধারনী পর্যায়ে পরামর্শ, আইন এবং নিয়ন্ত্রক কাঠামো তৈরি এ নেটওয়ার্কের উদ্যেশ্য৷

গ্রিনহাউস গ্যাস: কার্বন-ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস-অক্সাইড, পানির বাষ্প ইত্যাদির সমন্বয়ে সৃষ্টি হওয়া এক ধরনের রাসায়নিক যৌগ, যা সূর্যের আলো বেশি শোষণ করে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়িয়ে তোলে৷ যত বেশি গ্রিন হাউস গ্যাস তৈরি হয়, তত বেশি তাপমাত্রা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ভিতরে আটকে থাকে এবং পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমাগত বাড়তে থাকে৷

ফসিল ফুয়েল: জীবাষ্ম জ্বালানি হলো, শক্তির এমন উৎস, যা শত শহস্র বছর ধরে জীবন্ত প্রাণির অবশিষ্টাংশ মাটির নীচে চাপা পড়ে থাকতে থাকতে তৈরি হয়৷ শক্তির এ উৎস নবায়নযোগ্য নয়৷ কয়লা বা তেলের মতো মাটির নীচ থেকে পাওয়া শক্তির উৎসের ব্যবহার পৃথিবীতে গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরণের অন্যতম কারণ৷ সময়ের সাথে সাথে যতই জ্বালানির প্রয়োজন বাড়ছে, ততই বেশি পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে এ জীবাষ্ম জ্বালানি এবং সেই সাথে বাড়ছে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ৷ ফলশ্রুতিতে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে পৃথিবীর উত্তাপ৷

গ্লোবাল অ্যাভারেজ টেম্পারেচার: পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ঠিক করা হয় ভূমি ও সমু্দ্রপৃষ্ঠের উপরে দীর্ঘ সময় ধরে নেয়া তাপমাত্রার গড় করে৷ এ মেয়াদ হতে পারে ৩০ বছর পর্যন্ত৷ এত বেশি সময়ের গড় করার কারন হলো, তাপমাত্রার পরিবর্তন নির্ভর করে মহাসাগরের গতিপ্রকৃতি, পরিবর্তনশীল মেঘমালা, আগ্নেয়গিরির সক্রিয়তা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক চক্রের উপর৷ বিজ্ঞানীরা এসব দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তনের উপর নির্ভর করে আবহাওয়ার গড় নির্ণয় করে থাকে৷

ইন্টেনডেড ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (আইএনডিসি): ২০১৭ সালের জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি হিসেবে প্রস্তাবিত জলবায়ু চুক্তির আওতায় দেশগুলো ২০২০ সালে কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে, তা নির্ধারণ করে থাকে৷ আইএনডিসি হিসেবে পরিচিত এ পরিকল্পনার একটা বড় অংশ থাকে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ব্যবহার করে কার্বন-ডাই অক্সাইডের নিঃসরণ কমানো৷

ইন্টারগভার্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি): ১৯৮৮ সালে জাতিসংঘের দু'টি সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত হয়৷ এ প্যানেল মূলত বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের উপর গবেষণা করে থাকে৷ এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের বর্তমান অবস্থা জনগণের কাছে তুলে ধরাই এ প্যানেলের উদ্দেশ্য৷

পার্টস পার মিলিয়ন (পিপিএম): একটি নির্দিষ্ট নমুনার উপর কোনো বিশেষ উপাদানের ঘণত্বের পরিমাণ৷ জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বাতাসে দূষনের পরিমান, যেমন কার্বন ডাই অক্সাইড বা মিথেন ইত্যাদির পরিমাণ বের করতে এ টার্মটি ব্যবহার করে থাকেন৷ যেমন, বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের নিরাপদ মাত্রা ৩৫০ পিপিএম হলেও বর্তমানে তা প্রায় ৪০০ পিপিএম৷ প্রতি বছর আনুমানিক ২ পিপিএম করে এ পরিমাণ বাড়ছে৷

প্রি-ইন্ডাস্ট্রিয়াল লেভেল অফ কার্বন-ডাই অক্সাইড: শিল্পবিপ্লবের আগে বাতাসে কী পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড ছিল তা জানাতে এ টার্মটি ব্যবহার করা হয়৷ সেসময় এর পরিমাণ ছিল ২৮০ পিপিএম৷

কিয়োটো প্রটোকল: একটি বহুরাষ্ট্রীয় আন্তর্জাতিক চুক্তি৷ এ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রগুলিকে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে দায়বদ্ধ করা হয়৷ ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের জাপানের কিয়োটো শহরে এই চুক্তি প্রথম গৃহীত হয়৷ উন্নত দেশগুলিকে মূলত গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের জন্য দায়ী বলে চিহ্নিত করে এই চুক্তি উন্নত দেশগুলিকে এর পরিমাণ কমিয়ে আনতে বলে৷ এর ফলে ২০০৮ থেকে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে ৩৭টি শিল্পোন্নত দেশের নিঃসরণের পরিমাণ বেঁধে দেওয়া হয়৷ ওই চুক্তিতে ১২৯টি দেশ সমর্থন দিয়েছিল৷ তবে পরবর্তীতে চুক্তি থেকে ২০১২ সালে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয় ক্যানাডা৷

দ্য প্যারিস অ্যাগ্রিমেন্ট বা প্যারিস চুক্তি: ২০১৫ সালের ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে জলবায়ু সম্মেলনে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে কার্বন নির্গমন কমানো ও পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হয়৷ ২০১৬ সালের এপ্রিলে জাতিসংঘ সদর দফতরের জেনারেল অ্যাসেম্বলি হলে ‘প্যারিস চুক্তি' স্বাক্ষরিত হয়৷ এতে ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে৷ আর ২০২০ সালের মধ্যে চুক্তিতে অনুমোদন দেওয়া দেশগুলোকে কার্বন নির্গমন নির্দিষ্ট সীমায় নামাতে হবে৷ এই চুক্তির ভিত্তিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অর্থ ও প্রযুক্তি দিয়ে সাহায্য করবে ধনী দেশগুলো৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷