1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এক ঘরের বহু রূপ

২১ অক্টোবর ২০১৮

এক সময় অবকাশ যাপনে স্বপ্নের জায়গা ছিল সমুদ্র তীরবর্তী কাস্তেল ভোলতুরনো, যা এখন ইটালিয়ান মধ্যবিত্তদের জন্য দুঃস্বপ্নের মতো৷ এখানে অভিবাসীদের ঠান্ডা বিয়ার ও ঝটপট যৌনতার চাহিদা পূরণে দ্বার খুলে রাখেন নাইজেরিয়ান নারীরা৷

https://p.dw.com/p/36q3z
Italien Castel Volturno, die Migrationskippe
ছবি: DW/V. Muscella

‘কানেকশন হাউজেস' নামে পরিচিত সৈকতের এসব ঘর এখন একই সঙ্গে বেডরুম, বার ও ব্রোথেল হিসেবে ব্যবহার করছেন অভিবাসী জনগোষ্ঠী, যাঁদের যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই৷ ক্রমশ এসব মানুষের সংখ্যা বাড়ছে৷ দারিদ্র্য ও যুদ্ধ থেকে বাঁচতে অজানার উদ্দেশে পাড়ি দিয়ে চলে যাচ্ছে সমাজ-রাষ্ট্রের দৃষ্টির অগোচরে৷

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার তথ্য মতে, এ বছরের প্রথমার্ধে ইউরোপের ঊপকূলে পৌঁছেছে ৫৫ হাজার অভিবাসী, যাঁদের অনেকেই  কোনো কাগজপত্র ছাড়াই এসেছেন একটি আশ্রয় বা চাকরির সন্ধানে৷

‘‘আমাদের অন্যান্য মেয়েরা যা করে, আমিও তাই করি,'' বলেন গ্রেস নামের ২৬ বছরের নাইজেরিয়ান তরুণী, যিনি তার আসল নাম বলতে চাননি৷

যে ঘরে যৌনতা বিক্রি করে চলে তাঁর জীবন, তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমার এটা ভালো লাগে না৷ কিন্তু কী করব, আমার আর কোনো উপায় নেই৷ অন্য কোনো কাজ নেই এবং আমার কথা শোনার বা আমাকে সহযোগিতা করার কেউ নেই৷''

নেপলসের ৪৮ কিলোমিটার উত্তরের সমুদ্র পাড়ের বিস্তৃত জরাজীর্ণ এই বসতির শুরু হয়েছিল রোমান সাম্রাজ্যের আগে৷ ১৯৭০ এর দশকেও নেপলসের বাসিন্দাদের কাছে গ্রীষ্মকালীন অবকাশের জন্য জনপ্রিয় ছিল এটা৷

১৯৮০ সালে ভূমিকম্পে আড়াই লাখ মানুষ বাস্তু্চ্যুত হওয়ার পর এর ভাগ্য বদলে যায়৷ সে সময় বাস্তুচ্যুতদের সেখানে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে সরকার৷

এরপর পর্যটকদের যাতায়াত কমে এলে অর্থনীতিতে ধসের সঙ্গে সঙ্গে আকর্ষণীয় সব ভবন ও অ্যাপার্টমেন্ট ভবনগুলোও শ্রী হারাতে শুরু করে, যা এখন শিবির হয়ে উঠেছে আফ্রিকান অভিবাসীদের৷

সত্তরের দশকে ২৭ কিলোমিটার সৈকতজুড়ে কীভাবে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করা হয়েছিল, তা বোঝাতে স্থানীয় মেয়র দিমিত্রি রুশো বলেন, ‘‘এখানে প্রায় ৩০ হাজার ঘর অবৈধভাবে তৈরি করা হয়েছে এবং সেগুলো এখন পরিত্যক্ত৷''

তিনি বলেন, অনেক ঘরই ভবন নির্মাণের মৌলিক বিষয়গুলো মেনে করা হয়নি৷ পয়ঃনিষ্কাশনের মতো জরুরি বিষয়গুলোও সেখানে রাখা হয়নি৷ ঘরগুলো মানুষের বসবাসের উপযোগী নয়৷

এগুলো কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি নতুন বাসিন্দাদের জন্য, যাঁরা আফ্রিকার দুর্বিষহ জীবন থেকে পালিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন ইউরোপে৷

Prostituierte in Castel Volturno, Italien
ভোলতুরনোতে নাইজেরীয় যৌনকর্মীরা রাস্তার পাশে অপেক্ষায়ছবি: picture alliance/AP/A. Tarantino

ঘরই পতিতালয়

অন্ধকারে অমসৃন সড়কে, যেটা শহরের প্রধান আন্তোনিও গ্রামসি স্ট্রিটের উপর দিয়ে গেছে, হালকা আলো পড়ছিল একটি ঘরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ধূমপান করতে থাকা এক নারীর ওপর৷ সবুজ পোশাকের ওই নারী আগন্তুক সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছিলেন৷ তিনিই এখানকার মালিক৷

ভেতরে খালি বোতল ছড়িয়ে থাকা একটি টেবিল ঘিরে বসেছিলেন ছয়জন আফ্রিকান৷ এক ব্যক্তি শালীনতার সঙ্গে এক নাজেরিয়ান তরুণীর চুলের ঝুঁটি করে দিচ্ছিলেন ফিলামেন্ট দিয়ে৷ ডাইনিং কক্ষের পাশে একটি খালি বিছানায় বড় আকারের একটি খেলনা পড়ে থাকতে দেখা যায়৷

এসব ব্যক্তিদের কেউ কেউ এসেছিলেন মদ্যপান ও আড্ডায় সময় কাটাতে৷ অন্যরা আসেন ১৫-২০ ইউরো দিয়ে গ্রেসের মতো মেয়েদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে৷

চুল বাঁধা হয়ে গেলে গ্রেস গিয়ে বসেন টেলিভিশনের সামনে৷ সেখানে সাধারণত নাইজেরিয়ান সিরিয়াল চলে৷ 

ইউরোপে তাঁর এই জীবন হওয়ার কথা ছিল না৷ নাইজেরিয়ার তেল সমৃদ্ধ অঞ্চল থেকে তিনি ইতালিতে আসেন এক বছর আগে, উন্নত শিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে৷

তুরিনে একটি অভিবাসী আশ্রয় কেন্দ্রে থাকার পর তার ঠাঁই হয় রোমের আরেকটি কেন্দ্রে৷ এরমধ্যে নিজের পরিচয়পত্র হারিয়ে ফেলেন তিনি৷ অন্য অনেক কাগজপত্র ও চাকরিহীন অভিবাসীর মতো গ্রেসের ঠিকানা হয় কাস্তেল ভোলতুরনো৷

এই অঞ্চলে মানবপাচার বন্ধে কর্মরত নেপলসভিত্তিক অলাভজনক প্রতিষ্ঠান দেদালুসের কর্মী আন্দ্রে মোরনিরোলি বলেন, ‘‘সবগুলো মেয়েই অপরাধী সংগঠনের কাছে ঋণী৷ তারাই তাঁদের এখানে এনেছে৷''

‘কানেকশন হাউজ' নামে পরিচিত হয়ে ওঠা এসব পতিতালয়ের কারণে তাঁদের কাজ কঠিন হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন তিনি৷

মোরনিরোলি বলেন, ‘‘নাইজেরিয়ান পতিতাবৃত্তি সব ঘরের ভেতরে, কারণ, রাস্তা তাঁদের জন্য বিপজ্জনক৷মেয়েগুলোর সন্ধান পাওয়া হয়ে উঠেছে দুরূহ৷''

২০১৬ সালে ইটালির ঊপকূলে আসে ১১ হাজার নাইজেরীয় নারী৷ তবে ২০১৭ সালে এদের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে৷ তাঁদের ১০ জনের মধ্যে আটজনই পতিতাবৃত্তির জন্য মানবপাচারের শিকার বলে মনে করে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা৷

এএইচ/এসিবি (থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য