1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বুখেনভাল্ড কনসেনট্রেশন ক্যাম্প

১৩ জুলাই ২০১২

হিটলারের নাৎসি আমলের ‘বুখেনভাল্ড’ কনসেনট্রেশন ক্যাম্প’এর ৭৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে৷ ইতিহাসের সেই কালো অধ্যায় সম্পর্কে শিক্ষা পেতে আজও সেখানে মানুষের ঢল নামে৷

https://p.dw.com/p/15Wz1
ছবি: Gedenkstätte Buchenwald

ইতিহাসের শিক্ষা

যে কোনো দেশের ইতিহাসের কোনো ‘কালো অধ্যায়' থেকে কী শিক্ষা নেওয়া উচিত? উত্তরটা সহজ৷ অবশ্যই সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়৷ যারা সেই কালো অধ্যায়ের সাক্ষী নয়, ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে সরাসরি তার বর্ণনা শুনে নিতে পারে৷ বিশেষ করে স্কুল পড়ুয়া শিশু-কিশোরদেরও বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন করে তোলা যেতে পারে৷ কিন্তু ভুক্তভোগী বা যারা ঘটনার শিকার হয়েছেন, একে একে তাদের মৃত্যুর পর কী করা উচিত? পরবর্তী প্রজন্মগুলির জন্য কীভাবে সেই কালো অধ্যায়ের শিক্ষা বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব?

হিটলার জমানার কলঙ্কময় ইতিহাস

হিটলারের জমানার কালো অধ্যায় নিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী জার্মানিতেও এমনই তর্ক-বিতর্ক চলে আসছে৷ যুদ্ধক্ষেত্র নয়, হিটলারের ইহুদি নিধন যজ্ঞের আওতায় প্রায় ৬০ লক্ষ মানুষকে ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছিল৷ রীতিমতো মানুষ মারার কারখানা তৈরি করে গ্যাস চেম্বারে হত্যা করা হয়েছে পুরুষ-নারী, শিশু-কিশোর-বৃদ্ধদের৷ সেই সব কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প এমন ভয়ঙ্কর হত্যাযজ্ঞের সাক্ষী৷ মানবজাতির ইতিহাসে এই মাত্রার গণহত্যার কোনো দৃষ্টান্ত নেই৷ আজকের দিনেও সেই ইহুদি নিধন যজ্ঞের ভয়াবহতার সামান্য আঁচ পেতে হলে যেতে হবে সেই সব কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে৷

গ্যোটে'র শহরের কাছে হত্যা শিবির

জার্মানির পূর্বাংশে লেখক-সাহিত্যিক, শিল্পী-সংগীতকারদের শহর ভাইমার৷ মহাকবি গ্যোটে'র শহর৷ শহরের উপকণ্ঠে বুখেনভাল্ড অরণ্য৷ সেই মনোরম পরিবেশেই ১৯৩৭ সালে নাৎসিরা গড়ে তুলেছিল মানুষ হত্যার এক কারখানা৷ অবসর সময় বা ছুটি কাটানোর সেই সুন্দর এলাকার মাঝে এমন এক কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প'এর অস্তিত্ব কল্পনা করাই কঠিন৷ নাৎসিরা এর অস্তিত্ব গোপন করার চেষ্টাও করে নি৷ ভাইমার থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই ক্যাম্প চারিদিক থেকে স্পষ্ট দেখাও যেত৷

শুধু তাই নয়, মৃত্যুর আগে ক্যাম্পের বন্দিদের দিয়ে জোর করে কাজও করিয়ে নেওয়া হতো৷ স্থানীয় বিভিন্ন কোম্পানি বিনামূল্যে এই শ্রমের ফায়দাও তুলেছে৷ ১৯৩৭ সাল থেকে ইউরোপের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষদের ধরে এই ক্যাম্পে নিয়ে আসা হত৷ ভাইমার থেকে পায়ে হেঁটে তাদের বুখেনভাল্ড'এ যেতে হতো৷ পরে একটি রেল লাইন পাতা হয়৷ বন্দিদের দিয়েই সেই হাড়ভাঙা কাজ করানো হয়েছিল৷ আজও সেই পথকে ‘ব্লুটস্ট্রাসে' বা ‘রক্তিম সড়ক' বলা হয়৷

Bildergalerie KZ Buchenwald
মানবজাতির ইতিহাসে এই মাত্রার গণহত্যার কোনো দৃষ্টান্ত নেইছবি: Gedenkstätte Buchenwald

অতীতের জগত

আজও অসংখ্য মানুষ বুখেনভাল্ড কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প দেখতে আসেন৷ আজও সেখানে দাঁড়িয়ে হিটলারের নাৎসি শাসনযন্ত্রের ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের নিপুণ ব্যবস্থাপনার পরিচয় পাওয়া যায়৷ হিসেব মিলিয়ে নিতে বন্দিদের সকালে ও সন্ধ্যায় এক বিশাল চত্বরে সমবেত হতে হতো৷ ছিল একসারি অন্ধকার ও বদ্ধ ঘর, যেখানে বাতাসও প্রবেশ করতে পারতো না৷ সেখানে হিটলারের কুখ্যাত এসএস বাহিনী বন্দিদের উপর অত্যাচার চালাতো বা তাদের হত্যা করতো৷ আজও সেখানে প্রবেশ করলে শিউরে উঠতে হয়৷

পরবর্তী প্রজন্মের শিক্ষা

পরবর্তী প্রজন্ম এই ভয়াবহ হত্যার কারখানা থেকে কী শিক্ষা নিচ্ছে? প্রতিদিন স্কুল-পড়ুয়াদের প্রায় ২০টি দল বুখেনভাল্ড কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প'এ আসে৷ আশার কথা, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আগ্রহ কমার বদলে বেড়ে চলেছে৷ সব মিলিয়ে দর্শনার্থীর সংখ্যাও বাড়তির দিকে৷ যুদ্ধের পর তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এখানে দাঁড়িয়ে নানা প্রশ্ন তুলছে, ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করছে৷ সেই সব প্রশ্নের জবাব দিতে ও উপযুক্ত শিক্ষা দিতে রয়েছে এক কেন্দ্র, যার দায়িত্ব বুখেনভাল্ড'এর স্মৃতি জিইয়ে রাখা৷

তবে সহানুভূতি আরও জোরালো করতে কোনো বিশেষ ‘স্পেশাল এফেক্ট'এর ব্যবস্থা নেই সেখানে৷ নেই কোনো ভয়ঙ্কর ছবি৷ নিজস্ব অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই ক্যাম্পের ভয়াবহতা টের পাওয়া সম্ভব বলে কেন্দ্রের কর্মকর্তারা মনে করেন৷ ছোট বই বা কাগজে রয়েছে লিখিত তথ্য৷ আয়োজন করা হয় কর্মশালা৷

তবে কেন্দ্রের প্রধান ফল্কহার্ড ক্নিগে স্পষ্ট করে দিলেন, যে কাউকে দোষারোপ বা নৈতিকতা সম্পর্কে জ্ঞান বিতরণ করা এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য নয়৷ তিনি বললেন, ‘‘আমরা বর্তমান যুগে দাঁড়িয়ে অতীতের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করার চেষ্টা করি৷ মানবাধিকার লঙ্ঘন, জাতি-ধর্ম-বর্ণ বা অন্য কোনো পরিচয়ের ভিত্তিতে একদল মানুষকে একঘরে করা, চরম দক্ষিণপন্থী মনোভাব, উগ্র জাতীয়তাবাদ আজও মুছে যায় নি৷ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে আমরা তা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করি৷ ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক ও নৈতিক শিক্ষার ক্ষেত্রে এটাই আজকের মূল চ্যালেঞ্জ৷''

স্কুল পড়ুয়াদের অভিজ্ঞতা

বুখেনভাল্ড কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে স্কুল পড়ুয়াদের নির্দিষ্ট কাজ দেন শিক্ষকেরা৷ সার্বিক ইতিহাসের পাশাপাশি সেখানে নিহত মানুষদের পরিচয় জানার চেষ্টা করতে হয় তাদের৷ যেমন বন্দিদের মধ্যে কাকে কোথা থেকে সেখানে নিয়ে আসা হয়েছিল৷ মানুষ পোড়ানোর চেম্বারে ঢুকলে সবার কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে যায়৷ দর্শণার্থীদের মধ্যে অনেকের পূর্বপুরুষ হয়তো নিহতদের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে যুক্ত, অথবা পরিত্রাতা হিসেবে শিবির থেকে বন্দিদের উদ্ধার করেছিলেন৷ তবে সবাই এই জায়গার মর্ম বুঝতে পারে, তা নয়৷ যেমন দর্শনার্থীদের খাতায় কেউ লিখেছে, ‘‘এখানে এসে বেশ আনন্দ হলো, ধন্যবাদ হিটলার৷''

প্রতিবেদন: কর্নেলিয়া রাবিৎস / এসবি

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য