1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিয়ের অনুষ্ঠান: ঝোঁক বাড়ছে জাঁকজমকে

তায়েব মিল্লাত হোসেন ঢাকা
২৭ অক্টোবর ২০২৩

বাঙালি জীবনে বিয়ে শুধু দুজন মানুষের বন্ধনের উপলক্ষ্য নয়, সামাজিক একটি উৎসবও৷ কোনো কোনো আয়োজনের মাত্রা এতোই বেশি থাকে যে, সেই বিয়ের খবর ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে৷

https://p.dw.com/p/4Y67H
Heirat von Elita Karim (Sängerin und Journalistin aus Bangladesh)
ছবি: Privat

সামাজিক উৎসব বিয়ে এখন কনটেন্টের উৎসে পরিণত হয়েছে৷ বিভিন্ন ধাপে, রকমারি আয়োজনে অবস্থাপন্নরা বিয়ের কাজটি সারছেন৷ তবে নিজেরা ঝামেলামুক্ত থাকতে অনুষ্ঠান করার দায়-দায়িত্ব তুলে দিচ্ছেন অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের হাতে৷ যারা ‘ওয়েডিং প্ল্যানার' হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে৷ বিয়ের অনুষ্ঠানের স্থান, খাবারদার, বর-কনের সাজপোশাক, মঞ্চ, যানবাহন, নিমন্ত্রণপত্র, ছবি, ভিডিও- সব কাজের দায়িত্ব নিয়ে নেয় বিয়ে ব্যবস্থাপনার প্রতিষ্ঠানগুলো৷ অনলাইন-অফলাইন মিলিয়ে দেশে এমন প্রতিষ্ঠান শতাধিক বলে জানা গেছে৷

যাদের আর্থিক সক্ষমতা বেশি তারাই বিয়ের আয়োজন সম্পন্ন করতে এসব প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয় বলে জানালেন রন্ধনবিদ ও রূপ বিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা রীতা৷ ডয়চে ভেলে বাংলাকে তিনি বলছেন, এখন একটি বিয়ে কেন্দ্র করে সাত-আটটি অনুষ্ঠান হয়৷ বিয়ের মূল অনুষ্ঠান, বউভাত, গায়ে হলুদের পাশাপাশি ব্রাইডাল শাওয়ার, ব্যাচেলর নাইট- নানা কিছু যুক্ত হয়েছে৷ এসব অনুষ্ঠান কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে বরকনে ও তাদের পরিবারের সঙ্গে আলাপ করে চূড়ান্ত পরিকল্পনা সাজায় অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান৷

বিয়েতে জাঁকজমকের চেয়ে বর-কনের প্রি-ব্রাইডাল কাউন্সেলিং বেশি দরকার: রাহিমা সুলতানা রীতা

বিয়ে-কেন্দ্রিক অনুষ্ঠানের জাঁকজমক বৃদ্ধির বিষয়টি তুলে ধরে রাহিমা সুলতানা রীতা বললেন, ‘এমন অনুষ্ঠানেও গিয়েছি, যেখানে ডেকোরেশনেই ২-৩ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে৷' বিয়ের বিশাল আয়োজনের অনেক ক্ষেত্রেই ‘শো-অফ' বা ‘লোক-দেখানোর' প্রবণতা থাকে বলে তিনি মনে করেন৷

অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিয়ে কী ও কেন- এসব বিষয়ে বর-কনেকে বুঝানোর পরামর্শ দিলেন প্রি-ব্রাইডাল কাউন্সিলর রাহিমা সুলতানা রীতা৷ তার মতে, বিয়ে সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকায় আজকাল বিচ্ছেদের সংখ্যাও বাড়ছে৷

উৎসবে বদলের হাওয়া

বিয়ের অনুষ্ঠান সামনে রেখে তৈরি সরকারি, বেসরকারি ‘কমিউনিটি সেন্টার' শহর থেকে গ্রাম অবধি ছড়িয়ে পড়ছে৷ এর আগে মফস্বলে বাড়ির উঠানে বিয়ের অনুষ্ঠানের প্যান্ডেল সাজানো হতো৷ ঢাকা শহরে বাড়ির ছাদ বা আশপাশের খালি জায়গা বিয়ের অনুষ্ঠানস্থল হিসেবে নির্ধারণ করা হতো৷ তারও আগে পুরান ঢাকায় মুসলিম সম্প্রদায়ের বিয়ের আয়োজন মসজিদকেন্দ্রিক ছিলো বলে জানালেন ঢাকা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আজিম বখশ৷ ডয়চে ভেলে বাংলাকে তিনি জানালেন, আগে পাড়ার মসজিদে বর বসতেন৷ এখানেই বিয়ের ব্যবস্থা হতো৷ আর আশপাশের কোনো বাড়িতে খাওয়ার আয়োজন করা হতো৷ তারপর বরকে কনের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হতো৷ সেখানে কনেকে বরের হাতে তুলে দেওয়া হতো৷ এটাই ছিলো মেয়েকে বিদায়ের পর্ব৷ কমিউনিটি সেন্টার হওয়ার পর পর বিয়ের অনুষ্ঠানের পুরো আদল বদলে গেছে বলে তিনি মনে করেন৷

বিয়ের উৎসব কেন্দ্র করে সামাজিক বন্ধন এখন কমে গেছে: মোহাম্মদ আজিম বখশ

মোহাম্মদ আজিম বখশ বলছেন, বিয়ের অনুষ্ঠান আগে ছিলো দুই পক্ষের আত্মীয়দের মিলনমেলা৷ সেটা এখন আর নেই৷ মেয়েপক্ষের লোকজন আগেই খেয়েদেয়ে চলে যায়৷ বর আসে রাত ১০টায়৷ ফলে কারো সাথে কারো দেখা হয় না৷ বিয়ের উৎসব কেন্দ্র করে যে সামাজিক বন্ধন, সেটা এখন কমে গেছে- এই পর্যবেক্ষণ তার৷

এখন অবশ্য নিজ এলাকায় বা সমাজে বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়টিও কেউ কেউ মাথায় রাখছেন না৷ তারা ‘ডেস্টিনেশন ওয়েডিং' বা গন্তব্যে গিয়ে বিয়ে করার পথ বেছে নিচ্ছেন৷ যেখানে পরিবারের ঘনিষ্ঠজন, কিছু বন্ধু হয়তো নিমন্ত্রিত হিসেবে যোগ দিচ্ছেন৷ তবে এমন আয়োজনে ছবি তোলা পরিপূর্ণ গুরুত্বই পায়৷ কারণ দর্শনীয় স্থান বা প্রকৃতির মাঝে বিয়ে করার বিষয়টি স্মরণীয় করে রাখতে চান নব দম্পতিরা৷ ‘ওয়েডিং প্ল্যানার'রা নতুন এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নেও দিচ্ছে সেবা৷