বিশ্বকাপ ফুটবলে গোল্ডেন বুট জয়ীরা
বলাই বাহুল্য, ফুটবলে প্রতিপক্ষের জালে যাঁরা বল জড়ান, সাধারণভাবে দর্শকপ্রিয়তা তাঁদেরই সবচেয়ে বেশি৷ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ গোলদাতাকে গোল্ডেন শ্যু বা বুট পুরস্কার দেয়া হয়৷ চলুন এক ঝলক দেখি সব বিশ্বকাপ আসরের সেরা গোলদাতাদের৷
১৯৩০-১৯৭৮: কোনো আনুষ্ঠানিক পুরস্কার ছিল না
১৯৩০ থেকে ১৯৭৮ বিশ্বকাপ পর্যন্ত সর্বোচ্চ গোলদাতাদের জন্য কোনো পুরস্কার বরাদ্দ ছিল না৷ কিন্তু বিশ্বকাপের ইতিহাসের এক আসরে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড ওই সময়েরই৷ ফ্রান্সের জিস্ট ফুঁতেন ১৯৫৮ বিশ্বকাপে ১৩ গোল করেন৷ এই সময়ের এগারোটি আসরের সেরা গোলদাতাদের তালিকায় নাম আছে জার্মানির গ্যার্ড ম্যুলার, পর্তুগালের ইউসেবিও, ব্রাজিলের গারিঞ্চা, আর্জেন্টিনার মারিও কেম্পেসের মতো তারকাদের৷
১৯৮২: পাওলো রসি
হিসেবে ফুটবল বিশ্বাকাপের ইতিহাসে প্রথম গোল্ডেন শ্যু জেতা খেলোয়াড় হলেন ইটালির ফরোয়ার্ড পাওলো রসি৷ স্পেনে অনুষ্ঠিত এ আসরে ৬টি গোল করেন এই তারকা৷ ১৯৮২ থেকে ২০০৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত এই পুরস্কারকে গোল্ডেন শ্যু বলা হতো৷ ২০১০ থেকে এর নাম হয় গোল্ডেন বুট৷
১৯৮৬: গ্যারি লিনেকার
মেক্সিকো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মারাদোনার আর্জেন্টিনার কাছে হেরে কোয়ার্টার ফাইনালেই বিদায় নেয় গ্যারি লিনেকারের ইংল্যান্ড৷ মজার ব্যাপার হলো, ২-১ গোলের সেই ম্যাচে গোল তিনটি করেন এই দুই তারকাই৷ বিদায় নিলেও ততক্ষণে অবশ্য ছয় গোল দিয়ে দেয়া হয়ে গেছে লিনেকারের, যা ঐ আসরে আর কেউ টপকাতে পারেননি৷
১৯৯০: সালভাতোরে স্কিলাচি
এ বিশ্বকাপে স্বাগতিক ইটালি সেমিফাইনালে টাইব্রেকে ৪-৩ গোলে হেরে যায় আর্জেন্টিনার কাছে৷ তবে তৃতীয়স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারায় ২-১ গোলে৷ সে ম্যাচে একটি গোল করে পুরো আসরে সর্বোচ্চ ছয় গোল করেন তারকা ফুটবলার স্কিলাচি৷
১৯৯৪: ওলিয়েগ সালিয়েঙ্কো ও রিস্টো স্টয়েচকভ
বিশ্বকাপের এই আসরটি বসে যুক্তরাষ্ট্রে৷ গ্রুপ পর্বেই বিদায় নেয় রাশিয়া৷ গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচে তারা করে ৭ গোল, যার ছয়টিই আসে সালিয়েঙ্কোর পা থেকে৷ ক্যামেরুনের বিপক্ষে ৬-১ গোলের জয়ে ৫টিই করেন তিনি৷ অন্যদিকে, বুলগেরিয়া পৌঁছায় শেষ চার অবধি৷ সেমিফাইনালে ইটালির কাছে ও তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে সুইডেনের কাছে পরাজিত হয়৷ আসরে স্টয়েচকভও ৬ গোল করে সালিয়েঙ্কোর সঙ্গে জিতে নেন গোল্ডেন শ্যু৷
১৯৯৮: ডাভোর শুকার
সেমিফাইনালে শুকারের ক্রোয়েশিয়া স্বাগতিক ফ্রান্সের কাছে হারলেও তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে ডাচদের হারায়৷ পুরো আসরে শুধু আর্জেন্টিনার বিপক্ষে গ্রুপ ম্যাচে কোনো গোল পায়নি ক্রোয়েশিয়া৷ শুকারের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে৷ ৬টি গোল করে তিনি আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা হন৷
২০০২: রোনাল্ডো
এশিয়ায় এ পর্যন্ত একমাত্র বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর বসে ২০০২ সালে৷ দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান যৌথভাবে আয়োজক ছিল৷ রোনাল্ডো-রিভালডো-রোনালডিনিয়োদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে এ বিশ্বকাপ জিতে নেয় ব্রাজিল৷ পুরো আসরে মোট আটটি গোল করেন ব্রাজিলিয়ান তারকা রোনাল্ডো৷ ফাইনালে জার্মানির বিরুদ্ধে করা দু’টি গোলই আসে তাঁর পা থেকে৷
২০০৬: মিরোশ্লাফ ক্লোজে
জার্মানিতে অনুষ্ঠিত এই বিশ্বকাপে স্বাগতিকরা সেমিফাইনালে আসরের চ্যাম্পিয়ন ইটালির কাছে হেরে যায় ২-০ গোলে৷ তবে পর্তুগালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে তৃতীয় হয়৷ আসরে ৫ গোল করে গোল্ডেন শ্যু জিতে নেন জার্মান স্ট্রাইকার ক্লোজে৷
২০১০: টোমাস ম্যুলার
এই আসরে গোল্ডেন শ্যুয়ের নাম পরিবর্তন করে গোল্ডেন বুট করা হয়৷ জার্মান তারকা টোমাস ম্যুলার জেতেন সেই গোল্ডেন বুট৷ এই আসরেও তৃতীয় হয় জার্মানি৷ সেমিফাইনালে হারে আসরের চ্যাম্পিয়ন স্পেনের কাছে৷ আর তৃতীয় স্থান নির্ধারণীতে হারায় উরুগুয়েকে৷ ম্যুলার করেন ৫ গোল৷
২০১৪: হামেস রদরিগেস
ব্রাজিল বিশ্বকাপে কলম্বিয়ান তারকা রদরিগেস বিশ্বকে দেখিয়েছিলেন তিনি কী করতে পারেন৷ বিশেষ করে শেষ ষোলতে উরুগুয়ের বিপক্ষে তাঁর গোলটি ছিল আসরের অন্যতম সেরা গোল৷ ছয় গোল করে সর্বশেষ গোল্ডেন বুটটি ঝুলিতে পুরেছেন তিনি৷ কলম্বিয়া সেবার ব্রাজিলের কাছে হেরে শেষ আট থেকে বিদায় নেয়৷