বিশ্ব উষ্ণায়নে আক্রান্ত শীতের দেশের পশুরা
সাধারণত শীতের দেশের পশুদের গায়ে সাদা লোম থাকে৷ বরফের রঙের সঙ্গে মিশে থাকার জন্যই প্রকৃতির এই সৃষ্টি৷ কিন্তু গবেষকরা বলছেন, তাদের শরীরেও গরমের দাগ তৈরি হতে শুরু করেছে৷ উষ্ণায়নই তার মূল কারণ৷
ঠান্ডা দেশের জন্তুরা
প্রকৃতির রঙের সঙ্গে নিজেদের মিশিয়ে ফেলা যে কোনো পশুর ক্ষেত্রেই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ এভাবেই তারা শত্রুর চোখের আড়ালে নিজেদের মিশিয়ে রাখে৷ কিন্তু উষ্ণায়নের ফলে সবই বদলে যাচ্ছে৷ উঁচু পর্বতের পশু থেকে শুরু করে উত্তর মেরুর জন্তু, তাদের শরীরে পুরু সাদা লোম থাকে৷ ঠান্ডার মোকাবিলা করার জন্যই এই লোম৷
ছিল খয়েরি, হলো সোনালি
সারা পৃথিবীতে ২১ রকমের পশু আছে, মরশুমের সঙ্গে সঙ্গে যাদের রং বদলায়৷ গরম কালে হরিণ প্রজাতির এই ধরনের প্রাণীদের গায়ের রং থাকে খয়েরি৷ কিন্তু শীত পড়তে না পড়তেই দেখা যায় সেই রং বদলে ক্রমশ বাদামি সোনালি হয়ে যাচ্ছে৷
বেঁচে থাকাই সমস্যা
কিন্তু এই ধরনের অতি শীতল দেশের প্রাণীরা এখন সমস্যার মুখে৷ শীত পড়ছে দেরিতে৷ বরফ গলে যাচ্ছে দ্রুত৷ কিন্তু পশুদের শরীরে থেকে যাচ্ছে শীতের সাজ৷ ফলে তাদের বেঁচে থাকাই মুশকিল হয়ে পড়ছে৷
শীতেই গরমের সাজ
সম্প্রতি বিখ্যাত বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল ‘সায়েন্স-’এ প্রকাশিত হয়েছে যে, শীতের মরশুমেই বরফের খরগোশেরা গরমের কালো রংয়ে সেজে উঠছে৷
লুপ্ত হওয়ার পথে
প্রাণিবিজ্ঞানী এল স্কট সম্প্রতি একটি গবেষণা করেছেন৷ গবেষণায় দেখেছেন, কোনো কোনো শীতের দেশের পাখি চরম সংকটে৷ বিশেষ করে বালি হাঁসের মতো পাখি৷ ইউরেশিয়া, সাইবেরিয়া এবং মেরু অঞ্চলের পাখিরা দ্রুত তাদের চরিত্র বদলাচ্ছে৷
নেকড়েও রং বদলায়
মেরু অঞ্চলের হিংস্র নেকড়েরাও তাদের রং বদলাচ্ছে৷ আগে যারা ছিল সম্পূর্ণ সাদা, উষ্ণায়নের কারণে তাদের রং ক্রমশ বাদামি হয়ে যাচ্ছে৷ অনেক সময়েই শিকারিরা যা বুঝতে পারছেন না এবং আক্রমণের শিকার হচ্ছেন৷ শুধু তাই নয়, রং বদলাচ্ছে মেরু অঞ্চলের ঈগলেরাও৷
কাঠবেড়ালির রং
তবে সকলের ক্ষেত্রেই একরকম ঘটছে না৷ এক ধরনের কাঠবেড়ালি উষ্ণায়নের সঙ্গে সঙ্গে আরো বেশি উঁচুর দিকে চলে যাচ্ছে৷ তাদের গায়ের রংও ক্রমশ আরো সাদা হচ্ছে৷
যুঝে নেওয়ার উপায়
দক্ষিণ ইউরোপে এদের শরীরের লোম সবসময়ই বাদামি থাকে৷ বিজ্ঞানীদের ধারণা, জেনেরিক কারণেই এরা আরো কিছুদিন প্রকৃতির সঙ্গে যুঝে থাকতে পারবে৷
বাদামির প্রাধান্য
যেসব অঞ্চলে একই জন্তু দু’ধরনের রঙের পাওয়া যায়, বিজ্ঞানীদের ধারণা, সেখানে পরবর্তীকালে বাদামি রঙের প্রাধান্যই বেশি হবে৷ সাদা ক্রমশ বিলুপ্ত হবে৷ কিন্তু সেভাবে তারা বেঁচে থাকতে পারবে কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷
কার্বন কমান
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, পৃথিবী থেকে কার্বন ফুটপ্রিন্টের পরিমাণ কমানো না গেলে যে কোনো প্রাণীর পক্ষেই বেঁচে থাকা মুশকিল হবে৷ কারণ, অতিরিক্ত কার্বনডাইঅক্সাইড প্রাণের বিনাশ ঘটাবে৷