বিশ্ব ইজতেমা: দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সমাবেশ
গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগতীরে অনুষ্ঠিত হয় তাবলিগ জামাতের ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমা৷ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় এ সমাবেশের নানান দিক নিয়ে এই ছবিঘর৷
তাবলিগ জামাতের বার্ষিক সমাবেশ
বিশ্ব ইজতেমা তাবলিগ জামাতের বার্ষিক সমাবেশ৷ বাংলাদেশের গাজীপুর জেলার টঙ্গী এলাকায় তুরাগ নদীর তীরে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় মুসলমানদের বিশাল এই সমাবেশ৷ পৃথিবীর নানান দেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এতে যোগ দেন৷
অর্ধশত বছরের পুরনো
এ বছরেরটি বিশ্ব ইজতেমার ৫৩তম আসর৷ ১৯৬৭ সাল থেকে প্রতি বছর এই সমাবেশ নিয়মিত হয়ে আসছে বাংলাদেশে৷
গোড়ার কথা
১৯৪৬ সালে ঢাকার কাকরাইল মসজিদে তাবলিগ জামাতের বার্ষিক সম্মেলন বা ইজতেমা প্রথম অনুষ্ঠিত হয়৷ এর পরে ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামে হাজি ক্যাম্পে এবং ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয় ইজতেমা৷ তখন এই সমাবেশ কেবল ইজতেমা নামেই পরিচিত ছিল৷
যখন থেকে তুরাগ তীরে
ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা দিনে দিনে বাড়তে থাকায় ১৯৬৬ সালে টঙ্গীর পাগার গ্রামের খোলা মাঠে ইজতেমার আয়োজন করা হয়৷ ওই বছর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অংশ নিতে শুরু করে৷ তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় ‘বিশ্ব ইজতেমা’ নামে৷ পরের বছর থেকে তুরাগ নদীর উত্তর-পূর্ব তীরের বিশাল খোলা জায়গায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে এই সমাবেশ৷
দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম সমাবেশ
সৌদি আরবের হ্জের পর বিশ্ব ইজতেমা মুসলমান সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমাবেশ৷ প্রতি বছর বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেনে প্রায় ত্রিশ লাখ মুসলমান৷
বিদেশি অংশগ্রহণকারী
২০১৭ সালে বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিয়েছিলেন প্রায় ছয় হাজার মুসল্লী৷ এসেছিলেন বিশ্বের ৯৬ টি দেশ থেকে তাঁরা৷
দুই পর্বে ইজতেমা
পুণ্যার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণে স্থান সংকুলান না হওয়ায় ২০১১ সাল থেকে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুই পর্বে৷ এবছর প্রথম পর্ব ১২ থেকে ১৪ জানুয়ারি এবং দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ১৯ থেকে ২১ জানুয়ারি৷
শুরু শুক্রবার
বিশ্ব ইজতেমার দুই পর্বই শুরু হয় শুক্রবার৷ ফজরের নামাজের পর থেকে শুরু হয় বয়ান (ধর্মীয় আলোচনা)৷ এদিন জুম্মার নামাজে অংশ নিতেও অনেকে ঢাকা ও এর আশপাশ থেকে বিশ্ব ইজতেমা প্রাঙ্গণে আসেন৷
আখেরি মোনাজাত
বিশ্ব ইজতেমার শেষ দিন দুপুরে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ প্রার্থনা৷ এ বছর বিশ্ব ইজতেমার দুই পর্বের আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে যথাক্রমে ১৪ ও ২১ জানুয়ারি৷ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীও অংশ নেন আখেরি মোনাজাতে৷
নিরাপত্তা
বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে বিশেষ নিরপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলে সরকার৷ প্রায় সাত হাজার পুলিশ সদস্য ছাড়াও বেশ কিছু ব়্যাব সদস্যও থাকবে ইজতেমা প্রাঙ্গণের নিরাপত্তায়৷ এছাড়া বেশ কিছু ওয়াচ টাওয়ার আর সিসি ক্যামেরার মাধ্যমেও পর্যবেক্ষণ করা হবে মেলা প্রাঙ্গণ৷
অন অ্যারাইভাল ভিসা
বাংলাদেশে যেসব দেশের দূতাবাস নেই, সেসব দেশের নাগরিকরা ইজতেমায় অংশ নিতে চাইলে বাংলাদেশে ৩০ দিনের অন অ্যারাইভাল ভিসা পান৷
শেষ দিনে
আখেরি মোনাজাতের দিন লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় টঙ্গী এলাকা৷ তখন আশপাশের এলাকার সড়ক, বাড়ির ছাদে বসেও মোনাজাতে অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ৷
বিশেষ ট্রেন
বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বিশেষ ট্রেন সার্ভিস চালু করে বাংলাদেশ রেলওয়ে৷
সড়ক বন্ধ
দুই পর্বেই আখেরি মোনাজাতের দিনে ভোর রাত থেকে বিকেল পর্যন্ত ঢাকা ও গাজীপুরের কিছু সড়কে যান চলাচল প্রায় বন্ধ থাকে৷ এদিন ঢাকার নিকুঞ্জ থেকে উত্তরামূখী এবং গাজীপুরের চৌরাস্তা থেকে টঙ্গীমূখী সড়ক আর আশুলিয়া থেকে উত্তরামূখী সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়৷