বিভিন্ন ধর্মে উত্তরাধিকার আইন
কারো সম্পত্তির উত্তরাধিকার কে হবেন, বা তা ভাগাভাগিই হবে কীভাবে, এ সব বিষয় এখনো একেবারেই পারিবারিক পরিমন্ডলেই বিচার হয়৷ তাই এর জন্য রয়েছে পারিবারিক আইন৷ তবে এই আইন একেক ধর্মের জন্য একেকরকম৷
উত্তরাধিকার আইন
কোনো নারী বা পুরুষের মৃত্যুর পর তাঁর রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে মৃতের আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদনের খরচ, দেনাশোধ বা মৃতব্যক্তি যদি কোন উইল সম্পাদন করে যান তবে তা হস্তান্তরের পর যে সম্পত্তি অবশিষ্ট থাকে তার উপর মৃতের সন্তান সন্তানাদি ও আত্মীয় স্বজনের যে অধিকার জন্মায়, তাকে উত্তরাধিকার বলে৷
বিভিন্ন ধর্মে উত্তরাধিকার আইন
বাংলাদেশে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ও অন্যান্য প্রায় সব ধর্মাবলম্বীর, এমনকি আদিবাসীদেরও উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিধি-বিধান আছে৷ যেমন, মুসলিমদের জন্য আইনটি কুরআন ও হাদিস অনুযায়ী তৈরি৷ আবার হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের আইন আলাদা৷ সময়ে সময়ে কিছু কিছু আইন সংস্কারও করা হয়েছে৷
মুসলিম উত্তরাধিকার আইন
মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে তিন শ্রেণির উত্তরাধিকার আছে৷ যেমন : অংশীদার, অবশিষ্টাংশ ভোগী, দূরবর্তী আত্মীয়বর্গ৷ অংশীদারগণ সব উত্তরাধিকারীদের মধ্যে অগ্রাধিকার পান৷ অংশীদারদের মধ্যে স্ত্রী অন্যতম৷ পিতা, মাতা, ছেলে, মেয়ে, স্বামী ও স্ত্রী – এঁরা কেউই উত্তরাধিকার সম্পত্তি হতে বাদ যান না৷ পুত্র, কন্যা, স্বামী, স্ত্রী কিংবা অন্য অংশীদাররা কে কতটুকু সম্পত্তি পাবেন তা নির্ধারিত করা আছে৷
হিন্দু উত্তরাধিকার আইন
এখানে দুই ধরনের উত্তরাধিকার পদ্ধতি চালু আছে – মিতক্ষরা ও দায়ভাগ পদ্ধতি৷ বাংলাদেশে দায়ভাগ পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়৷ এ আইন অনুযায়ী, যারা পিণ্ডদানের অধিকারী, তারাই যোগ্য উত্তরাধিকারী৷ পিণ্ডদানের অধিকারীদের তালিকায় থাকা ৫৩ জনের মধ্য পুত্র, পুত্রের পুত্র, পুত্রের পুত্রের পুত্র, স্ত্রী, পুত্রের স্ত্রী, পুত্রের পুত্রের স্ত্রী, পুত্রের পুত্রের পুত্রের স্ত্রীর পরে কন্যা আসেন৷ এই আইনের সংস্কারের দাবি বহুদিনের৷
খ্রিষ্টান উত্তরাধিকার আইন
আমাদের দেশে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের উত্তরাধিকার নিয়ন্ত্রিত হয় সাকসেশন অ্যাক্ট ১৯২৫-এর মাধ্যমে৷ কোনো মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী হওয়ার ক্ষেত্রে ছেলে এবং মেয়ে একই মর্যাদার অধিকারী, অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে তারা সমান অংশ লাভ করে৷ তবে মৃত ব্যক্তি যদি সম্পত্তি অন্য কারো নামে উইল করে যান, তাহলে সম্পত্তি উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বণ্টিত হবে না৷
বৌদ্ধ উত্তরাধিকার আইন
বাংলাদেশে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠী হিন্দু আইন অনুযায়ী তাদের উত্তরাধিকার নির্ধারণ করে থাকে৷
নৃ-গোষ্ঠীদের উত্তরাধিকার আইন
বেশিরভাগ নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের প্রথা অনুযায়ী নারীদের পিতা-মাতা ও স্বামীর সম্পদের মালিকানায় উত্তরাধিকারের কোনো পদ্ধতি নেই৷ এ কারণে এ নারীরা সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন৷ পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের সংশোধনী পাস হওয়ার পরও নৃ-গোষ্ঠীর নারীরা আদৌ কোনো সুফল পাবেন কিনা, তা নিয়ে তাদের মাঝে সংশয় আছে৷