‘বিদ্যুতের মতো খেলা'
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪মেরো দা মিনেইরা বস্তিতে ব্রাজিলের প্রথম প্লেয়ার-পাওয়ার্ড ফুটবল মাঠের উদ্বাধন উপলক্ষ্যে খোদ পেলে পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন৷ খেলেছে স্থানীয় একটি যুবদল: ‘খেলেছে' বলতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি অভিনব প্রণালী পরীক্ষা করেছে৷ প্রণালীটির নাম: ফুটবল!
প্রকল্পটি রয়াল ডাচ শেল কোম্পানির অর্থানুকুল্যে৷ সারা মাঠ জুড়ে এক বিশেষ ধরনের টালি বসানো হয়েছিল, যা খেলোয়াড়দের দৌড়োদৌড়িতে নিবদ্ধ গতিশক্তি সঞ্চয় করতে সক্ষম৷ পুরো মাঠ ঢাকতে এ ধরনের ২০০টি টালি লাগে৷ ‘পেভজেন' নামধারী এই বিশেষ টালির উদ্ভাবক ব্রিটেনের এক স্টার্ট-আপ কোম্পানি৷ টালি বসানোর পর তা এক স্তর অ্যাস্ট্রো টার্ফ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়৷ পেভজেন টালিগুলি মাঠের চারপাশে লাগানো সোলার প্যানেলগুলির সঙ্গে যুক্ত – এভাবেই মাথার উপরের ফ্লাডলাইটগুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব৷
পেভজেন-এর প্রধান লরেন্স কেম্বাল-কুক তাদের বৈদ্যুতিক টালির বৈজ্ঞানিক খুঁটিনাটি ব্যক্ত করতে চাননি, কিন্তু তাঁর বাবা রিচার্ড কেম্বাল-কুক, যিনি কোম্পানির চেরারম্যান, তিনি ফাঁস করে দিয়েছেন: টাইলগুলোয় দাঁত-লাগানো চাকার মতো ছোট ছোট ‘কগ' বসানো আছে; টাইলের উপর প্লেয়ারদের পায়ের চাপ পড়লে কগগুলো লাট্টুর মতো ঘুরতে থাকে, যা থেকে জেনারেটরের নীতিতে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়৷ প্রত্যেকটি টালির দাম ৫০০ ডলার, কিন্তু এখন প্রোডাকশন বাড়ছে ও দাম পড়ছে৷ ৩৫ জন কর্মীর সংস্থা পেভজেন ইউরোপের বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশনে এই টালি বসিয়েছে, বসিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার শপিং সেন্টারে, লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে – কিন্তু ফুটবল মাঠে টালি বসানো এই প্রথম৷
গতিশক্তি থেকে বিদ্যুৎ, ফুটবল ও বিজ্ঞানের এই অভাবনীয় সহযোগিতা দেখে পেলের চোখে জল এসে গেছে৷ তিনি বলেছেন: এ থেকে স্থানীয় কচিকাঁচারা শুধু ফুটবলেই নয়, বিজ্ঞানের প্রতিও আগ্রহী হবে, বলে তিনি আশা করবেন৷ এই প্রসঙ্গে পেলে স্মরণ করেন যে, তাঁর বাবা পেলের নাম রেখেছিলেন এডসন - মার্কিন বিজ্ঞানী ও আবিষ্কারক থমাস এডিসন-এর নামে৷ পেলের আদত নাম এডসন আরান্তেজ দো নাসিমেন্তো৷ পরের প্রজন্মের ব্রাজিলিয়ানরা দেশকে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও তেমনই সাফল্য এনে দেবে, ফুটবলের মাঠে ব্রাজিল যা পেয়েছে – এই হলো চিরকালের সেরা ফুটবল খেলোয়াড়ের আশা৷
‘‘খুব তাড়াতাড়ি বিশ্বের পয়লা নম্বর বিজ্ঞানীরা ব্রাজিলিয়ান হবে, এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত'', চোখের জল মুছে হাসিমুখে বলেছেন পেলে৷
এসি/ডিজি (এপি)