বিছানা: আমাদের কাছে, শিল্পীদের চোখে...
ঘুম কাতুরে বাঙালির কাছে বিছানা বা শয্যা মানেই ঘুম৷ ভাত-ঘুম, শীত-ঘুম বা শুয়ে শুয়ে স্বপ্ন দেখা৷ কিন্তু বিছানার জগৎটা তো আরো বিশাল, আরো বড়, তাই না? জন্ম, মৃত্যু, ভালোবাসা, একাকিত্ব অথবা যৌথ জীবন – সবই যে এই বিছানাকে ঘিরে৷
তোমার সঙ্গে একা...
আজকাল বিছানাতেই চলছে অফিসের কাজ, খাওয়া-দাওয়া, টিভি দেখা, স্মার্টফোনে গান শোনা, ল্যাপটপ বা ট্যাব নিয়ে ফেসবুক অথবা স্কাইপে আলাপচারিতা৷ তার সঙ্গে বিছানায় তোলা বিখ্যাত ব্যক্তিদের ‘সেল্ফি’ এখন ভক্তসমাজে দারুণ ‘পপুলার’৷ এই যেমন জার্মান আলোকচিত্রী ইয়ুর্গেন টেলারের তোলা বিখ্যাত মডেল কেট মস-এর এই ছবিটি৷ সাদা চাদরে মোড়ানো কেট মস-এর এই ছবি এখন অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় আয়োজিত একটি বিছানা প্রদর্শনীর অংশ৷
পপ আর উত্তেজনার মাঝে
বিছানা যেন আজ শিল্পীর ক্যানভাসে পরিণত হয়েছে৷ তাই তো প্রদর্শনীতে উঠে এসেছে বিশ্বখ্যাত পপ সংগীত তারকা ম্যাডোনার এই ছবিটি৷ ১৯৯৪ সালে তোলা এ ছবির ফোটোগ্রাফার বেটিনা রাইমস৷ আলুথালু পোশাক, পেছনে গোলাপের সমাহার আর মোহিনী হাসিতে ম্যাডোনাকে এ ছবিতে যেন প্রেম আর যৌবনের প্রতীক বলে মনে হচ্ছে৷ মজার বিষয়, ছবিটা যে সময় তোলা ঠিক সে সময়েই ‘বেডটাইম স্টোরিজ’ নামে নিজের অ্যালবামটি বের করেছিলেন ম্যাডোনা৷
বিছানা থেকেই শুরু
ভিয়েনায় বিছানা নিয়ে প্রদর্শনীটিতে জায়গা করে নিয়েছে মধ্যযুগীয় বেশ কিছু চিত্রকর্ম এবং প্রাচীন দেওয়াল-লিখন বা ‘ফ্রেস্কো’৷ ওপরের চিত্রকর্মটির নাম ‘মাস্টার অফ দ্য ডিভিসিও আপোস্টোলোরুম’৷ শিল্পীর নাম অজানা হলেও, এটুকু জানা যায় যে তিনি সিরিয়ার মানুষ ছিলেন এবং ১৫ শতকে যিশু খ্রিষ্টের মা, ‘মাদার মেরির জন্ম’ নামের বিখ্যাত চিত্রশিল্পটিও তাঁরই আঁকা৷ বিছানা থেকেই যে জীবনের শুরু, এ ছবি তার একটি উদাহরণ তো বটেই!
মন খারাপ করা...
বিছানা – এই শব্দটার সঙ্গে জড়িয়ে আছে জন্ম, মৃত্যু, ভালোবাসা, যন্ত্রণা, সুখ, দুঃখ আরো কত কী! তাই ভিয়েনা শহরের হাউস আর্ট মিউজিয়ামের ‘কিউরেটর’ মারিও কডো গনাটো চিত্রকর্ম, স্থাপত্য, আলোকচিত্র, ভিডিও – সব কিছুকেই বিষয় এবং মনের ভাব অনুযায়ী ভাগ করেছেন৷ যেমন প্রদর্শনীর ‘বিষন্ন’ পর্যায়ে রয়েছে পিয়ের বোনার্দ-এর অন্যতম এই তেলচিত্রটি৷
অসুখ আর যন্ত্রণার সাথি
বিছানা নিয়ে আলোচনা শুধু ঘুম এবং সেক্সের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না৷ কারণ এখানেই যে জন্মজন্মান্তর ধরে আমরা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করছি৷ অসুখ-বিসুখ হলেও বিছানার গুরুত্ব বাড়ে৷ সদ্য প্রয়াত অস্ট্রিয়ান চিত্রকর মারিয়া লাসনিগ-এর শিল্পকর্ম এটি, নাম ‘হাসপাতাল’৷ ৮৬ বছর বয়সে তিনি যখন এ ছবি এঁকেছিলেন, তখন জরা তাঁকে প্রায় গ্রাস করেছে৷
এ ঘুম যেন আর না ভাঙে
বিছানা বলতেই আমাদের কাছে হয়ত নরম, তুলতুলে তোষক-বালিশ বোঝায়৷ কিন্তু জেলখানা বা কারাগারের কথা একবার ভাবুন তো! মার্কিন শিল্পী লুসিন্ডা ডেভলিন ১৯৯০ সালে সেই ভাবনা থেকেই মার্কিন কারাগারগুলির ছবি তুলেছিলেন, বিশেষ করে সেই সব জেলখানার, যেখানে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতো৷ ছবিতে সে রকম বিভৎস মনে না হলেও, এখানে কিন্তু বিষাক্ত ইনজেকশনও দেওয়া হয়েছে একটা সময়৷ ভিয়েনার প্রদর্শনীতে গেলে এমন আরো বিছানার ছবি দেখতে পাবেন৷
যুদ্ধের ক্ষতও থেকে গেছে বিছানায়
স্যার সেসিল বেটন যে শুধু রাজা-রাজরা আর বিখ্যাত মানুষের ছবি তুলে নাম কুড়িয়েছিলেন, তা কিন্তু নয়৷ অসাধারণ সব যুদ্ধের ছবিও তুলেছিলেন তিনি৷ ১৯৪০ সালে জার্মান আকাশবোমায় আহত এই তিন বছরের বাচ্চাটির ছবি তুলেছিলেন তিনি৷ ‘টেডি বেয়ার’ হাতে বাচ্চাটির এ ছবি তৎকালীন যুদ্ধবিরোধী ছবিগুলির মধ্যে অন্যতম৷ ২৩শে সেপ্টেম্বরের ‘লাইফ’ ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদেও স্থান পেয়েছিল ছবিটি৷