বাল্য বিয়েতে জনপ্রতিনিধির শাস্তি?
৩০ অক্টোবর ২০১৭ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড মেম্বাররা এবং পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কমিশনাররা কেন নিজ নিজ এলাকায় বাল্য বিবাহের জন্য দায়ী থাকবেন না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে৷ বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ রুল দেন৷ বাল্যবিয়ে বন্ধে কার্যকর ভূমিকায় প্রশাসন খুব বেশি সাফল্য অর্জন করতে পারছে না বিবেচনা করে আদালত এ রুল জারি করেছেন বলে জানানো হয়৷
‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭' পাস হবার পর এ আইনের ১৯ ধারায় বিশেষ পরিস্থিতিতে বাল্য বিয়েকে বৈধতা দেয়া হয়েছে৷ এর বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সালমা আলী৷ হাইকোর্টের এ রুলকে স্বাগত জানিয়ে সালমা আলী বলেন, ‘‘বাল্যবিয়ে বন্ধে সব স্তর থেকে জবাবদিহিতার বিষয়টি নিশ্চিত করা প্রয়োজন৷ প্রত্যেকটা সেক্টর থেকে যদি জনপ্রতিনিধিসহ সবাইকে দায়বদ্ধতার মধ্যে আনা যায়, তাহলে বাল্যবিয়ে অনেকটাই কমে আসবে৷''
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এই রুলের জবাব দিতে হবে৷ এ আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস জানান, আদালত আগামী ৩ ডিসেম্বর পরবর্তী তারিখ রেখেছে৷
দৈনিক প্রথম আলোতে গত ২৮ অক্টোবর ‘২৪ ঘণ্টায় আট বাল্যবিবাহ বন্ধ' শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন আমলে নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই রুল জারি করে হাই কোর্ট৷ ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৬ অক্টোবর বিকেল থেকে ২৭ অক্টোবর বিকেল পর্যন্ত নাটোর, কুষ্টিয়া, বরিশাল ও ঢাকার সাভারে আট কিশোরী বাল্যবিয়ে থেকে রেহাই পায় স্থানীয় প্রশাসনের পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের তৎপরতায়৷
এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদে পাশ হয় ‘বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭'৷ নতুন আইনেবাল্যবিয়ে হলে শাস্তির আওতায় কারা আসবে, তার পরিষ্কার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে৷ শুধু অপ্রাপ্তবয়স্ক বর, কনে বা তাদের পরিবার না, যাঁরা বিয়ে পরিচালনা করেন এবং বিয়ে রেজিস্ট্রি করেন, তাঁদেরও শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে৷ তবে, এ আইনের ১৯ ধারায় বলা হয়েছে, বিশেষ প্রেক্ষাপটে অপ্রাপ্তবয়স্কের সর্বোত্তম স্বার্থে বিধি দ্বারা নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিয়ে দেয়া হলে তা এই আইনের অধীনে অপরাধ বলে গণ্য করা হবে না৷ আইনটির সমালোচনায় এই বিশেষ ধারার অপব্যবহারের সুযোগ আছে উল্লেখ করে নারী অধিকার সুরক্ষায় এর বিরোধিতা করে আসছেন মানবাধিকার কর্মীরা৷
ইউনিসেফের তথ্যমতে, যে দেশগুলোতে বাল্যবিয়ে বেশি, বাংলাদেশ এর মধ্যে অন্যতম৷ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, এ বছরের প্রথম সাত মাসেই বাল্যবিয়ের ঘটনা ঘটেছে ১১৬টি৷
আরএন/এসিবি