1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

​​‌বার্তাই সার, কোন্দল থামে না

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর থেকে ধারাবাহিকভাবে ঘটে যাচ্ছে গোষ্ঠী কোন্দলের ঘটনা৷ দলীয় নেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি হাজার বার্তা দিলেও সেই কোন্দল থামছে না৷

https://p.dw.com/p/2s86J
West Bengal Chef-Ministerin Mamata Bannerjee
ছবি: UNI

গত শুক্রবার তৃণমূল কংগ্রেসের ছাত্র-যুব সম্মেলনে নিজের ভাইপো, সাংসদ ও তৃণমূল যুব-র সভাপতি অভিষেক ব্যানার্জি এবং রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে পাশাপাশি বসিয়ে দলকে বার্তা দিতে চাইলেন  তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে দলে অভিষেক এবং শুভেন্দুর মধ্যে ঠান্ডা লড়াই চলছে বলে যে রাজনৈতিক রটনা, তার মুখ বন্ধ করতে চাইলেন৷ ঠিক যে গুজব একসময় সত্যি প্রমাণিত হয়েছিল একদা তৃণমূল কংগ্রেসের দু'‌নম্বর লোক এবং মমতা ব্যানার্জির একান্ত বিশ্বস্ত সেনাপতি মুকুল রায়ের ক্ষেত্রে৷ শোনা গিয়েছিল, দলে প্রাধান্য পাওয়া নিয়ে অভিষেকের সঙ্গে বিরোধ বেধেছিল মুকুলের, যার পরিণতি মুকুলের দলত্যাগ এবং বিজেপিতে যোগ দেওয়া৷ এই রটনা সত্যি প্রমাণিত হয়, যখন মুকুল দলবদল করেই অভিষেকের বিরুদ্ধে নানাবিধ সরব হন৷

মমতা অভিষেক-শুভেন্দুকে পাশাপাশি বসানোর বিষয়টা লোকের বুঝে নেওয়ার ওপর ছাড়েননি৷ বরং স্পষ্ট কথায় বলেছেন, ৫০ বছর পর্যন্ত দলকে তৈরি করে দিয়ে যাচ্ছেন৷ ভবিষ্যতের ভার থাকবে অভিষেক, শুভেন্দুর হাতে৷ এবং সেই সঙ্গে মুকুলের নাম না করেও উল্লেখ করতে ভোলেননি যে, বিশ্বাসঘাতক চলে গেছে, দল বেঁচে গেছে!‌ কিন্তু সমস্যা হলো, ওই নাম না করা একদা সহকর্মীটি যদি আদতেই বিশ্বাসঘাতকতা করে থাকেন, তা হলে তার মূল কারণটিকে চিহ্নিত করার কোনও চেষ্টা মমতা করলেন না৷ অথবা হয়ত ঠিক সেটাই করলেন৷ তৃণমূল ব্যক্তিকেন্দ্রিক দল, প্রথম এবং শেষ কথা মমতা, দলে তিনি একাই প্রথম সারিতে, তাঁর পর দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারির কোনও নেতৃত্ব তিনি তৈরি করছেন না — এ ধরনের যাবতীয় সমালোচনার জবাব দিতে শুরু করলেন আগামী দিনের দুই নেতাকে এক মঞ্চে পাশাপাশি বসিয়ে৷ রীতিমত ঘোষণা করে দিলেন, ভবিষ্যতের ভার এঁরাই নেবেন৷ তাঁর অবর্তমানে৷

আসলে তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠী কোন্দল কোনো নতুন সমস্যা নয়৷ বরং ২০১১ সালে যখন প্রথমবার ক্ষমতায় এসেছে মমতা ব্যানার্জির দল, তখন থেকেই এই কোন্দল প্রকাশ্যে৷ এবং তার কারণটাও খুব পরিষ্কার৷ টানা ৩৪ বছর ক্ষমতায় জগদ্দল পাথরের মতো বসে থাকা বামফ্রন্ট সরকারকে হটিয়ে সত্যিই যে পরিবর্তন আসা সম্ভব, সেটা যখন সবাই অবিশ্বাস করতে শুরু করেছে, তখনই ঘটনাটা ঘটিয়ে দিয়েছেন মমতা৷ এবং সেটা ঘটিয়েছেন বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে, যা পরোক্ষে ইঙ্গিত দিয়েছে, মমতা ব্যানার্জির সরকার আপাতত থাকছে৷ এবং সেই নির্বাচনি বিপর্যয়ের পর থেকেই যত দিন যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে ততই রাজনৈতিকভাবে অপ্রাসঙ্গিক, অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ছে বামপন্থিরা৷ সেই দেওয়াল লিখন পড়তে পেরেই বামপন্থিদের ছত্রছায়া থেকে দলে দলে সুযোগসন্ধানীরা তৃণমূলে গিয়ে যোগ দেয়৷ সেই তালিকায় যেমন কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন, তেমনই বেআইনি সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত অসাধু ঠিকাদার, প্রোমোটার, সমাজবিরোধীরাও ছিল, যারা যে কোনো মূল্যে ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে চায়৷

যে কারণে  তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল সবসময় রাজনৈতিক ক্ষমতার দ্বন্দ্ব থেকে নয়৷ সম্প্রতি দক্ষিণ ২৪ পরগণার বাসন্তিতে যেমন তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গুলি-বোমার লড়াই, যার মাঝখানে পড়ে এক স্কুলছাত্র বেঘোরে মারা গেল, তা নাকি এক নর্তকীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নিয়ে দুই নেতার বিরোধের জের৷ এছাড়াও একাধিকবার তোলাবাজি নিয়ে লড়াইয়ে জড়িয়েছে তৃণমূলের নেতারা৷ এলাকার দখল নিয়ে দলের সাংসদ বনাম বিধায়ক, মূল সংগঠন বনাম যুব সংগঠনের একাধিক এবং লাগাতার সঙ্ঘর্ষের ঘটনার মূল কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, তা বস্তুত অর্থকরী৷

ডয়চে ভেলের মুখোমুখি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

তবে এখনও পর্যন্ত তৃণমূলে গোষ্ঠী কোন্দলের সব থেকে বড় উদাহরণ হয়ে আছে ভাঙড়ে প্রাক্তন বাম মন্ত্রী, বর্তমানে তৃণমূল বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লা বনাম স্থানীয় তরুণ তুর্কি নেতা আরাবুল হোসেনের লাগাতার বিরোধ৷ দলীয় নেত্রীর স্পষ্ট নিষেধ এবং নির্দেশ সত্ত্বেও দু'‌জনের মধ্যে সন্ধি হয়নি, বরং বারবারই সঙ্ঘাত হয়েছে৷ রাজনৈতিক উচ্চাশার সঙ্গে ক্ষমতার সুযোগসন্ধানী মনোভাব বিরোধে জড়িয়েছে৷ এই স্বার্থের লড়াইই কার্যত চিহ্নিত করে দেয় পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের অন্তর্গত কলহ, কোন্দলের সার্বিক চিত্রকে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান