1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘‌বাঙালি বাবু’ আবার রাষ্ট্রপতি?

রাজীব চক্রবর্তী নতুন দিল্লি
৩১ মে ২০১৭

পোড় খাওয়া রাজনীতিক তিনি৷ কূটনীতিতে তাঁর সমকক্ষ নেতা ভূ-‌ভারতে নেই বললেই চলে৷ এ কারণে ‘‌চাণক্য’ নামে পরিচিতি পেয়েছেন প্রণব মুখার্জি৷ চার দশক ধরে দেশের রাজনীতিকে সমৃদ্ধ করা ‘বাঙালি বাবু’ কি আবার ভারতের রাষ্ট্রপতি হবেন?

https://p.dw.com/p/2duxw
Präsident Indien Pranab Mukherjee
ছবি: picture-alliance/dpa

আগামী ২৫ জুলাই ভারতের রাষ্ট্রপতি পদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে৷ বিরোধী কয়েকটি দল প্রণব মুখার্জিকেই দ্বিতীয়বারের জন্য ফিরিয়ে আনতে চাইছে৷ ‌

মেয়াদ শেষের আগে আপাতত বিদায়ী সুর প্রণবের গলায়৷ ক’দিন আগে তাঁর প্রেস সচিব বেণু রাজামণির ‘বিদায়ী সম্বর্ধনা'‌র আয়োজন করা হয়েছিল রাষ্ট্রপতি ভবনে৷ কিন্তু, আদতে সেটা যেন হয়ে উঠল রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির আসন্ন বিদায়ের সূচনা অনুষ্ঠান!‌ ২৯ মে রাজামণির কার্যকালের মেয়াদ শেষ হয়েচ্ছে৷ প্রণব মুখার্জির অত্যন্ত প্রিয় এবং স্নেহধন্য, অভিজ্ঞ আইএফএস অফিসার পাড়ি দিচ্ছেন হেগ, নেদারল্যান্ডসে৷ ভারতের রাষ্ট্রদূত হয়ে৷ আর রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রণব মুখার্জির কার্যকালের মেয়াদ শেষ হবে আগামী জুলাইয়ে৷ গত পাঁচ বছরে রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রণব মুখার্জির অন্যতম কর্মকাণ্ডের মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলি হলো, ঐতিহ্যবাহী ও ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত রাইসিনা হিলসে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনের খোলনলচে বদলে ফেলা, একের পর এক মিউজিয়াম তৈরি করে সেগুলি সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া, নানা বিষয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনে বিশেষ বিভাগ চালু করা, ইত্যাদি৷ প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রণব মুখার্জি যা করেছেন, তাঁর আগে কেউই তেমন পদক্ষেপ নেননি৷

এ তো গেল একটা দিক৷ অন্য দিকও আছে বৈকি৷ সংবিধানকে শিরোধার্য করে প্রকৃত রাষ্ট্রপ্রধানের কর্তব্যে অবিচল থাকার নজির গড়েছেন তিনি৷ গত তিন বছরে মোদী সরকারের একাধিক অধ্যাদেশ ফেরৎ পাঠিয়েছেন তিনি৷ জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন৷ বেনামি সম্পত্তি অধ্যাদেশ নিয়েও সরকারের ভূমিকাকে খোঁচা দিয়েছেন৷ কখনও ধর্মীয় সহিষ্ণুতা কখনও কালোটাকা বা নোট বাতিল ইস্যুতে সুকৌশলে সরকারকে বার্তা দিয়েছেন৷

রাষ্ট্রপতি ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি নিজেই বলছিলেন, ‘‌‘‌রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে বিদায়ের মাত্র দু' মাস আগে দাঁড়িয়ে আছি৷ ঠিক দু' মাস পরে আগামী ২৫ জুলাই আমি এখান থেকে চলে যাব৷ প্রথম যখন এখানে এসেছিলাম, তখন কেমন একটা অস্বস্তি ছিল৷ আসলে সারা জীবন প্রশাসন এবং সক্রিয় রাজনীতিতে থেকেছি তো, তাই ভাবতাম, এখানে মানিয়ে নিতে পারব কিনা৷ পরে সব ঠিক হয়ে গিয়েছিল৷’’ সেই সঙ্গে বলেন, ‘‌‘কতটা কী করেছি, কতটা সফল হয়েছি, তা বিচার করার আমি কেউ নই৷’’ এহেন ‘বাঙালি বাবু’ একজনকে আরও একবার দেশের রাষ্ট্রপ্রধান পদে দেখতে চাওয়া যেন ‘‌ন্যায্য দাবি’ হয়ে উঠেছে৷

‘রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপই ছিল সংবিধান ও সংবিধান প্রদত্ত অধিকার গুলি প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে’

কংগ্রেসে থাকাকালীন প্রণব মুখার্জির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের নেতা সুখেন্দুশেখর রায়৷ প্রণব রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরেও সেই সম্পর্কে এতটুকু চিড় ধরেনি৷ যখনই কোনও পরামর্শের প্রয়োজন হয়েছে, ছুটে গেছেন৷ হাতেনাতে সমাধানও পেয়েছেন৷ সুখেন্দুশেখর মনে করেন, ‘‘বিগত পাঁচ বছর ধরে প্রণব মুখার্জি দেশের গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরীর মতো কাজ করেছেন৷ কখনোই সরকার ও সংবিধানের মধ্যে বিস্তর ফারাক হতে দেননি৷ তাছাড়া রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপই ছিল সংবিধান ও সংবিধান প্রদত্ত অধিকার গুলি প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে৷ প্রতিটি ক্ষেত্রেই সফল হয়েছেন তিনি৷’’

দেশজুড়ে এখন পরবর্তী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে চলছে জোর রাজনৈতিক তৎপরতা৷ কে হবেন পরের রাষ্ট্রপতি ? তা নিয়ে আলোচনার জন্য নয়াদিল্লিতে সরকারপক্ষ এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির বৈঠকও হচ্ছে৷ সরকারপক্ষ এখনও কারও নাম জানায়নি৷ এই অবস্থায় তাঁর নিজের কী প্রত্যাবর্তনের কোনো ইচ্ছে রয়েছে? প্রত্যাশিত ভাবেই এ প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন প্রণব মুখার্জি৷ তবে জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতি হিসেবে রাইসিনা হিলসে তাঁর যেসব বিরল অভিজ্ঞতা হয়েছে, সেসব কিছু নিয়ে তিনি বই লিখবেন৷ আগামী মাসে পশ্চিমবঙ্গ সফরে যাওয়ার কথা তাঁর৷ সেই কর্মসূচি নিয়েও এ দিন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন তিনি৷

এদিকে, নরেন্দ্র মোদী যদি প্রণব মুখার্জির নাম পরবর্তী রাষ্ট্রপতি পদের জন্য প্রস্তাব করেন, তা হলে বিরোধীরা একজোট হয়ে তাঁকে সমর্থন করবেন৷ কিন্তু প্রণব মুখার্জি ছাড়া শাসক দল অন্য কাউকে প্রার্থী করলে বিরোধী দলগুলি নিজেদের প্রার্থী দাঁড় করিয়ে ভোটাভুটিতে যাবে৷ সোনিয়া গাঁন্ধীর ডাকা ১৭টি বিরোধী দলের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ পাশাপাশি, সরকার কোনও প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করলে তাঁর গ্রহণযোগ্যতার সংজ্ঞাও জানিয়ে দিয়েছে বিরোধী শিবির৷ তা হলো প্রার্থীকে ‘সংবিধান-বিশেষজ্ঞ’ এবং ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ হতে হবে৷ তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি ‘সর্বসম্মতির’ পটভূমি প্রস্তুত করে দিয়েছিলেন৷ তবে এ পর্যন্ত যা খবর, পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হিসেবে গোপালকৃষ্ণ গান্ধীকেই প্রার্থী করতে চলেছে বিরোধীরা৷ শেষ মুহূর্তে কোনও বদল না হলে, রাষ্ট্রপতি পদে বিরোধী প্রার্থী হিসাবে গোপাল কৃষ্ণ গান্ধীই সব চেয়ে এগিয়ে৷ কংগ্রেস সূত্রের খবর হলো, সোনিয়া এবং রাহুল মনে করছেন, গোপাল গান্ধীই বিরোধীদের কাছে সব চেয়ে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী হবেন৷ তাঁর যোগ্যতা নিয়েও কোনও প্রশ্ন ওঠে না৷