‘বাংলার ম্যারাডোনা’ নামটি আমার জন্য অনেক গর্বের
২৭ নভেম্বর ২০২০গণমাধ্যম ও সমর্থকদের কাছে৷ ডিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যুতে ‘বাংলার ম্যারাডোনা' সাব্বিরেরও মন খারাপ৷ বিষণ্নতা নিয়েই কথা বললেন সর্বকালের অন্যতম সেরা ওই ফুটবলারকে নিয়ে৷
প্রশ্ন : ম্যারাডোনার মৃত্যুর খবর কিভাবে পেয়েছেন?
সাব্বির : ওই সময়ে আমার বাসায় বিদ্যুৎ ছিল না৷ কানাডায় থাকা আমার বন্ধু আয়াজ হোয়াটসঅ্যাপে ফোন করে...
প্রশ্ন : মানে সাবেক ফুটবলার শেখ আয়াজ?
সাব্বির : হ্যাঁ৷ আয়াজ ফোন করে বলল, ‘দোস্ত, শুনছিস নাকি এ অবস্থা (ম্যারাডোনার মৃত্যু)?' আমি বললাম, ‘আমি তো দেখিনি দোস্ত'৷ ও বলল, ‘ফেসবুকে ভরে গেছে'৷ এর ১০ মিনিট পর বিদ্যুৎ এল৷ ফেসবুকে দেখলাম, ম্যারাডোনা মারা গেছেন৷ পরে টিভিতেও দেখলাম৷
প্রশ্ন : বন্ধু আয়াজের কাছে ম্যারাডোনার মৃত্যুর খবর শুনে আপনার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া কী ছিল?
সাব্বির : এই ২০২০ সালে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবের মৃত্যুর খবর শুনেছি অনেক৷ এখন ম্যারাডোনার মৃত্যুর খবর শুনে আসলেই খুব খারাপ লেগেছে৷ উনি আমাদের খুব প্রিয় খেলোয়াড়৷ বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার৷ স্বাভাবিকভাবেই তাই খারাপ লাগার কথা৷ যেহেতু আমরা তাঁর ভক্ত ছিলাম; ফুটবলে তাঁর অনুকরণ করতাম৷
প্রশ্ন : ম্যারাডোনা হয়তো আপনার সরাসরি বন্ধু কিংবা আত্মীয় না৷ তবে ফুটবলীয় অর্থে এক ধরনের নৈকট্য তো ছিলই৷ তাঁর মৃত্যু তাই আপনাকে প্রিয়জন হারানোর মতোই কষ্ট দিয়েছে নিশ্চয়?
সাব্বির : হ্যাঁ, অবশ্যই৷ ম্যারাডোনার মৃত্যু সবার কাছেই কষ্টদায়ক৷ মন খারাপ করা খবর৷ বিদায় তো সবাইকে নিতে হবে, এটাই নিয়ম৷ কিন্তু সবাই আশা করছিলেন, ম্যারাডোনা আরো সময় বাঁচবেন৷ সে হিসেবে (ম্যারাডোনার মৃত্যুতে) খারাপ লাগারই কথা৷
প্রশ্ন : আপনার কাছে ম্যারাডোনার কোন স্মৃতিটা সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে? ম্যারাডোনা নাম বললে প্রথমেই কী মনে হয়?
সাব্বির : ম্যারাডোনা বলতেই একটা আকর্ষণ৷ তিনি এমন এক ফুটবলার, তাঁর অঙ্গভঙ্গি, কথাবার্তা আকৃষ্ট করে প্রতিটি মানুষকে৷ প্রতিটি রিপোর্টারকে, প্রতিটি ক্যামেরাম্যানকে৷ ম্যারাডোনা একটা ক্রেজ৷ বিশ্বে আর কোনো ফুটবলারকে ঘিরে এমন ক্রেজ রয়েছে কিনা, সন্দেহ৷
প্রশ্ন : ১৯৮৬ বিশ্বকাপ আপনার কিরকম মনে আছে?
সাব্বির : ম্যারাডোনার জন্য '৮৬ ছিল স্বর্ণযুগ৷ এর আগে খুব সম্ভবত '৭৮ কিংবা '৮০-তে বিশ্ব যুব বিশ্বকাপ হয়েছিল...
প্রশ্ন : ১৯৭৯ সালে৷
সাবিবর : হ্যাঁ, সেবার আর্জেন্টিনাকে এককভাবে শিরোপা জেতান ম্যারাডোনা৷ একা জেতান ১৯৮৬ বিশ্বকাপও৷ এ ধরনের ফুটবলার খুব বিরল, যুগে যুগে আসেন খুবই কম৷
প্রশ্ন : ১৯৮৬ বিশ্বকাপ কোথায়, কিভাবে দেখেছেন মনে আছে?
সাব্বির : বাসায়ই টিভিতে দেখেছি বেশিরভাগ৷ বন্ধুবান্ধবের সঙ্গেও দেখেছি৷
প্রশ্ন : '৮৬ বিশ্বকাপের ওই সময়ে কি আপনি আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করতেন?
সাব্বির : আমি আসলে ব্রাজিলের সমর্থক৷ পরবর্তী সময়ে আর্জেন্টিনার সমর্থক হয়ে যাই৷
প্রশ্ন : ম্যারাডোনার কারণে?
সাব্বির : হ্যাঁ৷
প্রশ্ন : ১৯৯০ বিশ্বকাপে যে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা মুখোমুখি হয়, সেখানে তাহলে আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করেছেন?
সাব্বির : (হেসে) এটি ভিন্ন ব্যাপার ছিল৷ এক দিকে ব্রাজিল আমার প্রিয় দল, অন্য দিকে আর্জেন্টিনা প্রিয় দল ম্যারাডোনার জন্য৷ তাই খুব দ্বিধায় ছিলাম৷ তারপরও ভেতরে ভেতরে কেন জানি ম্যারাডোনাকে সমর্থন করেছিলাম৷
প্রশ্ন : খেলার ধরনের কারণে বাংলাদেশের মিডিয়া ও সমর্থকদের কাছে আপনার নাম হয়ে গিয়েছিল ‘বাংলার ম্যারাডোনা'৷ এটা আপনার জন্য কতোটা ভালো লাগার বিষয়?
সাব্বির : দারুণ৷ বাংলাদেশের জনগণ, ক্রীড়া সাংবাদিক, সমর্থক, ফুটবলপ্রেমী সবাই মিলে আমাকে এই সম্মান দিয়েছেন৷ এই নামটি দিয়ে তাঁরা আমার সম্মান অনেক বাড়িয়ে দিয়েছেন৷ এ জন্য আমি গর্বিত এবং সবাইকে ধন্যবাদ জানাই৷ হয়তোবা আমার ভেতরে ম্যারাডোনার খেলার কোনো ছাপ পেয়েছেন৷ ম্যারাডোনা পুরো মাঠ জুড়ে খেলতেন৷ যেখানে বল, সেখানেই ম্যারাডোনা৷ তিনি মাঠে নেতৃত্ব দিতেন; গেম মেকার ছিলেন৷ এটি আমি অনুসরণ করতাম৷ আক্রমণমণভাগের বাঁয়ে, ডানে, স্ট্রাইকিং পজিশনে সব জায়গায় খেলার চেষ্টা করতাম৷ ম্যারাডোনাকে দেখেই তা শিখেছি৷
প্রশ্ন : ‘বাংলার ম্যারাডোনা' নামটি প্রথম কিভাবে হয়েছিল, মনে আছে?
সাব্বির : ঠিক খেয়াল নেই৷ তবে পত্রিকায় এসেছিল৷ ক্রীড়াজগত কিংবা ক্রীড়ালোকের হতে পারে৷ আর গ্যালারি পতাকার মধ্যে মোহামেডান সমর্থকরা তা লিখে এনেছিল৷
প্রশ্ন : খেলা ছাড়ার এত বছর পরও যে ম্যারাডোনার সঙ্গে আপনার নাম জুড়ে আছে, পুরনো দিনের দর্শকরা বলেন ‘বাংলার ম্যারাডোনা'--- এটি আপনাকে কতোটা গর্বিত করে?
সাব্বির : অবশ্যই এটি আনন্দের বিষয়৷ আমাকে সম্মানিত করেছে আমার নামের সঙ্গে ম্যারাডোনার নাম সংযুক্ত করে৷ যদিও ম্যারাডোনা অনেক অনেক উপরের মানের ফুটবলার৷ সে তুলনায় আমি বাংলাদেশের অতি নগণ্য একজন ফুটবলার৷ উনি বিশ্বের সেরা ফুটবলার; এক নম্বর ফুটবলার৷ তাঁর সঙ্গে আমার নাম জুড়ে দেয়া অনেক গর্বের৷ আমাকে এ সম্মান দিয়েছেন সাংবাদিক-সমর্থকেরা। তাঁদের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ৷
প্রশ্ন : মাঠের বাইরে ম্যারাডোনার নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ছিল৷ তাঁর সে অংশটাকে কিভাবে দেখেন?
সাব্বির : ম্যারাডোনা ক্রেজি ফুটবলার৷ দুর্ভাগ্য হল, ইতালিতে গিয়ে তাঁর সঙ্গটা খারাপ হয়ে যায়৷ সে কারণে জীবনটা বদলে যায়৷ আমার কাছে মনে হয়, ম্যারাডোনা সবসময় ব্যতিক্রম কিছু করার চেষ্টা করতেন৷ নিজে যেটি ভালো মনে করতেন, সেটিই করতেন৷ কে কী বলল না বলল, তা পাত্তা দিতেন না৷ বিতর্কিত এমন অনেক কিছু করেছেন, যা অন্য কেউ করবেন না৷ ড্রাগসের চক্রে পড়ে যান৷ নইলে তাঁর জীবনটা অন্য রকম হতে পারে৷ আসলে এ সব কিছু মিলিয়েই ম্যারাডোনা৷ তিনি যে ফুটবল ও আর্জেন্টিনা দলকে কেমন ভালোবাসেন, সেটি কয়েকটি বিশ্বকাপে দেখেছি৷ মানুষকে বিনোদন দেয়া তাঁর শোঅফ সবাইকে আকর্ষণ করে৷ মনে হয়, ফুটবলের জন্যই জন্মেছেন ম্যারাডোনা৷
প্রশ্ন : ফুটবল বদলেছে৷ এখন মেসি-রোনালদোর মতো খেলোয়াড় এসেছেন৷ সামনে হয়তো আরো আসবেন৷ কিন্তু সব মিলিয়ে আরেকজন ডিয়েগো ম্যারাডোনা কখনো আসবেন বলে মনে করেন?
ম্যারাডোনা; এখনও তো দেখা যাচ্ছে না৷ মেসির মধ্যে কিছুটা দেখেছি জনপ্রিয়তা বা রেকর্ডে৷ কিন্তু ম্যারাডোনার মতো ফুটবলার আবার কবে আসবে, সন্দেহ৷ উনি ব্যতিক্রমী এক ফুটবলার৷ অমন কাউকে পাওয়া মুশকিল৷