বাংলাদেশে সার্ফিং ও তার সম্ভাবনা
নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের জন্য বিখ্যাত দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পর্যটন শহর কক্সবাজার সার্ফিংয়ের জন্যও বেশ উপযুক্ত৷ সেখানে আজকাল প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বেশ কয়েকজন সার্ফার৷ তাদের মধ্যে মেয়েরাও রয়েছে৷ ছবিঘরে থাকছে সেসব কথা৷
প্রথম জাতীয় প্রতিযোগিতা
২০১৫ সালের এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে দু’দিনব্যাপী জাতীয় সার্ফিং প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়৷ এতে ১০ জন মেয়ে সহ ৭০ জন সার্ফার অংশ নেয়৷
আগের কথা
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংস্থা ‘সার্ফিং দ্য নেশনস’-এর কর্মীরা ২০০৩ সালে প্রথম বাংলাদেশে যান৷ এর দুই বছর পর তাদের উদ্যোগে কক্সবাজারে সার্ফিং প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়৷ এরপর বিভিন্নভাবে তারা স্থানীয় সার্ফারদের প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা দিয়ে এসেছে৷ এরই ধারাবাহিকতায় এপ্রিলে প্রথম জাতীয় সার্ফিং প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়৷
ইতিবাচক ধারা
সার্ফিংকে এগিয়ে নিতে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সার্ফিং অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হয়েছে৷ আন্তর্জাতিক সার্ফিং সংস্থার সদস্যপদও পেয়েছে তারা৷ সার্ফিং প্রতিযোগিতা আয়োজনে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন ও ব্র্যাকের একটি সহযোগী সংস্থা৷ ছবিতে সার্ফার জাফর আলমকে দেখা যাচ্ছে৷
পর্যটনকে এগিয়ে নেয়া
সার্ফিং ভক্ত গায়ক ও অভিনেতা তাহসান মনে করেন, সার্ফিংয়ের মাধ্যমে কক্সবাজারকে বিশ্ব দরবারে আরও ইতিবাচকভাবে তুলে ধরা সম্ভব৷ প্রথম জাতীয় সার্ফিং প্রতিযোগিতা শুরুর আগে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘সার্ফিং এমন একটা বিষয় যেটা খুবই আকর্ষণীয় ও রোমাঞ্চকর৷ তাই অনেক মানুষ এই খেলা দেখতে আসে৷ তাই এটার মাধ্যমে আমরা কক্সবাজারকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে পারি৷’’
মেয়েদের মধ্যে প্রথম
জাতীয় সার্ফিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে মেয়েদের মধ্যে প্রথম হয়েছে ১২ বছরের রিপা৷ বছর দুয়েক আগে সমুদ্রসৈকতের ধারে পানির বোতল, চিপস আর ঝিনুকের মালা বিক্রি করত সে৷ এখন সার্ফিং করে পরিবারকেও সহায়তা করছে রিপা৷
রানার আপ
মেয়েদের মধ্যে রানার আপ হয়েছে ১৩ বছরের শবে মেহেরাজ৷ উত্তাল সমুদ্রে ভেসে বেড়াতে সে-ও খুব ভালোবাসে৷
প্রশিক্ষকের কথা
ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে রিপা ‘কক্সবাজার লাইফ সেভিং সার্ফিং ক্লাব’-এর দুই প্রশিক্ষক শিফাত ও রাশেদের (ছবিতে ডানপাশে) কথা জানান৷ রাশেদ আলম ঐ ক্লাবের সভাপতি৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মেয়েরা সমুদ্রসৈকতে কাজ করত৷ তারা পানি, চিপস এবং ডিম বিক্রি করত৷ তাদেরই আমরা সার্ফিংয়ে আসার জন্য উৎসাহিত করলাম৷’’
ছিল বাধা
প্রশিক্ষক শিফাত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মেয়েদের সার্ফিংয়ে আনা সহজ ছিল না৷ এখনও ধরে রাখা কঠিন৷ অ্যামেরিকার এলিয়ান্ট নামে এক নারীর অনুদানে এখনো আমরা কয়েকটি মেয়েকে ধরে রাখতে পেরেছি৷ উনি আমাদের অনুদান পাঠান৷ আর সেই টাকা থেকেই আমরা প্রতিটি মেয়েকে মাসে আড়াই হাজার টাকা করে দেই৷ পাশাপাশি পোশাক ও বোটগুলো দেয়া হচ্ছে সেই অনুদানের টাকাতেই৷’’
অনুদান বন্ধ হয়ে গেলে?
বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন শিফাত৷ তিনি বলেন, ‘‘গরিব পরিবারের এই মেয়েদের বয়স একটু বাড়লেই পরিবার থেকে বিয়ে দিয়ে দেয়া হয়৷ ফলে নতুন নতুন কিশোরীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এখানে আনতে হচ্ছে৷ আগাগোড়া মেয়েদের ধরে রাখাটাই বড় চ্যালেঞ্জ৷’’
স্বাধীন হয়ে উঠবে মেয়েরা
রাশেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মেয়েরা স্কেটিং করছে, সার্ফিং করছে, শিখছে৷ তারা নিজেদের জীবন নিজেরাই রক্ষা করছে৷ আমার বিশ্বাস, তাদের এই প্রচেষ্টা তাদের পরিবারের স্বপ্নেও একদিন পরিবর্তন ঘটাবে৷ অভিভাবকরা তাদের মেয়েদের নিয়ে কিছু একটা করার স্বপ্ন দেখবেন৷ আর মেয়েরা পরিবারে স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে৷’’