1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে জঙ্গি গুরুর ফাঁসি

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১২ এপ্রিল ২০১৭

বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতার গুরু এবং প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত হরকাতুল জিহাদের (হুজি) নেতা মুফতি হান্নানসহ তিনজন জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর হয়েছে৷ অন্য দু'জন হলো হুজি সদস্য শরিফ শাহেদুল আলম বিপুল এবং দেলোয়ার হোসেন রিপন৷

https://p.dw.com/p/2b94H
Bangladesch Mufti Abdul Hannan 2014
ছবি: Getty Images/AFP/Str

১৩ বছর আগে সিলেটে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার মামলায় বুধবার রাত ১০টায় ঢাকার অদূরে কাসিমপুর কারাগারে মুফতি হান্নান এবং ও শরিফ শাহেদুল আলম বিপুলের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়৷ প্রায় একই সময়ে রাত ১০টা ১ মিনিটে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে কার্যকর করা হয় হুজি সদস্য দেলোয়ার হোসেন রিপনের ফাঁসি৷ কাসিমপুর কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মিজানুর রহমান এবং সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সগীর মিয়া আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং-এ সংবাদমাধ্যমকে ফাঁসি কার্যকর হওয়ার তথ্য জানান৷ আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার উদ্দিন আহমেদও সংবাদমাধ্যমকে একই সময়ে তিনজনের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার কথা ঘোষণা করেন৷

২০০৪ সালের ২১শে মে বাংলাদেশে ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর সিলেট হজরত শাহজালাল (রহ.)-মাজরের হামলা হয়৷ ঐ দিন মাজারের মসজিদ থেকে জুমার নামাজ শেষে বের হওয়ার পর সেই হামলার ঘটনা ঘটে৷ হামলায় তিনজন নিহত হন৷ গুরুতর আহত হন আনোয়ার চৌধুরীসহ ৭০ জন৷ এই মামলায় ২০০৮ সালের ২৩শে ডিসেম্বর সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল হুজি নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, হুজির সদস্য শরীফ শাহেদুল আলম বিপুল ও দেলোয়ার হোসেন রিপন মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়৷ অন্য দুই আসামি মুফতি হান্নানের ভাই মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি ও মুফতি মঈন উদ্দিন ওরফে আবু জান্দালের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেয় আদালত৷ এরপর হাইকোর্ট এবং আপীল বিভাগেও মুফতি হান্নানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ বহাল থাকে৷  আপিল বিভাগের রায়ের পর রিভিউ আবেদনও করা হয়েছিল৷ কিন্তু গত ২২শে মার্চ সেই রিভিউ আদেশেও মুফতি হান্নানসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়৷ এমনকি রাষ্ট্রপতির কাছে তার প্রাণভিক্ষার আবেদনও নাকোচ হয় ৮ই এপ্রিল৷

২০০১ সালের ১৪ই এপ্রিল, অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানেরমনার বটমূলে হামলার ঘটনাতেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় মুফতি হান্নানকে৷ তবে রমনা বটমূলের মামলার এখনো চূড়ান্ত না হওয়ায় আনোয়ার চৌধুরীর মামলায় তার ফাঁসি কার্যকর করা হলো৷

মুফতি হান্নানের বিরুদ্ধে যত মামলা

এ দু'টি মামলা ছাড়াও আরও ১৫টি জঙ্গি হামলার মামলা ছিল হান্নানের বিরুদ্ধে৷ এর মধ্যে ২০০০ সালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাস্থলের কাছে বোমা রেখে তাকে হত্যার চেষ্টাও ছিল৷ এরপর ঘটে ২০০১ সালে রমনা বটমূলে বোমা হামলা, ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে শেখ হাসিনার সমাবেশস্থলে গ্রেনেড হামলা৷ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ-এর সমাবেশে ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার টার্গেট ছিল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বা সেই সময়ের বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যা করা৷ শেখ হাসিনা আহত হলেও প্রাণে বেঁচে যান৷ কিন্তু ঐ হামলায় আওয়ামী লীগের ২৪ জন নেতা-কর্মী নিহত হন৷ ২০০৫ সালে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া হত্যার সঙ্গেও জড়িত ছিল এই মুফতি হান্নান৷

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুকে আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মুফতি হান্নানের বিরুদ্ধে আরো মামলা থাকলেও, তার ফাঁসি কার্যকরে কোনো বাধা ছিল না৷ কারণ এই মামলার চূড়ান্ত রায়ে তার মৃত্যুদণ্ড হয়েছে, যা দেশের সর্বোচ্চ দণ্ড৷ সর্বোচ্চ দণ্ড কার্যকর করাই নিয়ম৷''

হরকাতুল জিহাদের প্রতিষ্ঠাতা

মুফতি হান্নান ছিল বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি) প্রতিষ্ঠাতা৷ তার বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ গ্রামে৷ সে একজন আফগানিস্তান থেকে ফেরত আসা ‘মুজাহিদ'৷ আফগানিস্তানে বসেই মুফতি হান্নান এবং তার অনুসারীরা  হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশ গঠন করে৷ নব্বইয়ের দশকে তারা বাংলাদেশে তৎপরতা শুরু করে৷ ২০০০ সালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাস্থলের কাছে বোমা রেখে তাঁকে হত্যার পরিকল্পনার ঘটনায় মুফতি হান্নানের নাম প্রথম আলোচনায় আসে৷

জেনারেল আব্দুর রশীদ

মুফতি হান্নানের ফাঁসি প্রসঙ্গে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল আব্দুর রশীদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর হওয়া খুবই তাৎপর্যপূর্ণ৷ আফগানিস্তান ফেরৎ মুজাহিদ হিসেবে সে-ই প্রথম বাংলাদেশে হরকাতুল জিহাদ প্রতিষ্ঠা করে জঙ্গিবাদকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়৷ তবে সে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাও পেয়েছিল৷ তাই অনেক হামলার সঙ্গে সে জড়িত থাকলেও, তাকে প্রথমদিকে আটক বা বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি৷ কেউ কেউ ধারণা করেছিল, মুফতি হান্নান ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে৷''

তিনি বলেন, ‘‘মুফতি হান্নান অনেক জঙ্গি এবং জঙ্গি গ্রুপের ‘আইডল' ছিল৷ তাই তার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার মাধ্যমে তাদের কাছে একটা বার্তা যাবে৷ তারা বুঝতে পারবে যে, ইসলামের নামে মানুষ হত্যা করে শেষ পর্যন্ত রেহাই পাওয়া যায় না৷''

১০ জঙ্গির ফাঁসি

আরেক জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) দুই নেতা শায়খ আব্দুর রহমান ও বাংলা ভাইয়ের ফাঁসির পর, বাংলাদেশে কোনো শীর্ষ জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর হলো৷ অর্থাৎ বুধবার রাতে মুফতি হান্নানসহ তিনজনের ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে ২০০৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১০ জন জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর করা হলো বাংলাদেশে৷

২০০৫ সালে ঝালকাঠিতে বোমা হামলা চালিয়ে দুই বিচারক হত্যার মামলায় ২০০৭ সালের ২৯শে মার্চ জেএমবি-র শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলাভাই, আব্দুর রহমানের ভাই আতাউর রহমান সানি, জামাতা আবদুল আউয়াল, ইফতেখার হোসেন মামুন ও খালেদ সাইফুল্লাহ ওরফে ফারুকের ফাঁসি কার্যকর হয়৷ ঐ একই মামলায় পলাতক জেএমবি জঙ্গি আরিফ পরে আটক হলে, তার ফাঁসি কর্যকর হয় গত বছরের ১৬ই অক্টোবর৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য