1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে ইভ টিজিং’এর ঘটনা নিয়ে দুশ্চিন্তা

২১ জুলাই ২০১০

আলেয়ার অপরাধ একটিই৷ বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া৷ আর তাই যে ছেলেটি তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলো সেই পেট্রোল ঢেলে দিয়াশলাই দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় তার শরীরে৷ অষ্টাদশী আলেয়ার শরীরের ৭০ ভাগই আগুনে পুড়ে যায়৷

https://p.dw.com/p/OQcV
কতটা নিরাপদ নারীর জীবন?ছবি: picture-alliance/dpa

ছয়দিন নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকার পর মারা যায় বাংলাদেশী এই কিশোরী৷ এভাবেই নিপীড়ন করে বাংলাদেশের অনেক মেয়েকে হত্যা করা হয় বা আত্মহত্যা করার জন্য প্ররোচনা করা হয়৷ আলেয়ার খালা যিনি এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘‘আলেয়ার সারা শরীর আগুন জ্বলতে থাকে৷ সে এদিক থেকে ওদিক ছুটতে থাকে আগুন নেভানোর জন্য৷ কিন্তু পারেনা৷ তার মুখ ছাড়া সমস্ত শরীরই পুড়ে যায়৷''

তিনি আরও বলেন, এপ্রিল মাসে ওই ছেলেটি তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলো আর মে মাসেই আলেয়াকে মরে যেতে হলো৷ তিনি বলতে থাকেন, যদিও আমরা সবাই ছিলাম তারপরও ওই ছেলেটিকে নিয়ে সে আতংকে থাকতো৷ প্রথমদিকে আমরা পুলিশের কাছেও যাইনি কারণ ছেলেটি আমাদের হুমকি দিয়েছিলো যাতে আমরা পুলিশকে খবর না দেই৷ যখন আলেয়া তাকে বলেছিলো সে তাকে বিয়ে করতে চায়না, সে বলেছিলো ‘‘তুমি যাতে অন্য আর কাউকে বিয়ে করতে না পারো সে ব্যবস্থাই করবো৷''

স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্য অনুসারে, এ বছর কমপক্ষে ২২ জন কিশোরী আত্মহত্যা করেছে৷ যৌন হয়রানি দক্ষিণ এশিয়ায় ইভ টিজিং নামেই পরিচিত যা বাংলাদেশের মেয়েদের নিত্যদিনের সঙ্গী৷

বাংলাদেশের নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রী শিরিন শারমিন চৌধুরী বার্তা সংস্থা এএফপি কে বলেছেন, সম্প্রতি আমরা এমন অনেক ইভ টিজিং দেখছি যা কিশোরীদের আত্মহত্যা করতে প্ররোচিত করছে যে বিষয়টিতে সরকার খুবই সচেতন৷

ঢাকায় মেয়েদের শীর্ষ স্কুলগুলোতে সাদা পোশাকধারী পুলিশরা টহল দিচ্ছেন এবং নারী পুলিশ অফিসাররা ছদ্মবেশে দেশের বিভিন্ন স্কুল থেকে এবছরে ৫শ'রও বেশি ছেলেদের আটক করেছেন৷ কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিশোরীরা প্রকৃতপক্ষে এখনও এ থেকে রক্ষা পায়নি৷ গতানুগতিকভাবে নারীর প্রতি সহিংস আচরণ ও মনোভাব চলে আসছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যার বিচার হচ্ছেনা৷

স্থানীয় একটি মানবাধিকার সংগঠনের আইনজীবী নিনা গোস্বামী বলেন, ‘মেয়েরা নিপীড়নের শিকার হলে পরিবার ও সমাজ তাকে উল্টো দোষারোপ করে৷ মেয়েটিকে বলা হয়, তুমি আসলে বেশি হাসো৷ স্কুলে যাওয়ার সময় মাথা নিচু করে পথ চলবে৷ এএফপিকে তিনি আরও বলেন, এমনকী অনেক মেয়ে আছে যারা আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় যখন তারা খুব বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে ও তাদের বাবা-মাও তার কথাকে গুরুত্ব দেননা৷ বরং তাকে এর জন্য দায়ী করে৷ আবার কোনো অভিভাবক যদি মেয়ের কথা শোনেনও প্রমাণের অভাবে তারা তাকে সাহায্য করতে পারেননা৷

প্রায় ১৪ কোটি ৬০ লাখ মানুষ নিয়ে পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় মুসলিম প্রধান দেশ বাংলাদেশ৷ দেশটির নারী বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, লিঙ্গ বৈষম্য ভুলে একে অপরকে সম্মান করতে হবে৷ তবে তিনি বলেন, ‘‘আমি মনে করি দিনদিন এর উন্নতি হচ্ছে৷ মেয়েরা এখন বাইরে বেরিয়ে আসছে ও এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে৷'' তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের মেয়েরা এখন স্কুলে যাচ্ছে ও চাকরি করছে এবং যখনই তারা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে তারা বাইরে বেরিয়ে আসছে৷ আসলে ইভ টিজিং সবসময়ই ছিলো কিন্তু এর আগে এই বিষয়টি নিয়ে এতো রিপোর্ট আগে হয়নি৷''

এবিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম বলেন, ‘‘বাংলাদেশের বেশিরভাগ মেয়ে তাদের পরিবার থেকে খুব কম সম্মানই পায়া এবং ছেলেরা মেয়েদের সম্পর্কে এই ধারণা নিয়েই বড় হয় যে মেয়েরা মানুষ না, ভোগের বস্তু৷ তাই পরিবার থেকেই প্রথমে মেয়েদের মানুষ হিসেবে ভাবতে শেখাতে হবে৷''

প্রতিবেদন: জান্নাতুল ফেরদৌস

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন