বাংলা সংবাদপত্রের ২০০ বছর
২২ জুন ২০১৭তারিখটা ছিল ১৮১৮ সালের ২৩ মে৷ শ্রীরামপুরে ব্যাপটিস্ট মিশনারিরা প্রকাশ করলেন ‘সমাচার দর্পণ'৷ সেই প্রথম বাংলা ভাষায় প্রথম খবরের কাগজ৷ তবে দৈনিক নয়, সাপ্তাহিক৷ দাম ছিল চার আনা৷ কাগজের মালিক ও প্রকাশক হিসেবে নাম ছাপা হতো ‘ব্যাপটিস্ট মিশনারি সোসাইটি'-র৷ সম্পাদক ছিলেন জন ক্লার্ক মার্শম্যান৷ মুদ্রক শ্রীরামপুরের ব্যাপটিস্ট মিশন প্রেস৷ ১৮০০ সালে যে ছাপাখানার পত্তন করেছিলেন উইলিয়াম কেরি৷ পঞ্চানন কর্মকার নামে এক বাঙালি ঢালাই হরফের কারিগরের তৈরি বাংলা হরফ দিয়ে এখানেই ছাপানো হয়েছিল বাংলা বাইবেল, সংস্কৃত ব্যাকরণের বই৷
সমাচার দর্পণের আগে বাংলায় মাসিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে৷ নাম ‘দিগদর্শন'৷ সেটাও প্রকাশ করতেন এই ব্যাপটিস্ট মিশনারিরাই৷ সেই পত্রিকার পাঠকপ্রিয়তায় উৎসাহিত হয়েই বাংলায় খবরের কাগজ প্রকাশের উদ্যোগ নেন তাঁরা৷ সেই কাগজের ২০০ বছর হচ্ছে ২০১৮ সালে৷ একই সঙ্গে ২০০ বছরে পড়ছে ঐতিহাসিক শ্রীরামপুর কলেজ, যেখানে এখনও সযত্নে রাখা আছে দিগদর্শন এবং সমাচার দর্পণের কিছু সংখ্যা, সংরক্ষিত আছে মুদ্রণযন্ত্রটি, যাতে ওই দুটি কাগজ ছাপা হতো৷ জানালেন বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক এবং শ্রীরামপুরের বাসিন্দা মৃদুল দাশগুপ্ত৷
সমাচার দর্পণের ২০০ বছর পূর্তিকে স্মরণীয় করে রাখতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে কলকাতা প্রেস ক্লাব৷ ৩০ জুন কলকাতার রবীন্দ্র সদনে এই উপলক্ষ্যে একটি অনুষ্ঠান হবে, যাতে প্রধান অতিথি হবেন ভারতের বিদায়ী রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি৷ তবে শুধু রাষ্ট্রপতি হওয়ার সুবাদেই নয়, নিজে একজন নিবিষ্ট পাঠক এবং সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সোচ্চার সমর্থক প্রণব মুখার্জিই এই উদযাপনে যোগ্যতম অতিথি, এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই৷ সম্প্রতি এক বাংলা দৈনিকের ৬৪ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, গণতন্ত্রের যে স্তম্ভটি সবথেকে সুদৃঢ় থাকা উচিত, সেটি সংবাদমাধ্যম৷ যে পেশার মানুষদের সৈনিকের মতোই সজাগ, সতর্ক, সচেতন থাকা উচিত, সেটি সাংবাদিকতা৷
কলকাতা প্রেস ক্লাব এই উপলক্ষ্যে বাংলা সংবাদপত্র প্রকাশনার গত ২০০ বছরের বিকাশ ও বিবর্তন বিষয়ক লেখার একটি সংকলন প্রকাশ করবে, যে বইটিরও আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচন করবেন রাষ্ট্রপতি৷ একালের বিশিষ্ট বাঙালি সাংবাদিকেরা লিখবেন সেকালের সাংবাদিকতা নিয়ে, জানিয়েছেন কলকাতা প্রেস ক্লাবের বর্তমান সভাপতি, বরিষ্ঠ সাংবাদিক স্নেহাশিস শূর৷ কলকাতা, তথা বাংলার সাংবাদিকরা খুবই উৎসাহিত এবং উত্তেজিত, বাংলা সংবাদপত্রের দ্বিশতবর্ষপূর্তির এই ঐতিহাসিক ক্ষণের শরিক থাকতে পারবেন ভেবে৷