বরফের ওপর পর্শে-র চক্কর
২১ জুন ২০১৪চীনের উত্তরে তাপমাত্রা নামে মাইনাস ৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত৷ সেখানেই টেস্ট করা হচ্ছে পর্শে কোম্পানির স্নো ফোর্স ২০১৪৷ পর্শে এখানে তার নানা ধরনের ড্রাইভ পেশ করে থাকে৷ পর্শে ৯১১-র ইঞ্জিনটি পিছনে; বক্সটার মডেলের ইঞ্জিন মাঝখানে; কাইয়েন ও প্যানামেরার ইঞ্জিন সামনে৷ বরফের ওপর গাড়ি চালালে তবে বোঝা যায়, তফাতটা কোথায়৷
পর্শের স্নো ফোর্স ২০১৪-র ইনস্ট্রাক্টররা হলেন বরফের ওপর গাড়ি চালানোয় ওস্তাদ৷ বেইজিং-এর প্রায় এক হাজার কিলোমিটার উত্তরে ইয়ুন লং হ্রদ৷ শীতে হ্রদের জল জমে একটি বরফের উপত্যকায় পরিণত হয়৷ হবু খরিদ্দার ছাড়া সাংবাদিকদেরও এখানে আনা হয় পর্শের বিভিন্ন মডেলের কেরামতি দেখানোর জন্য৷
প্রথম পরীক্ষা হলো, ইঞ্জিন সামনে থাকলে কীভাবে বরফের ওপর ‘ড্রিফট' করতে হয়৷ অ্যাক্সিলারেটরে চাপ দিলে গাড়ির পিছন দিকটা ছটকে বেরিয়ে আসে, কাজেই উল্টোদিকে স্টিয়ারিং ঘোরাতে হবে৷ তবে গাড়ি নিরাপদে বাঁকের মধ্য দিয়ে চালাতে পারা যাবে৷ শুনলে সহজ বলে মনে হয়৷ পেশাদার চালক কিংবা ড্রিফট বিশেষজ্ঞদের পক্ষে হয়তো বা সহজই৷ চীনের এই বরফের প্রান্তরে গাড়ি পরীক্ষা করার সুবিধা হলো, এখানে কোনো বাঁধা রাস্তা কিংবা ডিভাইডার নেই, কাজেই কোথাও ধাক্কা লেগে গাড়ির রঙ চটে যাওয়ার আশঙ্কা নেই৷ আসল কথা হলো গাড়ি চালানোর মজা এবং নিজের ও গাড়ির ক্ষমতার সীমা চিনে নেওয়া৷ যেমন প্যানামেরা নিয়ে ড্রিফট করা সহজ এবং স্বভাবতই এখানে ইএসপি বা ইলেকট্রনিক স্টেবিলিটি প্রোগ্রাম কিংবা এএসআর বা অটোম্যাটিক স্টেবিলিটি কন্ট্রোল ব্যবহার করা হয় না৷
ড্রিফট করতে গেলে স্পোর্টপ্লাস বোতামটি টিপতে হয় আর যাবতীয় সহায়ক প্রণালী বন্ধ করে দিতে হয়৷ ৯১১ হলো পর্শের সুপার স্পোর্টসমডেল, এতে চড়ে ড্রিফট করার মজাই আলাদা৷ কিন্তু ড্রিফট করার সময় ৯১১-কে প্যানামেরা-র চেয়ে একটু অন্যভাবে চালাতে হয়, কেননা প্যানামেরার ইঞ্জিন সামনে, অথচ ৯১১-র ইঞ্জিন পিছনে – কাজেই ভারসাম্য আলাদা৷ নয়ত ড্রিফট করাটা খেলা না হয়ে দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে পারে৷
পর্শে ড্রাইভিং এক্সপেরিয়েন্স-এর ম্যানেজার আর্ন্ড স্টলমান বলেন, ‘‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভুল হয় গাড়ি বেশি জোরে চালানোর ফলে: রাস্তার অবস্থা বা আবহাওয়ার খেয়াল না করা; টায়ারের গ্রিপ সম্বন্ধে ভ্রান্ত ধারণার বশে বেশি স্পিডে বাঁক নেওয়া – যার ফলে আবার আন্ডারস্টিয়ারিং হয়ে অ্যাকসিডেন্ট হবার ভয় থাকে৷ এই সব কারণে আমরা খরিদ্দারকে ধাপে-ধাপে এ সব বিপদ এড়ানোর পদ্ধতি শেখাই৷''
বরফের উপর এই টেস্টে গাড়ির কোনো দুর্বলতা বা ভুলভ্রান্তি ধরা পড়ে না৷ শুধু জানা যায়, ইঞ্জিন সামনে বা পিছনে হওয়ার ফলে গাড়ির ওজন কীভাবে ভাগ হয়, গাড়ির চলা কিংবা ব্রেকিং-এর ওপর তার কী প্রভাব পড়ে৷
পাহাড়ের ঢালে পর্শে ক্যারেরা নিয়ে ব্রেক করার সমস্যা হলো তার রেয়ার হুইল ড্রাইভ৷ ইঞ্জিন পিছনে থাকায় গাড়ির পিছন দিকটা বেশি ওজন পায়৷ এটা সামলানোর উপায় হল ইএসপি ও এএসআর, সাধারণ অবস্থায় গাড়ি চালানোর সময় যা চালু রাখা অত্যাবশ্যক৷
সামনে ইঞ্জিন যুক্ত কাইয়েন সে তুলনায় শ্রেয়, কেননা তার ফ্রন্ট হুইল ড্রাইভ থাকার ফলে গাড়ি কন্ট্রোল করা সোজা৷ বাকি রইল বক্সটার ও কাইমান৷ ইঞ্জিন মাঝখানে, তাই নিয়েই আঁকাবাঁকা কোর্সে গাড়ি চালাতে হবে৷ এখানেই দেখা যাবে, ছোটখাটো স্পোর্টস কারটি দ্রুত দিক পরিবর্তন করতে পারে কিনা৷ মাকান ও কাইয়েন, দু'টি মডেলই ফ্রন্ট হুইল ড্রাইভ, দু'টিই বরফের উপর চমৎকার চলে৷
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সব ক'টি পর্শে বস্তুত স্পোর্টস কার এবং এ ধরনের চরম শীতেও তাদের মাঠে নামানো যায়৷ শুধু প্রত্যেকটি মডেলের চরিত্রগত বৈশিষ্ট্যটি বিস্মৃত হলে চলবে না৷