1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বন-এ নির্বাক চলচ্চিত্র উৎসব

২৫ আগস্ট ২০০৯

গত ১৩ থেকে ২৩ শে আগস্ট পর্যন্ত বন শহরের মুক্তাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হল ২৫তম আন্তর্জাতিক নির্বাক চলচ্চিত্র উৎসব৷ জার্মানিতে এই ধরণের একমাত্র উৎসব এটি৷

https://p.dw.com/p/JHJb
ফাইল ফটো

খোলা আকাশের নিচে বিশাল এক পর্দায় দর্শকরা উপভোগ করলেন পুরানো দিনের সুন্দর সুন্দর কিছু নির্বাক ছায়াছবি৷

১৮৯৫ সালে চলচ্চিত্র যখন যাত্রা শুরু করে, তখন তা ছিল নির্বাক৷ তিন দশক পরে ছবিতে যুক্ত হয় শব্দ৷ শোনা যায় সংলাপ৷ তবে সঙ্গীতের ঝংকার কিন্তু নির্বাক চলচ্চিত্রের যুগেও ছিল৷ ছবির কাহিনির সঙ্গে মিল রেখে পরিবেশিত হতো লাইভ সঙ্গীত৷ আজকাল সিনেমা হলে প্রদর্শিত নির্বাক চলচ্চিত্রগুলো সত্যি সত্যি বাকহীন৷ কিন্তু বনের চলচ্চিত্র উৎসবে মূলের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নির্বাক ছবিগুলির সঙ্গে লাইভ আবহসঙ্গীত ব্যবহার করা হয়েছে৷ ক্রিশ্টিয়ান রডারবুর্গ অনেক বছর ধরে নির্বাক ছবির সঙ্গে পারকাশান সংগত করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এই ধরণের ছায়াছবিতে সঙ্গীতের এক বড় ভূমিকা রয়েছে৷ ছবির কাহিনি ফুটিয়ে তুলতে সাহায্য করে সঙ্গীত৷ যেমন উত্তেজনাকর কোনো গোয়েন্দা ছবির শব্দ বন্ধ করে পরীক্ষা করে দেখা যায়৷ সংলাপের সঙ্গে সঙ্গে যদি সঙ্গীতও বন্ধ হয়ে যায় তাহলে দেখার দিক দিয়ে অনেকখানি আবেদন কমে যাবে ছবিটির৷''

রডারবুর্গ পারকাশান বাদক৷ নির্বাক ছবির সঙ্গে সাধারণত পিয়ানো বাজানো হয়৷ অল্প যে কজন শিল্পী ড্রাম জাতীয় বাদ্যযন্ত্র বাজান, তাদের মধ্যে রডারবুর্গ একজন৷ এবছরের নির্বাক চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি একটি অস্ট্রীয় ও একটি সুইডিশ ছবির সঙ্গে সঙ্গত করেছেন৷ পিয়ানো বাজিয়েছেন নির্বাক চলচ্চিত্রের সঙ্গে পিয়ানো সঙ্গীতে খ্যাত ইওয়াখিম ব্যারেস৷

বনের চলচ্চিত্র উৎসবে নির্বাক যুগের অনেক দুর্লভ ছবি প্রদর্শিত হয়েছে৷ হারিয়ে যাওয়া কিছু ছবিও আবিস্কৃত হয়েছে৷ অনেক ছবিকে আরকাইভ থেকে এনে ঠিকঠাক করে দেখানো হয়েছে৷ নামি ছবির চেয়ে অজানা ছবিকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছে উৎসবে৷

১৯২৭ সালে নির্মিত একটি মেক্সিকান ছায়াছবি স্থান পেয়েছে এবারকার নির্বাক চলচ্চিত্র উৎসবে৷ একটি জাপানি, একটি ক্রোয়েশীয় এমনকি দক্ষিণ কোরিয়ার একমাত্র টিকে থাকা ছবিটিও প্রদর্শিত হয়েছে উৎসবে৷ এছাড়া দেখানো হয়েছে আমেরিকান ছবি ‘জীবনের ভিখারি', ইউরোপীয় যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘ডেয়ার শ্প্রিং ইন্স গ্লুক'-‘সৌভাগ্যে ঝাঁপ দেয়া', জার্মান ছবি ‘ডি আবেন্টয়ার আইনেস সেনমার্কশাইন্স'- ‘একটি দশ মার্ক নোটের অ্যাডভেঞ্চার' ইত্যাদি৷ নির্বাক চলচ্চিত্রের এই উৎসবে অবশ্যই চার্লি চ্যাপলিনের হাস্যরসাত্মক ছবিও স্থান পেয়েছিল৷ যা দর্শকদের নির্মল আনন্দ দিয়েছে৷

মূক চলচ্চিত্র যে একঘেয়ে ও নিস্তব্ধ নয় তা বোঝা যায় এই চলচ্চিত্র উৎসবে এলে৷ সংলাপ ছাড়াই উত্তেজনা, আবেগ, হাস্যরস, ট্র্যাজেডি শুধু মাত্র ছবি ও সংগীতের মাধ্যমে পরিস্ফুট হয়ে ওঠে৷ আর নির্বাক ছায়াছবির আরেকটা সুবিধা হল, ভাষার বাধা না থাকায় সবাই উপভোগ করতে পারেন এই সব ছবি৷

পুরানো ছবির সঙ্গে বাদ্যযন্ত্রের সংগত কিভাবে সম্ভব, তা জানতে চাওয়া হলে রডারবুর্গ বলেন, ‘‘বিভিন্নভাবে তা করা যায়৷ ছবিটা আগে দেখে তারপর তার সঙ্গে মিল রেখে বাজানো যায়৷ অথবা ছবি চলার সময় তাৎক্ষনিকভাবে বাজিয়ে বাজিয়ে সুর সৃষ্টি করা যায়৷ লক্ষ্য রাখতে হয় দৃশ্যের সঙ্গে খাপ খাচ্ছে কিনা৷ আসলে সমস্তটাই পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যাপার, যেখানে কিছু নেয়া যায় কিছু বাদ দিতে হয়৷''

ইউরোপ ও আমেরিকার মত ভারতীয় উপমহাদেশেও নির্বাক চলচ্চিত্রের এক বিশাল ঐতিহ্য রয়েছে৷ ১৮৯৬ সালের ৭ই জুলাই যাত্রা শুরু হয় ভারতীয় চলচ্চিত্রের৷ যা ছিল তখন শব্দহীন৷ ১৮৯৮ সালে বাংলার হিরালাল সেন থিয়েটার থেকে সরাসরি ছবি তুলে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন৷ ১৯০১ সালে বিশেষ রাজনৈতিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রথম ভারতীয় প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয়৷ পাশাপাশি থিয়েটার থেকে তোলা ছায়াছবিও জনপ্রিয়তা পেতে থাকে৷ এই ধরণের ছবি নির্মাণে কোলকাতার ম্যাডান থিয়েটার কোম্পানি এগিয়ে আসে এবং অচিরেই ছড়িয়ে পড়ে তার নাম ডাক৷ নির্বাক চলচ্চিত্র যুগের শেষ অবধি শ্রীলংকা থেকে মায়ানমার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল ম্যাডান থিয়েটার নির্মিত ছায়াছবির খ্যাতি৷ ১৯১২ সালে প্রথম ভারতীয় কাহিনি চিত্র ‘রাজা হরিশচন্দ্র' নির্মিত হয়৷ যেটি ছিল থিয়েটার থেকে তোলা নয়, আসল চলচ্চিত্র৷

১৯২৫ থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত জার্মানি ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে নির্মিত কিছু নির্বাক ছায়াছবি চমক সৃষ্টি করেছিল চলচ্চিত্র জগতে৷ ডি লয়স্ঠট আজিয়েনস, ডাস গ্রাবমাল আইনার গ্রোসেন লিবে ইত্যাদি ছবিগুলি পরিচালনা করেন মিউনিখের ফ্রান্স ওস্টেন৷ প্রযোজনায় ছিলেন বাঙালি আইনজীবী ও সৌখিন অভিনেতা হিমাংশু রায়৷ এই ছবিগুলোর ভাগ্য ভাল বলতে হবে৷ ভারতে নির্মিত বারোশর ওপর মূক ছবির মধ্যে মাত্র ১০/১২টির অংশ বিশেষ টিকে আছে৷ বিদেশে আর্কাইভ করার কারণে ওই তিনটি ছবিও রয়েছে তার মধ্যে৷ ভারতের বাইরের বাজারের দিকে লক্ষ্য রেখে তৈরি হয়েছিল বলে, আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র মহলেও পরিচিতি পেয়েছে ছবিগুলো৷

প্রতিবেদক: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক