1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ফিলিপাইন্সে আবর্জনা থেকে প্রস্তুত হচ্ছে ফ্যাশনের বিভিন্ন উপকরণ

২১ জানুয়ারি ২০১০

সাত সন্তানের মা মাইলিন ভিরটুসিও৷ তার দিন শুরু হয় ম্যানিলার দুর্গন্ধময় আবর্জনার স্তূপের মধ্যে বিভিন্ন পরিত্যক্ত জিনিস খুঁজে বের করার মধ্য দিয়ে৷

https://p.dw.com/p/LcVZ
ফিলিপাইন্সে আবর্জনার স্তূপছবি: AP

ফেলে দেয়া জিনিস বিক্রি করে মাইলিন'এর যা আয় তা পর্যাপ্ত নয়৷ কিন্তু তার এ ছাড়া কোন উপায় নেই কারণ টনডোর নোংরা বস্তিতে তাকে সন্তানদের লালন-পালন করতে হয়৷

দশ বছরেরও বেশি হয়ে গেল ৩৯ বছর বয়সি মাইলিন আবর্জনা থেকে জিনিস খুঁজে বের করার কাজ করে যাচ্ছেন৷ তবে এখন তিনি আবর্জনার স্তূপ থেকে ফ্যাশনের বিভিন্ন উপকরণ, যার বিদেশে কাটতি ভাল, এমন জিনিস সংগ্রহ করে থাকেন৷

মাইলিন বলেন, তিনি এ কাজ করতে চাননি, কিন্তু করতে হচ্ছে৷ কারণ জীবন খুব কঠিন এবং তাদের অর্থ প্রয়োজন৷ তিনি আরও বলেন, এখন তিনি যা করছেন তা আগের থেকে অনেক ভাল৷ তার আয় এখন ভাল এবং কাজটাও মোটামুটি শোভন৷

প্লাস্টিক কুড়ানোর দিন শেষ

১৯৯৮ সাল থেকেই মাইলিন ফিলিপাইন্সের দাতব্য প্রতিষ্ঠান ‘খ্রিষ্টান ফাউন্ডেশন' পরিচালিত এক বৃত্তি প্রশিক্ষণ প্রকল্পে অংশ গ্রহণের পর থেকে ফেলে দেয়া বিভিন্ন ঝকমকে ম্যাগাজিনের পাতা দিয়ে নেকলেস, ব্রেসলেট এবং কানের দুল তৈরি করে থাকেন৷ এখন দিনে তার আয় ৬০০ পেসো যা কিনা ১৩ ডলারের সমান৷ আগের থেকে আয় ছয়গুণ বেশি৷ আগে তিনি বিভিন্ন ধাতু এবং প্লাস্টিক কুড়িয়ে বেড়াতেন৷

মাইলিন এখন তার আয়ের অর্থ দিয়ে একটি স্টিলের বিছানা, প্লাস্টিকের একটি পুরানো আলমারি, একটি টেলিভিশন এবং একটি বৈদ্যুতিক পাখা কিনেছেন৷ আর এ সব জিনিসে তার আট বর্গ মিটার দৈর্ঘ্যের ঘরটি ভরে উঠেছে৷ তাঁর ঘরখানা টনডোর আবর্জনা ফেলার জায়গাটার কাছে৷ বাইরের দুর্গন্ধকে উপেক্ষা করতে হয়৷ তবুও মাইলিন খুশি যে, এখন বিদ্যুতের সংযোগ নেয়ার সামর্থ্য রাখেন তিনি৷

‘উইনিং ওভার ওয়েস্ট' ব্র্যান্ড

দাতব্য প্রতিষ্ঠান ‘‘খ্রিষ্টান ফাউন্ডেশন''এর বৃত্তি শিক্ষা প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন বস্তি এলাকার ১২০ জন মা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন৷ ফাউন্ডেশনের নিজস্ব ব্র্যান্ড ‘উইনিং ওভার ওয়েস্ট' এর জন্য তাঁরা নানা জিনিস তৈরি করছেন৷ টিনের ক্যান খোলার রিং, টুথপেস্টের টিউব, কম্পিউটারের কি-র্বোড এবং প্লাসটিকের মোড়ক থেকে মেয়েদের ঝোলানো ব্যাগ, মানিব্যাগ, খুচরো পয়সার ব্যাগ, পেন্সিল এবং চশমার ফ্রেম তৈরি করা হয়ে থাকে৷ ঝকমকে ম্যাগাজিনের কাগজ কেটে ছোট ছোট গুটি বানানো হয় এবং সেগুলো রং-এ ডুবিয়ে ফ্যাশনের বিভিন্ন উপকরণ তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়৷

দাতব্য সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা জেন ওয়াকার বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠান আগে গহনাপত্র তৈরির জন্য কাচ ও মূল্যবান পাথর কিনত৷ কিন্তু বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার কারণে এখন তারা কম দামের কাঁচা মালের দিকে ঝুঁকেছেন৷ জেন ওয়াকার ব্রিটেনের মানুষ৷ তিনি বলছেন, এখন থেকে তারা তাদের পণ্যের জন্য মূলত পুন:প্রক্রিয়াজাত জিনিসপত্রই ব্যবহার করবে৷

প্রতিদিন সাত হাজার টন বর্জ্য

ম্যানিলা শহরে প্রতিদিন সাত হাজার টন আর্বজনা হয়, যা রাজধানী শহর এবং কাছাকাছি প্রাদেশিক এলাকাগুলোর বিভিন্ন খোলা মাঠে জড়ো করা হয়৷ টনডোয় ১০ হেক্টর জায়গায় ময়লা ফেলা হয়৷ ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ এর কাছে বাস করে এবং এই আবর্জনাই তাদের জীবিকার উৎস৷

আইলিনের ভালুকছানা...

আইলিন বালিনার বয়স ২০৷ অক্টোবরের প্রশিক্ষণের পর থেকে সে পুনর্ব্যবহারযোগ্য জিনিস থেকে টেডি বিয়ার ভালুককছানা সেলাই করে৷ সেলাই শিখবার আগে আইলিন এবং তার স্বামী ফেলে দেয়া কাঠ থেকে কয়লা তৈরি করত৷ সে জানায়, কাঠ কয়লা তৈরি করা অনেক কঠিন কাজ৷ সব সময় আগুনের সামনে থাকতে হয়৷ তাকে সবসময় সারা গায়ে ময়লা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হত এবং ধোঁয়ার গন্ধ করত কাপড়ে৷তাছাড়া আয়ের কোন স্থিরতা ছিল না৷ মাঝে মাঝে ভাল আয় হলেও বেশিরভাগ সময় তা যথেষ্ট হতনা৷ বালিনা জানায়, এখন তার বয়স কম, অনেক স্বপ্ন তার এখনও অপূর্ণ রয়েছে৷ টাকাপয়সা জমিয়ে একটা বাড়ি কেনার আশা লালন করছে সে মনে মনে৷

‘খ্রিষ্টান ফাউন্ডেশনের' প্রতিষ্ঠাতা জেন ওয়াকার বলেন, ‘উইনিং ওভার ওয়েস্ট' ব্যান্ডের জিনিস যুক্তরাজ্যে রপ্তানি হয়৷ নিউ ইর্য়ক এবং লসএঞ্জেলেস থেকেও অর্ডার আসছে৷ তাঁদের প্রকল্পের অধীনে তৈরি পণ্যের চাহিদা ইউরোপে অ্যামেরিকায় বাড়ছে৷ বস্তিবাসী পরিবারগুলোকে দরিদ্রদশা থেকে মুক্ত করার পথ প্রশস্ত হচ্ছে৷

প্রতিবেদন: আসফারা হক, সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক