প্রেসিডেন্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় দ. কোরিয়ায় বিক্ষোভ
১০ মার্চ ২০১৭শুক্রবার সৌলের পথে পথে ২০ হাজারের বেশি পুলিশ নিয়োগ করতে হয়৷ সাংবিধানিক আদালত প্রেসিডেন্ট পাক গুন-হে’কে বরখাস্তের সংসদীয় সিদ্ধান্ত বজায় রাখার পর রাজধানীতে পথবিক্ষোভে দু’জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷
সংসদীয় ভোটে পাক-কে একটি উৎকোচ কেলেঙ্কারির কারণে ‘ইমপিচ’ করার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, আটজন বিচারকের প্যানেল তা বজায় রেখেছেন৷ এর ফলে পাক-এর বিরুদ্ধে দায়রা মামলা করা সম্ভব হবে৷
অস্থায়ী চিফ জাস্টিস লি ইয়ুং-মি বলেছেন যে, পাক যেভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন, তা জনগণের আস্থা ভঙ্গ করার সমতুল৷ ‘‘বিবাদিকে বরখাস্ত করার মাধ্যমে সংবিধান রক্ষার যে পরিমাণ সুবিধা হবে, তা ব্যাপক,’’ বলে মন্তব্য করেছেন লি৷
সরকারি কৌঁসুলিরা ইতিমধ্যেই পাক-কে দায়রা আসামি হিসেবে অভিহিত করেছেন৷ আশির দশকের শেষে দক্ষিণ কোরিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়া যাবৎ পাক-ই প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধি, যাকে তাঁর পদ থেকে অপসারণ করা হলো৷ পাক-এর আস্থাভাজক চো সুন-সিল-এর বিরুদ্ধে স্যামসাং-এর মতো বড় কোম্পানিদের কাছ থেকে টাকা আদায় করার অভিযোগ ছিল৷
বিক্ষোভ
পাক-এর বেশ কয়েক হাজার সমর্থক সৌলের পথে পথে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হন, অপরদিকে সরকারি কর্মকর্তারা জনসাধারণের প্রতি শান্ত থাকার আবেদন করেন৷
সত্তরের কোঠায় বয়স, এমন এক বৃদ্ধ বিক্ষোভের সময় মাথায় চোট লেগে প্রাণ হারান৷ অপর নিহত বিক্ষোভকারী সম্পর্কে কোনো খুঁটিনাটি দেওয়া হয়নি৷
পাক-এর আইনজীবী সিও সিওক-গু ইতিপূর্বে পাক-এর অভিশংসনকে খ্রিষ্টের ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন৷ তিনি এবার আদালতের রায়কে জনতার চাপে নেওয়া একটি ‘‘ট্র্যাজিক সিদ্ধান্ত’’ বলে অভিহিত করেছেন এবং এই ‘‘ক্যাঙ্গারু আদালত’’-এর নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন৷
বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, দেশের ৭০ শতাংশ মানুষের কামনা ছিল যে, আদালত পাক-এর অভিশংসন অনুমোদন করুন৷ ইতিপূর্বে লক্ষ লক্ষ আন্দোলনকারী সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে পাক-কে ‘ইমপিচ’ করার দাবি জানিয়ে এসেছেন৷
উত্তর কোরিয়ার প্ররোচনা
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সামরিক বাহিনীকে উত্তর কোরিয়ার তরফ থেকে সম্ভাব্য প্ররোচনার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেছেন, কেননা উত্তর কোরিয়া ‘‘দেশে ও বিদেশে স্থিতিহীন পরিস্থিতির’’ সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করতে পারে৷
শুক্রবার সামরিক অধিনায়কদের সঙ্গে একটি ভিডিও বৈঠকে হান মিন কু সাবধান করে দেন যে, উত্তর কোরিয়া যে কোনো সময়ে ‘‘রণকৌশলগত বা অভিযানমূলক’’ প্ররোচনায় লিপ্ত হতে পারে৷ সম্প্রতি উত্তর কোরিয়া একাধিকবার রকেট পরীক্ষা করেছে৷
আদালতের রায় সম্পর্কে উত্তর কোরিয়ার মন্তব্য হলো, পাক-এর বিরুদ্ধে এবার ‘‘সাধারণ অপরাধী’’ হিসেবে তদন্ত করা হবে৷
প্রতিক্রিয়া
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা আদালতের সিদ্ধান্তকে দক্ষিণ কোরিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিষয় বলে অভিহিত করেছেন৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও বিষয়টি অভ্যন্তরীণ, তবে উভয় দেশের মৈত্রী পূর্বাপর ‘‘আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার’’ ‘লিঞ্চপিন’ হিসেবে গণ্য হবে, বলেছেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র মার্ক টোনার৷
সরকারকে আগামী দু’মাসের মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে৷ প্রধানমন্ত্রী হোয়াং কিও-আন স্বয়ং রক্ষণশীল প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন৷ সাম্প্রতিক জরিপে উদারপন্থি মুন জে-ইন'কে এগিয়ে থাকতে দেখা গেছে৷
এসি/ডিজি (এএফপি, এপি, রয়টার্স, ডিপিএ)