1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রবাসী স্বামীদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের শিকার হচ্ছেন ভারতের বহু নারী

২৯ ডিসেম্বর ২০১০

ভেলভেটে মোড়া অ্যালবামে বিয়ের ছবি আর আর দুটি অব্যবহৃত ট্রেনের টিকিট৷ পাঞ্জাবের গাঁয়ের মেয়ে আমানজ্যোত কাউরের এই হল বিয়ের স্মৃতি৷ কেন?

https://p.dw.com/p/zquA
ভারতীয় নারীছবি: AP

দু'বছর আগের কথা৷ ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের ছোট্ট একটি গ্রাম বিলগাতে অনুষ্ঠিত হলো অত্যন্ত জাঁকজমক ভরা এক বিয়ের অনুষ্ঠান৷ পাত্র ক্যানাডার মন্ট্রিয়ালে প্রবাসী৷ আর বিয়ের কনে ঐ গ্রামেরই আমানজ্যোত কাউর৷ বিয়ের মাত্র এক সপ্তাহ পরেই প্রবাসী পাত্র ফিরে যায় ক্যানাডায়৷ দিয়ে যায় নববধূর ভিসার জন্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠাবার প্রতিশ্রুতি৷ কিন্তু দুই বছরের মধ্যে সেই কাগজপত্র আর স্ত্রীর কাছে পৌঁছায়নি৷ শুধু তাই না, কনের পরিবারের সদস্যরা প্রবাসী জামাই'এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে স্বামী স্রেফ তার বিবাহিত স্ত্রীকেই অস্বীকার করে বসে৷

মাত্র দু' বছর আগে বিবাহিত ২২ বছরের এই তরুণী এখন এক ভয়াবহ হতাশায় ভুগছেন৷ কাউর বলেন, ‘‘আমি তাকে ১২০টি চিঠি লিখেছি৷ তার সাথে যোগাযোগের জন্যে প্রায় ৫শ বার ক্যানাডায় ফোন করেছি৷ কিছুই তার মন গলাতে পারেনি৷'' তিনি বলেন, ‘‘এইরকম একটা সংবেদনহীন লোককে ভালোবাসার জন্য আমার নিজের ওপরেই ঘেন্না ধরেছে৷ সে আমাকে, আমার পরিবারকে প্রতারণা করেছে৷'' জাঁকজমকের ঐ বিয়ের ব্যবস্থা করতে কাউর'এর বাবাকে চার একর কৃষিজমি বিক্রি করতে হয়েছিল৷

কিন্তু শুধু কাউর নন৷ প্রবাসী স্বামীদের দ্বারা পরিত্যক্ত এইরকম হাজার হাজার স্ত্রী আছেন ভারতে৷ প্রবাসী ঐসব ভারতীয়রা দেশে ফেরেন দ্রুত বিয়ে করতে, বিয়ে করেন এবং সঙ্গে যৌতুকের প্রচুর অর্থ নিয়ে ফিরে যান বিদেশে৷ আর তার পরের গল্প তো সকলেরই জানা৷

লোক ভালাই পার্টি নামে পাঞ্জাবের একটি ছোট রাজনৈতিক সংস্থা জানিয়েছে, এরকম ২২ হাজারেরও বেশি পরিত্যক্ত স্ত্রী তাদের এনআরআই অর্থাৎ অনাবাসী ভারতীয় স্বামীদের নামে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছে৷ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা বি. রামুওয়ালিয়া বলেন, গত দশ বছরে তিনি ১,২০০ পরিত্যক্ত স্ত্রীকে তাদের স্বামীদের খুঁজে বের করতে সহায়তা করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এইসব লোকের জন্যে অর্থ পাবার সবচেয়ে সহজ উপায় বিয়ে করা৷ এরা বিয়ে করে যৌতুক পেতে৷ যৌতুক হাতে পাবার পর থেকেই যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশ ছেড়ে চলে যাবার পথ খোঁজে৷''

যদিও ১৯৬১ সাল থেকে ভারতে যৌতুক দেওয়া এবং নেওয়া অবৈধ, কিন্তু উপহার হিসেবে কনের বাবা-মায়ের পক্ষ থেকে জামাই'এর পরিবারকে নগদ অর্থ, দামি পোশাক, আসবাবপত্র এবং গহনা দেওয়া শত শত বছরের প্রচীন অলিখিত প্রথা৷ এবং তা এখনও সমাজে শক্তভাবেই জেঁকে বসে আছে৷

কাউর'এর স্বামীকে কতো যৌতুক দেওয়া হয়েছিল তা জানাতে কাউর অস্বীকার করলেও, তা যে কয়েক হাজার ডলারের নীচে হবে না, সেকথা বলাই বাহুল্য৷

প্রতিবেদন: ফাহমিদা সুলতানা

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক