ট্রাম্পের ‘হিজড়া নিষেধাজ্ঞা’
২৭ জুলাই ২০১৭আবারো টুইটার৷ আবারো নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের ঘোষণা৷ এমন কাজে এরই মধ্যে নিজেকে ব্র্যান্ডিং করে ফেলা একমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এবারের ঘোষণা এল তৃতীয় লিঙ্গের ওপর মিলিটারিতে কাজ করার নিষেধাজ্ঞা দিয়ে৷
পরপর তিনটি টুইটে গেল বছর সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার তৃতীয় লিঙ্গের সবার জন্য সব কাজ উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেন ট্রাম্প৷ এঁদের পেছনে প্রচুর চিকিৎসা খরচ এবং এর ফলে কাজে ব্যাঘাত ঘটার আশঙ্কা থেকেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷
সিদ্ধান্তটি তিনি এমন সময় নিলেন যখন পেন্টাগন প্রধান জেমস ম্যাটিস ছুটিতে রয়েছেন৷ কিন্তু গত বছর করা মার্কিন থিংক ট্যাংক ব়্যান্ড কর্পোরেশনের গবেষণার ফলাফলের সঙ্গে মিলছে না ট্রাম্পের যুক্তি৷
‘‘আমি প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোন কথা বলছি না৷'' বলছিলেন ব়্যান্ড কর্পোরেশনের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ রাধা ইয়েনগার৷ ‘‘কিন্তু যে পরিমাণ খরচের কথা বলা হচ্ছে, সেটি আমাদের তথ্যের সঙ্গে মিলছে না৷ আমাদের হিসেবে এই খরচ মিলিটারিতে মোট চিকিৎসা খরচের এক শতাংশের দশ ভাগের এক ভাগ, যা খুবই নগণ্য৷''
ওয়াশিংটন পোস্টের এক ব্লগার লিখেছেন যে, শুধু ধ্বজভঙ্গ রোগের চিকিৎসাতেই মার্কিন মিলিটারি বছরে যা খরচ করছে, তার সর্বোচ্চ দশ ভাগের এক ভাগ খরচ হবে মিলিটারির হিজড়াদের চিকিৎসায়৷
ব়্যান্ডের হিসেবে, সর্বোচ্চ ৬,৬৩০ জন হিজড়া কাজ করেন দেশটির মিলিটারিতে৷ শুধু তাই নয়, যেসব দেশে হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ মিলিটারিতে কাজ করে, যেমন, অস্ট্রেলিয়া, ক্যানাডা, ব্রিটেন ও ইসরায়েল, সেসব দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করেও ব়্যান্ড দেখিয়েছে যে, এঁদের কারণে মিলিটারির কাজে বা শৃঙ্খলায় কোন সমস্যা হয়নি৷
যদি অর্থ এবং কাজে ব্যাঘাত ঘটা আসল কারণ না হয়, তাহলে কী কারণে ট্রাম্পের এমন সিদ্ধান্ত? নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্যাট্রিক এগানের মতে, ‘‘ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সসহ ট্রাম্প প্রশাসনের রক্ষণশীলদের মন রাখতেই এমন সিদ্ধান্ত৷''
পেন্স গত মাসেই তৃতীয় লিঙ্গের কর্মচারীদের সরকারি চিকিৎসার খরচ বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন যা প্রতিনিধি পরিষদে খুব অল্প ব্যবধানে হলেও শেষ পর্যন্ত টেকেনি৷
তবে অতি রক্ষণশীলদের মন রক্ষা করা গেলেও ট্রাম্প এই সিদ্ধান্তে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে৷ এলজিবিটি ও এঁদের সমর্থক গোষ্ঠী ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে ব্যাপক অসন্তোষ প্রকাশ করেছে৷ ট্রাম্প, যিনি কিনা নির্বাচনি প্রচারণার সময় এলজিবিটি অধিকার সুরক্ষাকারী প্রথম রিপাবলিকান প্রার্থী হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করেছিলেন, তার এমন উলটোরূপ ভীষণ ক্ষুব্ধ করেছে তাঁদের৷
এলজিবিটি অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন সংগঠনগুলো বিবৃতি দিয়ে বলেছে যে, আজ ট্রাম্প প্রমাণ করলেন তিনি দেশপ্রেমিক নন এবং কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালনে তাঁর কোনো যোগ্যতা নেই৷
এমন একটি সিদ্ধান্ত টুইটারে ঘোষণা দেয়ায় বিরক্ত হয়েছেন সিনেটর জন ম্যাক কেইনও৷ তৃতীয় লিঙ্গের যাঁরা এখন মিলিটারিতে কাজ করছেন তাদের ছাটাই করার কোনো সিদ্ধান্ত যেন না নেয়া হয়, সে ব্যাপারে জোর দিয়েছেন তিনি৷
তবে এখন যাঁরা সার্ভিসে আছেন তাঁদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত কী হতে যাচ্ছে তা এখনো পরিষ্কার নয়৷ এর ব্যাখ্যা চাওয়া হলে পেন্টাগন ও হোয়াইট হাউস দু'পক্ষ দু'দিকে ঠেলছে৷
ক্রিস্টিন বেক নামের তৃতীয় লিঙ্গের একজন নৌবাহিনী সদস্য বিজনেস ইনসাইডার নামের এক পত্রিকায় ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘‘আসুন সামনা সামনি বসি এবং আপনি আমাকে দেখে বলুন আমি যোগ্য কিনা৷''
মিশায়েল ক্নিগে/জেডএ