1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘প্রধানমন্ত্রীর পাশে অভিযুক্ত’

২৭ জানুয়ারি ২০১৪

ডিসেম্বরেই পাঠকদের ডিডাব্লিউ জানিয়েছিল, সাতক্ষীরায় শেখ হাসিনার প্রতীকী কবর খোঁড়ার খবর৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাবেরী গায়েনের সঙ্গে কথা বলার পর প্রশ্ন জাগে, বাংলাদেশে কি হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদেরও কবর খোঁড়া হচ্ছে?

https://p.dw.com/p/1AxAm
Bangladesch Hindus Überfall Jessore
ছবি: DW

গত ডিসেম্বরে ডয়চে ভেলে প্রচার করেছিল রোকেয়া প্রাচীর সাক্ষাৎকার৷ ২৬ ডিসেম্বর প্রচারিত সেই সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী, সাংস্কৃতিক কর্মী প্রাচী জানিয়েছিলেন তার কয়েকদিন আগে সাতক্ষীরা অঞ্চলের জামায়াত-শিবিরের হামলায় সব হারানো কিছু মানুষের কথা৷ সাক্ষাৎকারে তিনি ‘রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ' নামের একটি সংগঠনের হয়ে কলারোয়া, দেবহাটা, কালিগঞ্জ ও আশাশুনি এলাকা ঘুরে এসে দিয়েছিলেন নয় বছরের শিশুকে পানিতে ডুবিয়ে, সত্তর বছর বয়সি মুক্তিযোদ্ধাকে বাড়ির উঠোনে কুপিয়ে আর আওয়ামী লীগ নেতা আজহারুল ইসলাম আজুকে তাঁর বাবার কবরের আশ্রয় থেকে টেনেহিঁচড়ে এনে কুপিয়ে মারার মতো বিভৎস ঘটনার বর্ণনা৷ সাতক্ষীরার মানুষগুলোর অপরাধ, তাঁরা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, অথবা সমর্থক৷ গত এক বছরে জামায়াত-শিবিরের এমন হামলা বাংলাদেশের বেশ কিছু জায়গাতেই হয়েছে৷ ২০১৩ সালে এমন বর্বরতার সূচনা হয়েছিল একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের কারণে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির আদেশ হওয়ার পর৷ অনেক ক্ষেত্রেই হামলার প্রধান শিকার ছিল হিন্দু জনগোষ্ঠী৷

‘পুলিশ কতদিন থাকবে? পুলিশ গেলেই তোদের শেষ করে ফেলব৷’

দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে বাইরে রেখেই গত ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়েছে বাংলাদেশে৷ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে আবার হিন্দুদের ওপর হামলা হয়েছে৷ ‘বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও' এই পর্বেও আক্রান্তদের কাছে গিয়েছে৷ সংগঠনটির হয়ে একটি প্রতিনিধি দল দিনাজপুরের কর্ণাই, প্রীতমপাড়া ও তেলিপাড়া এবং ঠাকুরগাঁওয়ের গড়েয়া ও আকচা গ্রাম ঘুরে এসে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছেন৷ ড. আনিসুজ্জামান, সুলতানা কামাল, ডা. সারওয়ার আলী, জিয়াউদ্দিন তারেক আলী, সাংবাদিক আবেদ খান, জিনাত আরা হক, আ আ ফয়জুল কবিরের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাবেরী গায়েনও ছিলেন সেই প্রতিনিধি দলে৷ যশোর এবং ঠাকুরগাঁওয়ের আক্রান্ত হিন্দুদের বিষয়ে জানতেই তাঁর সঙ্গে এবারের টেলিফোন কথোপকথন৷

কাবেরী গায়েনের এই সাক্ষাৎকারেও বেরিয়ে এসেছে হামলাকারীদের বর্বরতার এমন কিছু বর্ণনা যা ‘সভ্যসমাজে' কল্পনাতীত৷ হিন্দুদের বাড়ি পোড়ানো, লুটপাট, বেধড়ক প্রহার, নারী নির্যাতন – কিছুই বাদ যায়নি৷ পিটিয়ে কোমর ভেঙে দেয়া হয়েছে সত্তর বছর বয়সি বৃদ্ধার৷ অনেক পরিবার তরুণী বা উঠতি বয়সি মেয়েদের বাঁচাতে আগেভাগেই পাঠিয়ে দিয়েছিল দূরের কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে৷ ফলে মূলত মাঝবয়সি নারীরাই হয়েছেন অবর্ণনীয়, অকথ্য নির্যাতনের শিকার৷ কাবেরী গায়েন জানালেন, কোনো কোনো এলাকার নারীরা তাঁদের ওপর নেমে আসা নির্যাতনের কথা জানতে চাইলে এখনো শুধু কাঁদেন৷ তাঁদের নীরব কান্নাই অসহায়ত্ব প্রকাশের একমাত্র ভাষা৷

কাবেরী গায়েন জানালেন, প্রাণ এবং মান-সম্মান বাঁচাতে দূরে কোথাও আশ্রয় নেয়া অনেক তরুণী এখনো বাড়ি ফেরেনি৷ হামলার সময় প্রশাসন হয় একেবারে নিষ্ক্রিয় ছিল, নয়ত প্রতিরোধ-প্রতিকারে তাঁদের পদক্ষেপগুলো ছিল অতি বিলম্বিত৷ হামলাকারী বা হামলাকারীদের পক্ষের লোকজন এখনো বসে নেই৷ এখনো তাই কোথাও কোথাও হিন্দুদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলা হয়, ‘পুলিশ কতদিন থাকবে? পুলিশ গেলেই তোদের শেষ করে ফেলব৷' এমন হুমকির কথাও কাবেরী গায়েন জানিয়েছেন ডয়চে ভেলেকে দেয়া এই সাক্ষাৎকারে৷পুলিশ প্রহরাতেও হিন্দুরা ভুগছেন নিরাপত্তাহীনতায়, একটু নিরাপদ জীবনের সন্ধানে তাঁরা দেশত্যাগের কথা ভাবছেন বলেও জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক কাবেরী গায়েন৷

অতীতের মতো হিন্দুদের ওপর এবারের হামলার সঙ্গেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে৷ গত বছর হামলায় জড়িত বলে কথিত এক যুবলীগ কর্মীর সঙ্গে তখনকার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামছুল হক টুকুর ছবি ছাপা হয়েছিল গণমাধ্যমে৷ ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল ওহাব ছিলেন ‘বিদ্রোহী প্রার্থী'৷ যশোরের অভয়নগরে হিন্দুদের ওপর হামলার সময়ে তাঁর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক জনসভায় তাঁকেও দেখা গেছে – জানিয়ে বিষয়টি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন কাবেরী গায়েন৷ এই সাক্ষাৎকারের শেষ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘‘যশোর অভয়নগরের ক্ষেত্রে আমরা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল ওহাবের নাম শুনতে পাচ্ছি৷ প্রধানমন্ত্রী যখন ওখানে জনসভা করতে গেছেন, যাঁর বিরুদ্ধে এ জাতীয় অভিযোগ রয়েছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাঁকেও কিন্তু সেই মঞ্চে দেখা গেছে৷ এই জায়গাগুলোয় আমরা পরিষ্কার একটি জবাব পেতে চাই৷''

সাক্ষাৎকার: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য