‘প্রজাতন্ত্রের প্রাসাদ’ ভেঙে ‘নগর প্রাসাদ’
‘পালাস্ট ডেয়ার রেপুবলিক’ ছিল পূর্ব জার্মানির ক্ষমতার কেন্দ্র, তথাকথিত ‘ফলক্সকামার’ বা গণপ্রতিনিধিদের কক্ষ৷দশ বছর আগে জার্মান সংসদ ভবনটি ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়৷
জিডিআর-এর ট্রেডমার্ক
প্রজাতন্ত্রের প্রাসাদ ছিল কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানির প্রেস্টিজ প্রোজেক্ট৷ তৈরি হতে প্রায় তিন বছর লাগে, উদ্বোধন হয় ১৯৭৬ সালের ২৩শে এপ্রিল তারিখে৷ বাড়ির বাইরেটা এক ধরনের সোনালি-বাদামি আয়নার কাচ দিয়ে ঢাকা৷ এখানে যে শুধু পূর্ব জার্মান সংসদের অধিবেশন বসতো, এমন নয় – রক কনসার্ট, থিয়েটার, ফ্যাশন শো, সব কিছু হয়েছে এখানে৷
বড়লোকি চাল
আলোঝলমলে পালাস্ট ডেয়ার রেপুবলিক-কে পূর্ব জার্মানির মানুষরা বলতেন, লোকদেখানো, বড়লোকি চাল৷ নয়তো এরিক-এর বাতির দোকান৷ এরিক বলতে কমিউনিস্ট এসইডি দলের তৎকালীন জেনারেল সেক্রেটারি এরিক হনেকার৷ প্রাসাদটি ব্যবহার করা হয় মাত্র ১৯৯০ সাল অবধি৷ সে-বছর পূর্ব জার্মানির প্রথম নিরপেক্ষভাবে নির্বাচিত সংসদ ভবনটি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, প্রাসাদ নির্মাণে বিষাক্ত অ্যাজবেস্টস স্প্রে ব্যবহার করা হয়েছে বলে৷
প্রাসাদের চত্বর
দুই জার্মানির পুনর্মিলনের পর জার্মান বুন্ডেসটাগ একবার নয়, দু’বার নয়, তিন-তিনবার প্যালেসটি ভেঙে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে – ২০০২, ২০০৩ ও ২০০৬ সালে৷ তার জায়গায় বার্লিনের কেন্দ্রে একটি নতুন সাংস্কৃতিক ফোরাম তৈরি করার কথা ভাবা হচ্ছিল৷
ভাঙাগড়া
অ্যাজবেস্টস পরিষ্কার করা খুব সহজ নয়৷ কাজেই বাড়িটা ভাঙতেও দেরি হয়েছে৷ গোড়ায় ২০০৭ সালের মধ্যেই তা ভেঙে ফেলার কথা ছিল, কিন্তু সে সময়সীমা বজায় রাখা সম্ভব হয়নি৷ শেষমেষ সেই বাড়ি ভাঙায় খরচা হয়েছে এক কোটি ইউরোর বেশি৷
খোলনলচে
১৯৯০ সালে ভবনটি বন্ধ করে দেবার পর, সেটির ভিতর থেকে সব কিছু সরিয়ে নেওয়া হয়, যা-তে শুধু বাইরের খোলটাই পড়ে থাকে৷ ২০০৬ সালের বসন্তে বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু হয়৷ সব মিলিয়ে মোট ৫০০ টন কাচ, দু’হাজার টন ইস্পাত ও ৫৬ হাজার টন কংক্রিট সরাতে হয়েছে৷
ধাপে ধাপে
ভবনটা তৈরি করতে সময় লেগেছিল ৩২ মাস৷ সেটাকে ভেঙে ইট-কাঠ-পাথর সব সরাতে সময় লেগেছে তার চেয়ে বেশি – সে কাজ শেষ হয় ২০০৮ সালে৷ তারপর প্রাসাদের কংক্রিটের ভিত্তিটা এক লক্ষ ঘনমিটার বালি দিয়ে ভরাতে হয়৷ নয়ত রাস্তার অপর পারে বার্লিন ক্যাথিড্রাল ধসে যেতে পারত৷
বিতর্কিত বিষয়
বার্লিনের ঐতিহাসিক ‘স্টাটশ্লস’ বা সিটি প্যালেস খাড়া ছিল ঠিক এই পালাস্ট ডেয়ার রেপুবলিকের জায়গায় – ১৪৪৩ সাল থেকে ১৯৫০ সাল অবধি৷ প্যালেস ভেঙে ‘স্টাটশ্লস’ করা নিয়ে বহুদিন বিতর্ক চলেছে৷ কেন তা করা হবে? এভাবে কি জার্মানি তার নিজের ইতিহাসের একটা অধ্যায় মুছে দেবার চেষ্টা করছে না?
‘হুমবোল্ট-বক্স’
পালাস্ট ডেয়ার রেপুবলিক ভেঙে ফেলার পর জায়গাটায় ঘাস বোনা হয় ও গাছপালা লাগানো হয়৷ ২০১১ সালে আসে হামবোল্ট বক্স নামধারী এই সাময়িক কাঠামোটি, যেখানে সিটি প্যালেস ও হামবোল্ট ফোরাম সম্পর্কে নানা তথ্য জানতে পাওয়া যাবে৷ মডেল ও ইন্টারঅ্যাকটিভ প্রদর্শনীর মাধ্যমে এলাকাটির চূড়ান্ত রূপ কী হবে, দর্শকরা সে বিষয়ে জানতে পারবেন৷
নতুন প্রাসাদ
আপাতত দেখতে পাওয়া যাবে বার্লিন সিটি প্যালেসের কংক্রিটের ধাঁচা, তার বেশি কিছু নয়৷ তা-তেই ইতিমধ্যে কেন্দ্রের খরচা পড়েছে ৫৯ কোটি ইউরো৷ প্রাসাদের ব্যারোক শৈলীর সম্মুখভাগ তৈরিতে খরচ পড়বে আট কোটি ইউরো, যার সবটাই নাকি আসবে দান থেকে৷ ২০১৯ সাল থেকে হামবোল্ট ফোরাম এখানে বিভিন্ন প্রদর্শনী, নাট্যাভিনয় ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করবে৷