পোলিও থেকে বাঁচা এত কঠিন কেন?
পোলিও প্রতিরোধে টিকা থাকলেও, এর কোনো চিকিৎসা নেই৷ অন্ত্রপথে শরীরে প্রবেশ করা এই ভাইরাস মোকাবিলার একমাত্র উপায় শিশুকে পোলিও ভ্যাকসিন খাওয়ানো৷ অথচ আজও বহু শিশুর শৈশব হারিয়ে যায় এ অসুখে, হাত-পা অসাড় হয়ে পড়ে৷
বিশুদ্ধ পানির অভাব
পোলিওমাইলিটিস বা সংক্ষেপে পোলিও ভাইরাস সাধারণত দূষিত পানির মধ্য দিয়েই শরীরে, বিশেষ করে শিশুদের শরীরে প্রবেশ করে৷ তারপর রক্তকোষের মধ্যে বংশবৃদ্ধি করে রক্তে সংক্রমণ ঘটায় এবং ধীরে ধীরে প্রান্তীয় স্নায়ু বা নিউরনের মায়োলিনগুলোকে ধ্বংস করে ফেলে৷ ফলে আক্রান্ত স্থানে দেখা যায় পক্ষাঘাত৷ বিশ্বব্যাপী বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাবের ফলে বারে বারেই ফিরে আসে পোলিও৷
এখনো কোনো চিকিৎসা নেই
এই রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় – পাঁচ বছরের কম বয়সি বাচ্চাদের পোলিও ভ্যাকসিন খাওয়ানো৷ এমনটা না করা হলে এ রোগ আজও মহামারী আকারে দেখা দিতে পারে, কারণ, পোলিও ভাইরাস ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ পর্যন্ত রোগীর মলমূত্র দিয়ে বের হয়৷ অর্থাৎ মলত্যাগের পর হাত পরিষ্কারভাবে না ধোয়া হলে খাদ্য ও পানিতে সহজেই এই জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে এবং অন্য শিশুরা এ রোগে সংক্রমিত হয়৷
অল্প বয়সিদের জন্য এক আতঙ্ক
পাঁচ বছরের কম বয়সিরাই এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয় বেশি৷ এ অসুখ স্পাইনাল (স্নায়ুকোষ সংক্রান্ত), বালবার (শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত), স্পাইনো বালবার (স্নায়ু ও শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত) এবং এনকেপালাইটিস টাইপ (মস্তিষ্ক সংক্রান্ত) হতে পারে৷ পোলিওতে প্রতি ২০০ জনের মধ্যে এক জনের দেহ সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়৷ এছাড়া ৫ থেকে ১০ শতাংশ পোলিও রোগী মারা যায় শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যার কারণে৷
পোলিওর আতঙ্ক শেষ হয়নি
বছর দুয়েক আগে ভারতকে পোলিওমুক্ত বলে ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ তখনই বলা হয়েছিল যে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াও পোলিওমুক্ত হয়ে উঠবে অচিরেই৷ কিন্তু ২০১৬ সালেও পাকিস্তানে পোলিওর শিকার হয়েছিল অন্তত ৩৫টি শিশু৷ প্রসঙ্গত, পোলিও নির্মূলে ১৯৮৮ সাল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টিকাদান কর্মসূচি চালু করে৷ একই সঙ্গে ২৮শে অক্টোবরকে পোলিও দিবস হিসেবে ঘোষণা করে তারা৷
জীবননাশকারী এক রোগ
বিশ্বের যে দু’টো অঞ্চলে পোলিওর প্রকোপ এখনো বেশি, তার মধ্যে আফগান-পাক সামীন্ত একটি৷ অন্যটি নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চল৷ এসব জায়গায় পোলিও আক্রান্ত অধিকাংশ শিশুর মধ্যেই পঙ্গুত্ব ধরা পড়ে৷ মুশকিল হলো, পাকিস্তানি তালেবান মনে করে, পোলিও নির্মূল কর্মসূচি মার্কিনিদের গোয়েন্দা কর্মসূচির অংশ৷ এছাড়া পোলিওর টিকা মুসলিম শিশুদের মধ্যে বিষ ঢোকানোর ষড়যন্ত্র বলেও ধারণা তাদের৷
একজন রোগীর অস্তিত্বই যথেষ্ট
বিশ্বে যদি একটি মাত্র শিশুর দেহেও এই ভাইরাস থেকে যায়, তবে তা অন্য সব শিশুর জন্য আতঙ্কের কারণ হতে পারে৷ কারণ শিশুদেহে এই ভাইরাস বছরের পর বছর বেঁচে থাকতে পারে এবং একটি শিশু থেকে দুই মিলিয়ন নতুন পোলিও আক্রান্ত শিশু দেখা দিতে পারে৷ আবার অসুখটি সেরে যাওয়ার পরও অনেক সময় তা ফিরে আসতে পারে৷ একে বলা হয় ‘পোস্ট-পোলিও-সিনড্রোম’৷
প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী