পাকিস্তানের মাদার টেরেসা
পাকিস্তানের মাদার টেরেসা খ্যাত জার্মান নাগরিক ডা. রুথ ফাউ মারা গেছেন৷ করাচিতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে সমাহিত করা হয়েছে৷ গত ৫৭ বছর ধরে পাকিস্তানে কুষ্ঠ রোগ নির্মূলসহ মানুষের সেবায় নানা ধরনের কাজ করে গেছেন তিনি৷
একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি
রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা এবং সমাজের সর্বস্তর থেকে বিপুল শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখেই বোঝা যায় যে, তিনি ছিলেন অনন্য৷ তিনি পাকিস্তানের মূলধারার ভাবনা-চিন্তার একেবারে বিপরীতে হেঁটেছিলেন বলেই হয়ত পেয়েছেন সবার ভালোবাসা৷ দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে অর্ধশতকেরও বেশি সময় অতিবাহিত করেছেন ডা. রুথ ফাউ৷ কুষ্ঠ রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন এবং দেশটির অসহায় মানুষ সবসময় তাঁর সেবা ও ভালোবাসা পেয়েছে৷
জন্ম এবং জার্মানিতে কাটানো সময়
রুথ ক্যাটারিনা মার্থা ফাউ ১৯২৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর জার্মানির লাইপসিশ শহরে জন্মগ্রহণ করেন৷ যুদ্ধ পরবর্তী সোভিয়েত নিয়ন্ত্রিত পূর্ব জার্মানি থেকে সেসময় পশ্চিম জার্মানিতে পালাতে বাধ্য হন তিনি৷ মাইনৎস বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০-এর দশকে চিকিৎসাবিদ্যা নিয়ে পড়ালেখা শুরু করেন৷ যুদ্ধের সময় বন্দিশিবির থেকে বেঁচে যাওয়া এক খ্রিস্টান নারীর সাথে দেখা হয় তাঁর, সেই নারীর দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ধর্মান্তরিত হয়ে ক্যাথলিক হন৷
ভাগ্যচক্র
ফাউ মারবুর্গে চলে যান এবং চিকিৎসাবিদ্যায় মনোনিবেশ করেন৷ ১৯৫৭ সালে ক্যাথলিক আশ্রম ‘ডটারস অফ দ্য হার্ট অফ মেরি’-তে যোগ দেন তিনি৷ সেই আশ্রম তাঁকে দক্ষিণ ভারতে পাঠিয়ে দেয়৷ ১৯৬০ সালে তাঁর পাসপোর্টে সমস্যার কারণে পাকিস্তানের করাচিতে আটকা পড়েন ফাউ৷ এরপর সেখানেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷ পরের বছরগুলোতে রোগীদের চিকিৎসার জন্য আফগানিস্তানেও গেছেন তিনি৷
পাকিস্তানের আলোকবর্তিকা
জার্মানভিত্তিক একটি মেডিকেল মিশনারি করাচির মেরি অ্যাডেলেইড লেপ্রোসি সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত হয়৷ ফাউ এটিকে ১৫৭টি কেন্দ্রে ছড়িয়ে দেন৷ যেখানে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হাজারো মানুষের চিকিৎসার সুযোগ সৃষ্টি হয়৷ এই কেন্দ্রগুলো এবং ক্লিনিকগুলো ২০০০ সালে বেলুচিস্তানের দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষ, ২০০৫ সালে কাশ্মীরের ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ এবং ২০১০ সালে বন্যা দুর্গতদের সহায়তা দিয়েছে৷
সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক
ডা. ফাউ-কে পাকিস্তানে মাদার টেরেসার সঙ্গে তুলনা করা হয়৷ ১৯৮৮ সালে ফাউ-কে পাকিস্তানের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়৷ মানব সেবায় বিশেষ অবদানের জন্য অনেক সম্মাননা পেয়েছেন তিনি৷ পেয়েছেন পাকিস্তানের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক ‘হিলাল-ই-ইমতিয়াজ’ এবং ‘হিলাল-ই-পাকিস্তান’৷
নিভে গেল জীবনপ্রদীপ
চলতি বছরের ১০ আগস্ট পাকিস্তানের এই আলোকবর্তিকার জীবনপ্রদীপ নিভে যায়৷ কিডনি ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ফাউ গত কিছুদিন ধরে করাচির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন৷
বিদায় মানবতার আলোকবর্তিকা
১৯ শে আগস্ট করাচিতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ‘পাকিস্তানের মাদার টেরেসা’ খ্যাত ডা. ফাউ-এর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়৷ গত ২৯ বছরে তিনি দ্বিতীয় ব্যক্তি, যাকে পাকিস্তানে এই সম্মান দেয়া হলো৷ এর আগে গত বছর আব্দুল সাত্তার ইদি’র মৃত্যুর পর তাঁকেও একই ধরনের সম্মান দেয়া হয়েছিল৷ মানবসেবায় নিয়োজিত ছিলেন বলে আব্দুল সাত্তার ইদি’ও ‘পাকিস্তানের মাদার টেরেসা’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন৷