1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাকিস্তানে ইতিহাস রচনা করলেন মালিক

৩০ মার্চ ২০১৮

মারভিয়া মালিক নামে একজন ট্রান্সজেন্ডার প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের একটি টিভি চ্যানেলে সংবাদ পাঠিকা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন এবং সংবাদ উপস্থাপন করেছেন৷

https://p.dw.com/p/2vEQh
ছবি: Reuters/Zile Huma

মারভিয়া মালিক কোনো চ্যানেলে সংবাদ পাঠিকা হিসেবে চাকরি পাওয়া প্রথম ট্রান্সজেন্ডার বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ৷ না, কোনো সহানুভূতি দেখিয়ে তাঁকে নিয়োগ দেয়নি পাকিস্তানের বেসরকারি চ্যানেল কোহিনূর৷ বরং তাঁর যোগ্যতা দেখেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে৷ মারভিয়া সাংবাদিকতায় স্নাতক৷ এর আগে ফ্যাশন মডেল হিসেবে র‌্যাম্পেও হেঁটেছেন তিনি৷ তিন মাস ধরে উপস্থাপিকা হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং প্রথমবারের মতো সফলভাবে সংবাদ উপস্থাপনাও করেছেন৷

২৪শে মার্চ চ্যানেল কোহিনূর চ্যানেলে তিনি সংবাদ পাঠ করার সাথে সাথে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে তা ভাইরাল হয়ে যায়৷ এর মাত্র কয়েকদিন আগেই পাকিস্তানের ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিলের ফ্যাশন শো-তে ক্যাট ওয়াক করেছিলেন তিনি, যা এর আগে কোনো ট্রান্সজেন্ডার করেননি৷

একটি প্রেমের ছবির অভিনেত্রী হিসেবে ট্রান্সজেন্ডার কর্মী জারা চাঙ্গেজি যখন তাঁর নাম প্রস্তাব করেছিলেন, তখনই প্রথম আলোচনায় আসেন মারভিয়া৷ তাঁর বয়স এখন ২১ বছর৷ প্রথমবার সংবাদ উপস্থাপনার পর প্রচুর মানুষ ফোন করে এবং বার্তা পাঠিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন তাঁকে৷ এটাকে তিনি নিজের জীবন যুদ্ধের পুরস্কার হিসেবে উল্লেখ করেছেন৷ মারভিয়া বলেন, ‘‘দশম শ্রেণিতে পড়ার পর আমার বাড়ি থেকে পড়ার খরচ বন্ধ করে দেয়া হয়৷ এরপর আমি একটি বিউটি সেলুনে কাজ শুরু করি, যাতে অন্তত সেই অর্থ দিয়ে কলেজে যেতে পারি৷ কিন্তু সেটাও এত সহজ ছিল না৷ রাস্তায় যেসব হিজড়াদের দেখেন, আমার গল্পটাও ঠিক তাদের মতোই হতে পারতো৷ তাই পরিবর্তন আনতে হলে ঘর থেকেই সেটা শুরু করতে হবে৷’’

কেবল পাকিস্তান নয়, দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশ, যেমন বাংলাদেশ, ভারতে হিজড়াদের উপর প্রায়ই হামলার ঘটনা ঘটে৷ তাঁদের ধর্ষণ করা হয় বা যৌন কর্মে বাধ্য করা হয়৷ অথবা কেউ বাধ্য হয় ভিক্ষা করতে৷ তবে পাকিস্তান এক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়েছে৷ তারা শিক্ষা ও চাকুরির ক্ষেত্রে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের বৈষম্য কমিয়ে আনতে সমর্থ হয়েছে৷ 

ইন্টারসেক্স এডুকেটর সানা ইয়াসির সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘‘পাকিস্তানে হিজড়াদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে, তবে এখনও অনেক জায়গায় তাঁদের লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়৷ সাধারণ মানুষ হিজড়াদের সমকামী হিসেবে ধরে নেয় এবং ঘৃণার চোখে দেখে৷’’

পাকিস্তান সরকারের আনুষ্ঠানিক টুইটার পেজ ‘গভর্নমেন্ট অফ পাকিস্তান’-এও অভিনন্দন জানানো হয় মারভিয়াকে৷ সেখানে বলা হয়েছে, ‘‘পাকিস্তানের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে সংবাদ উপস্থাপক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলো৷ এর আগেও মারভিয়া ফ্যাশন মঞ্চে হেঁটে সংবাদ শিরোনাম হয়েছিলেন৷ এই মাসের প্রথমদিকে সেনেট ট্রান্সজেন্ডারদের অধিকার নিয়ে নতুন বিল ২০১৭-এ সমর্থন দেয়৷ এর মাধ্যমে তৃতীয় লিঙ্গের সম্প্রদায়ের মানুষদের আরও ক্ষমতায়ন হয়েছে৷’’

কেবল পাকিস্তানের মানুষই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অভিনন্দন জানানো হয়েছে মারভিয়াকে৷ একজন লিখেছেন, ‘‘পাকিস্তানের প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের উপস্থাপিকা মারভিয়া এর আগে সানসিল্ক ফ্যাশন উইকে র‌্যাম্পে হেঁটেছিলেন৷ তিনি নিজের মাইলফলককেই অতিক্রম করে গেলেন৷’’

মারভিয়া এমন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন যার মাধ্যমে তৃতীয় লিঙ্গের অনেক মানুষের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আসবে৷ তবে মারভিয়া সাংবাদিকদের বলেছেন, এখনও অনেক পথ যেতে হবে তাঁকে৷

এপিবি/এসিবি (রয়টার্স, থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন)