নেদারল্যান্ডসের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং পপুলিজমের উত্থান
নেদারল্যান্ডসে এমন এক সময় নির্বাচন হচ্ছে যখন অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ঘটছে এবং বেকারত্বের হার কমছে৷ তা সত্ত্বেও ডানপন্থি পপুলিস্টদের জনপ্রিয়তা ক্রমশ বাড়ছে৷ নির্বাচনে তারা শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক শক্তিতে পরিনত হতে পারে৷
ইউরোপের আদর্শ দেশ?
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং এটির অগ্রদূত ইউরোপীয় ইকোনোমিক কমিউনিট (ইইসি)-র প্রতিষ্ঠাতা দেশ নেদারল্যান্ডসের গতিশীল অর্থনীতি৷ দেশটির জিডিপি স্থির, বেকারত্বের হার বেশ কম এবং অর্থনীতি বাজারবান্ধব৷ তা সত্ত্বেও ডানপন্থি পপুলিস্টদের নির্বাচনে ভালো করার ইঙ্গিত পরিষ্কার৷ এর কারণ কী?
‘দ্য সিম্পলিফায়ার’
বিশ্বায়নের এই যুগে রাজনৈতিক এবং আর্থসামাজিক সমস্যাগুলোও ক্রমশ জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে৷ ফলে অনেকে আতঙ্কিত হচ্ছেন৷ আর এটাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে ডাচ ডানপন্থিরা নির্বাচনে ভালো করার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে৷ তাদের নেতা পার্টি ফর ফ্রিডম (পিভিভি) দলের খেয়ার্ট ভিল্ডার্স৷ এই রাজনীতিবিদ কঠিন সব সমস্যার সহজ উত্তর দিয়ে অনুসারীদের সন্তুষ্ট করছেন৷
প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ
নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক ব়্যুটে ক্ষমতাগ্রহণের সময় নেদারল্যন্ডসের অর্থনীতির দৃঢ় বৃদ্ধি এবং দেশটির সমৃদ্ধি আরো বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন৷ তিনি তাঁর কথা রেখেছেন, অন্তত পরিসংখ্যান বলছে সে দেশের অর্থনীতির অবস্থা স্পষ্টভাবেই ইতিবাচক৷ কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বা সমৃদ্ধি আসলে সে দেশের নিম্ন এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির জীবনে তেমন কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি৷
আত্মবিশ্বাস হারানো
ব়্যুটে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ডাচ করদাতাদের অর্থ ইউরোজোনের কোনো দেশের দেউলিয়া হওয়া রুখতে ব্যবহার করা হবে না৷ কিন্তু দায়িত্ব নেয়ার পরপরই তিনি সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন এবং গ্রিসের জন্য একটি ত্রাণ তহবিলে অর্থ দেন৷ ডাচ ভোটাররা তাঁর এই সিদ্ধান্তের কারণে সরকারের উপর থেকে আত্মবিশ্বাস হারিয়েছে৷ মোটের উপর অবসরের বয়স বাড়িয়ে ৬৭ করা এবং সামাজিক সুযোগসুবিধা কমানোর সিদ্ধান্তগুলোও সরকারের বিপক্ষে গেছে৷
অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সুবিধা তাহলে কারা পেলো?
ডাচরা তাড়াতাড়িই বুঝতে পেরেছে যে তারা আসলে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য কড়া মূল্য দিচ্ছেন৷ তাদের বেকারভাতা কমানো হয়েছে এবং স্বাস্থ্যখাতে ব্যয়ও কমানো হয়েছে৷ ফলে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির ফল সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছায়নি৷ আর বেকারত্বের হার কমলেও শ্রমিক শ্রেণির মানুষদের এখন মাসিক বেতন দিয়ে সাধারণ জীবনযাপন করতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে৷
‘আমাদের ঘর ভর্তি’
এমন পরিস্থিতিতে নেদারল্যান্ডসে জাতীয়তাবাদী অনুভূতি প্রকট হয়েছে৷ অথচ ডাচ সমাজের উদারতা ইউরোপের অন্যান্য দেশের কাছেও উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিল৷ পরিস্থিতি এখন এমন যে, শরণার্থীদের নেয়ার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে সে দেশের অনেক মানুষ৷ আর পুরো পরিস্থিতি খেয়ার্ট ভিল্ডার্সের পক্ষেই যাচ্ছে৷
উগ্র এজেন্ডা
ইউরোপে ইসলাম বেশ দৃশ্যমান বিশেষ করে বিভিন্ন শহরে রয়েছে মুসলমানদের প্রার্থণালয় এবং মসজিদ৷ বর্তমানে অবশ্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইসলামবিরোধী মানসিকতা মাথাচাড়া দিচ্ছে, যেটাকে পুঁজি করে এগোতে চাচ্ছেন ভিল্ডার্স৷ তিনি গোটা দেশে মসজিদ এবং কোরান নিষিদ্ধের কথা বলেছেন৷ পাশাপাশি ইউরোর সমালোচনা করেছেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছেন৷ সমাজের একটি অংশ তাঁকে সমর্থনও করছে৷