নিকারাগুয়ায় সংঘাত
মধ্য অ্যামেরিকার দেশ নিকারাগুয়া সম্প্রতি দারুণ উত্তাল হয়ে উঠেছিল৷ ছবিঘরে বিস্তারিত দেখুন সেখানকার বর্তমান অবস্থা৷
ডানিয়েল ওরটেগা: স্নায়ুযুদ্ধের প্রতীক
নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্ট ডানিয়েল ওরটেগা দেশটির রাজনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ৷ দেশটির সাবেক স্বৈরশাসক আনাসটাসিও সমোজার পতনের পর ওরটেগা প্রথম ১৯৮৫ সালে প্রেসিডেন্ট হন৷ বামপন্থি সানডিনিস্টা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট ছিল তার দলের নাম৷ ফিদেল কাস্ত্রোর সাথে তাঁর বন্ধুত্ব থাকায় অ্যামেরিকার সাথে ছিল শত্রুতা৷ ফলে অ্যামেরিকার রিগান সরকার ওরটেগাকে ক্ষমতা থেকে নামাতে ডানপন্থি গেরিলা দলকে সহায়তা করেছিল৷
ক্ষমতা হারানো এবং ফের ফিরে আসা
১৯৯০ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হারানোর পর ওরটেগা বিরোধীদলের নেতায় পরিণত হন৷ আবার ২০০৬ সালে দক্ষিণ অ্যামেরিকার দেশগুলোতে বামপন্থি নেতৃত্ব ও দলগুলোর উত্থানের সময় তিনি ক্ষমতায় আসেন৷ এবার জোট বাঁধেন অ্যামেরিকার আরেক চোখের বিষ উগো চাবেসের সাথে৷ কিন্তু এরপর ওরটেগা নীতি পরিবর্তন করে রাতারাতি পুঁজিবাদী দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক তৈরি করেন৷
ক্ষমতায় থাকতে কৌশল
নির্বাচনি আইন পরিবর্তন করে ওরটেগা কৌশলে তার ক্ষমতার সময় দীর্ঘায়িত করেন৷ ২০১৬ সালের নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পযর্বেক্ষকদের দেশে ঢোকার অনুমোদন দেননি তিনি৷ সেবার ফার্স্ট লেডি রোজারিও মুরিল্লোকে নিজের ভাইস প্রেসিডেন্ট বানান৷ যা আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দার মুখোমুখি হয়৷
অবসরভাতায় পরিবর্তন পরিকল্পনা
এ বছরের এপ্রিলে অবসরভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতায় ৫ শতাংশ করারোপ করার ঘোষণা দেন ওরটেগা৷ যদিও পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা খাতের কর সাড়ে ২২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ান তিনি৷ এ ঘটনায় নিকারাগুয়াজুড়ে বড় ধরনের বিক্ষোভ শুরু হয়৷
রাষ্ট্রের নিপীড়ণ এবং পাদ্রীদের মধ্যস্ততা
অবসর ভাতার সেই পরিকল্পনা স্থগিত করা হলেও ওরটেগার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চলতে থাকে৷ রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে নিহত বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা ২০০-র কাছাকাছি পৌঁছে যায় দুই মাসেই৷ এ অবস্থায় ক্যাথলিক যাজকরা ওরটেগার কাছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে নিকারাগুয়ায় অনুপ্রবেশ করতে দেয়ার ব্যাপারে চাপ দেন৷বিরোধীপক্ষের সাথে ওরটেগার আপসমূলক বৈঠকে বসার চেষ্টা করতে থাকেন যাজকরা৷
সরকার ও বিরোধীদল
শিক্ষার্থী ও সুশীল সমাজের বিশাল অংশ ওরটেগার সাথে চলতি মে মাসের ১৬ তারিখে বৈঠকে বসে৷ বৈঠকের আয়োজক যাজকরা বলেছিলেন, ‘আলোচনা ন্যায়বিচার, গণতান্ত্রিকতা ও শান্তি’ বিষয়ে হবে৷ বৈঠকে বিরোধীপক্ষ ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দেওয়ার দাবি করে৷ ওরটেগা তা প্রত্যাখ্যান করায় আলোচনা ভেস্তে যায়৷
অচলাবস্থা
সরকার ও বিরোধীদলের দু’দফা বৈঠক ব্যর্থ হয়েছে৷ অবরোধ চলছে৷ সরকারি বাহিনী ও বিরোধীদের সহিংসতায় মৃ্ত্যুর ঘটনা বাড়ছে৷ বিরোধীপক্ষ নির্বাচনের দাবিতে অনড়৷ পাশাপাশি জাতিসংঘ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ঢোকানোর দাবি জানিয়েছে দেশটিতে৷ ওরটেগা এখন পর্যন্ত গ্রহণ করেননি৷