1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নারী পাচার ঠেকাচ্ছে ‘কালো জাদু’

২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

২০১৬ সালে থেকে অবৈধভাবে ইটালিতে এসেছেন ১১ হাজারেরও বেশি নাইজেরিয়ান নারী৷ আর তাঁদের অধিকাংশেরই শেষ পরিণতি হয়েছে পতিতাপল্লি৷ নারী পাচার ঠেকাতে এবার দেশটি কাজে লাগাচ্ছে ব্ল্যাক ম্যাজিক বা কালো জাদু৷

https://p.dw.com/p/35J0B
ছবি: Fotolia/VRD

অর্থনৈতিকভাবে বেশ উন্নত হলেও নাইজেরিয়ার ইডো প্রদেশের বেনিনে কালো জাদুর ওপর মানুষের বিশ্বাস এখনো প্রবল৷ অনেকেই বিশ্বাস করেন, কালো জাদুর অধীনে কোনো চুক্তি করে তা ভঙ্গ করলে শারীরিক অসুস্থতা, মানসিক ভারসাম্যহীনতা, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে৷

আর এই ভীতি কাজে লাগিয়ে প্রায় দুই দশক ধরে নাইজেরিয়া থেকে ইউরোপে নারী পাচার করছেন ৪২ বছর বয়সি পেশেন্স৷ এ থেকে তার আয়ও ছিল বেশ৷ নারীরা যাতে পালাতে না পারে, সেজন্য তিনি ব্যবহার করতেন তাঁর কালো জাদু৷ 

বেনিনে পেশেন্সের একটি সেলুন আছে৷ সেখানেই চুলের সাজসজ্জার আড়ালে দীর্ঘদিন নারী পাচারের কাজকর্ম চালিয়ে আসছেন পেশেন্স৷ উন্নত জীবনের লোভে ইউরোপ যাওয়ার সুযোগ খুঁজতে বেনিনের তরুণীরা ভিড় জমাতেন তার সেলুনে৷ ফলে এ খাত থেকে প্রতি মাসেই বেশ বড় অংকের উপার্জনও হতো পেশেন্সের৷

ইউরোপে বসবাসকারী এজেন্টদের সহায়তায় নারীদের তুলে দেয়া হতো নৌকায়৷ তবে তার আগে পালন করা হতো এক বিশেষ ধরনের আচার৷ হাজার হাজার ডলার পরিশোধের চুক্তিতে সই করতে বাধ্য করা হতো ইউরোপগামী নারীদের৷

সেই চুক্তি তারপর নিয়ে যাওয়া হতো আধ্যাত্মিক যাজকের কাছে৷ কালো জাদুর অংশ হিসেবে জ্যান্ত মুরগির যকৃত টেনে বের করে তাঁদের খেতে বাধ্য করা হতো৷ এরপর নারীদের চুল এবং কাপড়ের কিছু অংশ একটি মিশ্রণে মিশিয়ে বাধ্য করা হতো সেটা পান করতে৷ এভাবেই কালো জাদুর মাধ্যমে সেই চুক্তি সিলগালা করে দেয়া হতো৷

স্থানীয়ভাবে ‘জুজু' নামে পরিচিত এই কালো জাদুকে বেশ ভয় পান বেনিনের নারীরা৷ ফলে ইউরোপে এসে স্বপ্নভঙ্গের পর শত নির্যাতন সহ্য করলেও পুলিশের কাছে যাওয়ার কথা ভুলেও ভাবেন না তাঁরা৷

১৮ বছর বয়সে রাশিয়ায় পাচার হওয়া ফ্লোরেন্সের বয়স এখন ২৪৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি একবার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলাম৷ এরপরই আমার মুখে পচন ধরতে শুরু করে৷ আমাকে একাধিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও কোনো চিকিৎসকই আমার রোগের কারণ বের করতে পারেননি৷'' 

ফ্লোরেন্স জানান, টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোর আগ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৪৫ হাজার ডলার দিয়েছেন ইউরোপে তাঁর এজেন্টের কাছে৷ এসব এজেন্টকে পতিতাবৃত্তিতে জড়িত নারীরা চেনেন ‘ম্যাডাম' নামে৷ আবার টাকা দেয়া শুরু করার পর কোনো ওষুধ ছাড়াই তাঁর মুখ ভালো হতে শুরু করে বলেও জানান ফ্লোরেন্স৷

নাইজেরিয়ার সরকার কঠোর আইন করেও বন্ধ করতে পারছিল না কালো জাদু প্রয়োগে ভয় সৃষ্টির কর্মকাণ্ড৷ ফলে এবার সরকারও কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে কালো জাদু নিয়ে মাঠে নেমেছে৷ আর এই কাজে সরকার সাথে পেয়েছে বেনিন অঞ্চলের সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতা দ্বিতীয় ওবা এওয়ারেকে৷

মার্চে এক অনুষ্ঠানে ওবা ঘোষণা দেন, অবৈধ অভিবাসনে যারা কালো জাদু কাজে লাগাবে, তাদের ওপর পড়বে তাঁর অভিশাপ৷ নাইজেরিয়ার সরকার বলছে, এই ঘোষণার পর থেকে উল্লেখযোগ্য হারে কমে এসেছে নারী পাচার৷

যারা এতদিন অন্যদের ওপর চাপিয়ে এসেছেন কালো জাদুর ভয়, তারাই এখন ভয়ে জড়োসড়৷

পাচারকারী পেশেন্স বলছেন, ‘‘আমি নিজে তাঁর মুখ থেকে এই ঘোষণা শুনিনি, কিন্তু রেডিও ও টেলিভিশনে শুনেছি৷ ওবা সব বন্ধ করে দিয়েছেন৷ এখনো বাইরে গেলেই মেয়েরা চারপাশে জড়ো হয়, তাঁদেরকে ইউরোপ পাঠাতে হাতে-পায়ে ধরে৷ কিন্তু আমি রাজি হই না৷ আমি মরতে চাই না৷ সবাই এখন খুব ভয়ে ভয়ে আছে৷''

ভয় পেয়ে কাজ ছেড়ে দিয়েছেন খোদ কালো জাদুর পরিচালক আধ্যাত্মিক যাজকরাও৷ জুজু পরিচালনাকারী যাজক ডেভিড উবেবে বলেন, ‘‘এখন আর কেউ আমাকে বিরক্ত করে না৷ কেউ যদি আমাকে ইউরোপের মেয়েদের কাছ থেকে আরো অর্থ আদায়ে চাপ দেয়ার জন্য জাদু করতে বলে, তবুও আমি সেটা আর করি না৷ মৃত্যুর ভয় আমারও আছে৷''

এডিকে/এসিবি (রয়টার্স)