নখকে ফাঙ্গাস মুক্ত করবেন যেভাবে
নখে ফাঙ্গাস হলে তা যে শুধু দেখতে অসুন্দর বা অস্বাস্থ্যকর তাই-ই নয়, ছোঁয়াচেও বটে৷ ফাঙ্গাস ছড়ানোর ঝুঁকি অন্য ঋতুর চেয়ে শীতকালে অনেক বেশি৷ ফাঙ্গাসের কারণ ও দূর করার উপায় জেনে নিন ছবিঘর থেকে৷
যেভাবে জীবাণু ছড়ায়
অনেকেই মনে করেন পা অপরিষ্কার থাকার কারণে পায়ের নখে ফাঙ্গাস হয়, যা সম্পূর্ণ ঠিক নয়৷ তবে শীতকালে বন্ধ জুতো পরায় পা ঘেমে যায় এবং দীর্ঘ সময় ধরে ঘাম থাকায় নখে ফাঙ্গাস হতে পারে৷ তাছাড়া সুইমিংপুল, সমুদ্রস্নান, বাথরুম কিংবা অন্যের জুতো পরলেও ফাঙ্গাসের জীবাণু ছড়াতে পারে অর্থাৎ বিভিন্ন জীবাণু থেকে এই রোগটি পায়ে বাসা বাঁধতে পারে৷
ভুল ধারণা
পায়ের নখে ফাঙ্গাস বা ছত্রাকের সংক্রমণ হওয়ার কোনো নির্দিষ্ট বয়স নেই৷ যদিও অনেকের ধারণা বয়স হলে পায়ে ফাঙ্গাস হতে পারে৷ তবে কারো ক্ষেত্রে প্রথমে নখ হলদেটে আকার ধারণ করে আবার কারো বা শুরুতে নখের রং ধীরে ধীরে গাঢ় নীল বা কালোভাব হয় এবং একটু একটু করে মোটা এবং শক্ত হতে থাকে এবং অনেকসময় নখের সামনের দিকে ভাঙতে থাকে৷
রোগ নির্ণয়
ফাঙ্গাস শুধু নখের ওপরেই নাকি নখের নীচের ত্বককে আক্রান্ত করেছে এবং তা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ জানতে ত্বক বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়াই ভালো৷ রোগ নির্ণয়ের জন্য সাধারণত আক্রান্ত নখ থেকে সামান্য নখ কেটে নিয়ে তা পরীক্ষা করা হয়৷ ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হলে চিকিৎসকই তা জানাবেন৷ তা না হলে নখের গুরুত্ব বুঝে ডাক্তারই নখে লাগানোর ওষুধ দেবেন৷
সতর্কতা
মুখমণ্ডলের সৌন্দর্য্যের দিকেই সকলে বেশি নজর দিয়ে থাকে৷ হাত বা পায়ের সৌন্দর্য্য বা স্বাস্থ্যও কিন্তু কম গুরত্বপূর্ণ নয়৷ বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগী এবং গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে পায়ের যত্নে বিশেষভাবে সতর্ক থাকা উচিত বলে বিশেষজ্ঞদের মত৷
বিশেষ সতর্কতা ও ধৈর্যের পরীক্ষা
পায়ের ফাঙ্গাস বা সংক্রমণের ক্ষেত্রে প্রয়োজন ধৈর্য্যের৷ প্রথম কথা, ফাঙ্গাস হলে সারতে সময় লাগে৷ দ্বিতীয়ত, অনেক সময় কয়েক মাস বা বছর লেগে যায়৷ তাছাড়া চিকিৎসার পর ফাঙ্গাস সেরে গেলেও কিছুটা অসাবধানতার কারণে আবার ফিরে আসতে পারে৷ তাই সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে৷
খোলা জুতো বা স্যান্ডেল
পায়ের নখে ছত্রাক বা ফাঙ্গাস শুরু হচ্ছে দেখলেই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে৷ পা নিয়মিত পরিষ্কার রাখতে হবে এবং পা যথেষ্ট বাতাস পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার৷ তাই খোলা স্যান্ডেল বা জুতো পরা উচিত৷
পরিষ্কার মোজা
শীতকালে অনেক সময় মোজা ও জুতো না পরে উপায় থাকে না তখন প্রতিদিন গরম পানিতে ধোয়া পরিষ্কার মোজা পরা উচিত৷ সময় সুযোগ পেলে কিছুক্ষণের জন্য জুতো এবং মজা দু’টোই খুলে রাখলে উপকার হবে৷ পায়ের নখের এই সংক্রমণ রোগ নারী পুরুষ সকলেরই হয়ে থাকে৷
ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুকে দূরে রাখুন
সারাদিন পায়ে স্যান্ডেল বা জুতো যাই পরা হোক না কেন পা দু’টোকে জীবাণুমুক্ত রাখতে বাড়িতে এসেই তা খুলে রেখে পা ভালো করে ধুয়ে মুছে ফেলুন৷ তখন পায়ে যেমন আরাম পাওয়া যাবে, তেমনি জীবাণুমুক্ত রাখা সম্ভব হবে৷
নেইল পলিশ
নখে ফাঙ্গাস থাকা অবস্থায় নেইল পলিশ ব্যবহার করা উচিত নয়৷ নেইল পলিশে থাকা রাসায়নিক পদার্থ ফাঙ্গাসের ঝুঁকি আরো বাড়িয়ে দিয়ে নখের সুস্থতা কমিয়ে দিতে পারে৷ তবে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে অসুস্থ নখের জন্য তৈরি ট্রান্সপারেন্ট বিশেষ নেইল পলিশ ব্যবহার করা যেতে পারে৷ অনেকসময় যা ধূলোবালি থেকে নখকে মুক্ত রাখে৷
বেকিং সোডা
কুসুম গরম পানিতে বেকিং পাউডার মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিয়ে তা ফাঙ্গাস আক্রান্ত নখে হালকাভাবে লাগানোর পর শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন৷ এভাবে পরপর কয়েকদিন করে দেখুন৷ একটু পরিষ্কার হচ্ছে মনে হলে, এভাবেই করতে থাকুন৷ অন্যথায় প্রয়োজন নেই৷
নখের ফাঙ্গাসে নারকেল তেলের বিকল্প নেই
প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে খুব ভালো করে পা পরিষ্কার করে মুছে নিন৷ তারপর খানিকটা নারকেল তেল আঙুলে নিয়ে নখের ওপর এবং চারিদিকে খুব ভালো করে ঘষে দিন৷ একটু বেশি করেই লাগাবেন৷ আর কয়েক সপ্তাহ পর ফলাফল দেখে নিজেই চমকে যাবেন৷ বলা বাহুল্য, জার্মানিতে দিন দিন নারকেল তেলের কদর বাড়ছে, তাঁরা রান্না ও সৌন্দর্য্যচর্চায় এই ব্যবহার করছেন৷
নিজে পরীক্ষা না করাই ভালো
নানা ধরণের ফাঙ্গাসের ওষুধ বাজারের পাওয়া যায়৷ কার জন্য কোনটা প্রযোজ্য বা উপকার হবে তা অভিজ্ঞ জনদের কাছ থেকে জেনে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে৷ কারণ এই রোগ সারতে এমনিতেই সময় বেশি লাগে, কাজেই নিজে পরীক্ষা না করাই ভালো৷ এই পরামর্শগুলো জার্মানির পেডিকিওর ও স্কিন কেয়ার কর্মী ম্যুলার রডের৷