1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌ধর্মসংকটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২১ এপ্রিল ২০১৭

বিজেপির পরের লক্ষ্য পূর্ব ভারত, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ৷ বাংলা জয়ের এই যুদ্ধে বিজেপির অস্ত্রও সেই একটাই, হিন্দুত্ব৷ ফলে সমস্যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী খোদ মমতা ব্যানার্জি৷

https://p.dw.com/p/2bg1A
Bangladesch Mamta Bannerjee in Dhaka
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman

পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পর মানুষের রায়ে বাতিল হয়ে যাওয়া বামপন্থিরা এখন কার্যত শক্তিহীন৷ নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেওয়ার জন্য কখনও সখনও দু-একটি মিছিল ছাড়া, বামপন্থা যে আদৌ এই রাজ্যে টিকে আছে, সেটা বোঝাই যায় না৷ কাজেই পশ্চিমবঙ্গে বর্তমান শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস এবং তার নেত্রী মমতা ব্যানার্জি যে নিরঙ্কুশ রাজনৈতিক একাধিপত্য গত ছয় বছর ধরে ভোগ করে এসেছেন, তাতে এবার বাগড়া দিচ্ছে বিজেপি৷

ডয়চে ভেলের মুখোমুখি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

পূর্বতন বাম সরকারের মতো তৃণমূল কংগ্রেসও রাজ্যে সংখ্যালঘু তোষণের নীতি নিয়েছিল৷ তবে বাম শাসকেরা যেটা সুকৌশলে, পরিকল্পিতভাবে করতেন, সেটাই মমতার সরকার করে অনেক সরাসরি এবং প্রকাশ্যে৷ ইমাম ভাতা চালু করা, মাদ্রাসাগুলিকে বিশেষ উৎসাহ দেওয়া এবং মুসলিম সামাজিক ইস্যুতে রক্ষণশীলদের মন জুগিয়ে চলা, সেই তোষণনীতিরই উদাহরণ৷ তিন তালাকের ইস্যুতে সারা দেশে যখন বিরোধী জনমত তৈরি হয়েছে, তখন একমাত্র প্রগতিশীল পশ্চিমবঙ্গেই তিন তালাকের সমর্থনে মিছিল-সমাবেশ হয়েছে৷ বলা বাহুল্য যে, সেটা প্রশাসনের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়েই৷

এই পরিস্থিতিতে যারা মমতার সহায় হতে পারত, সেই বামপন্থিরাই এখন শক্তিহীন৷ মমতা নিজের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক স্বার্থেই বিজেপির মুসলিম বিরোধী, হিন্দুত্ববাদী, সাম্প্রদায়িক প্রচারের বিরুদ্ধে বামপন্থিদের পাল্টা ধর্ম নিরপেক্ষতাকে দাঁড় করাতে পারতেন, নিজের সহায়ক শক্তি হিসেবে৷ যে কারণে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি যেখানে যাবতীয় ব্যর্থতা এবং ঘাটতির দায় পূর্বতন বাম সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে দেন, রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে সেই তিনিই বার বার বামেদের ডেকেছেন সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামিল হতে৷ কিন্তু বামপন্থিরা সঙ্গত কারণেই বিমুখ৷ বাম নেতারা হয়ত এর মধ্যে মমতা ব্যানার্জির সরকারের পতনের সম্ভাবনাও দেখতে পাচ্ছেন৷ ওদিকে বিজেপি ব্যাপকভাবে হিন্দুত্বের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, এবং তাতে ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছে৷

Dilip - MP3-Stereo

উদ্বিগ্ন মমতা এই অবস্থায় নিজেকে ‘হিন্দু' প্রমাণের চেষ্টায় ব্যস্ত৷ কিন্তু তাঁর ‘মুসলিমপ্রীতি' যেমন দৃষ্টিকটু ছিল, আচমকা তাঁর এই হিন্দু হয়ে ওঠাও চোখে লাগছে৷ সদ্য ওড়িশার ভুবনেশ্বরে এক সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে মমতা যেমন চিটফান্ড কাণ্ডে সিবিআই-এর হাতে আটক দলীয় সাংসদ সুদীপ ব্যানার্জিকে দেখতে গেলেন, তেমনি ছুটে গেলেন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে পুজো দিতে৷ এবং পুজো দিয়ে বেরিয়ে এসেই ঘোষণা করলেন, তিনি খাঁটি হিন্দু৷ বিজেপি ভণ্ড৷ বিজেপির কর্মী সমর্থকরা কিন্তু এই ঘটনায় আমোদ পাচ্ছেন৷ কারণ, এতে একটা বিষয় অন্তত প্রমাণিত হয়ে যাচ্ছে যে, পশ্চিমবঙ্গে এখন খাঁটি হিন্দু হওয়ার রাজনৈতিক সুবিধা রয়েছে৷

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ যেমন ডয়চে ভেলের মাধ্যমে পাল্টা প্রশ্ন তুললেন যে, মমতা হঠাৎ নিজেকে এত হিন্দু হিসেবে প্রমাণ করতে ব্যস্ত হয়েছেন কেন?‌ কেনই বা তাঁর সার্টিফিকেট দরকার হচ্ছে?‌ তিনি মনে করেন, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতার মুসলিম তোষণের নীতি তাঁর ধর্মীয় চরিত্র সম্পর্কে মানুষকে সন্দিহান করে তুলেছে৷ মমতার এই আচরণ কি সারা দেশে এবং এই রাজ্যে বিজেপির হিন্দুত্ব নীতিরই সাফল্য?‌ যে কারণে মমতাকে বারবার বলতে হচ্ছে, তিনিও হিন্দু?‌ দিলীপ ঘোষ মনে করছেন, সেটা কিছুটা বটে৷ কিন্তু এ রাজ্যে এক হিন্দুজাগরণ শুরু হয়েছে বলেও তাঁর দাবি৷ যার আঁচ পেয়ে মমতাকেও বলতে হচ্ছে, তিনিও হিন্দু৷