1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দেশপ্রেম দেখাতেই হবে কেন!‌

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
২৬ অক্টোবর ২০১৭

সিনেমা হলে জাতীয় সংগীত বাজানো সংক্রান্ত আগের নির্দেশ থেকে কার্যত পিছিয়ে এলো ভারতের সর্বোচ্চ আদালত৷ জানিয়ে দিলো, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিক দেশের সরকার৷

https://p.dw.com/p/2mXD6
Indien Unabhängigkeitstag Feier
ছবি: picture-alliance/AP Photo/B. Das

ঠিক এক বছর আগে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত জানায় যে, দেশের সব সিনেমা হলে, সিনেমা শুরুর আগে জাতীয় সংগীত বাজানো বাধ্যতামূলক এবং দর্শকদের দাঁড়িয়ে উঠে সেই সংগীতকে সম্মান জানাতে হবে৷ বিতর্ক শুরু হয়েছিল তখন থেকেই৷ একটা বিতর্ক ছিল পুরোপুরি ব্যবহারিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যে, সবাইকে উঠে দাঁড়াতে বলাটা সিনেমা হল কর্তৃপক্ষের পক্ষে কীভাবে সম্ভব৷ বয়স্করা, শিশুরা, বা যারা শারীরিক প্রতিবন্ধী— তাঁদের উঠে দাঁড়ানো নিশ্চিত করা যাবে কী করে?‌ আর দ্বিতীয় প্রশ্নটা ছিল নৈতিক৷ জাতীয় সংগীত শুনে যিনি স্বেচ্ছায় উঠে দাঁড়াতে চাইছেন না, তাঁকে কেন বাধ্য করা হবে?‌ এতে আইন-শৃঙ্খলারও সমস্যা দেখা দিতে পারে, আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল খোদ সরকারের পক্ষ থেকেই৷

KakaliMitraBagchi - MP3-Stereo

কার্যত সমস্যা হয়েওছিল৷ দেশের নানা জায়গায়, সিনেমা হলে জাতীয় সংগীত বাজানোর সময় দাঁড়াতে অনিচ্ছুক দর্শকদের সঙ্গে ঝগড়া, মারামারি, হাতাহাতি, এমনকি পুলিশ ডেকে গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটেছিল৷ এবং সুপ্রিম কোর্টেই মামলা দায়ের হলো, ২০১৬ নভেম্বরের ওই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে যে, কেন সিনেমা হলে জাতীয় সংগীত বাজানো বাধ্যতামূলক হবে? দাঁড়িয়ে উঠে তাকে সম্মান জানানোই বা কেন ধরেবেঁধে করাবে আদালত?‌

অবশেষে সুপ্রিম কোর্ট কার্যত তার আগের রায় থেকে এক কদম পিছু হঠে এসে জানালো, বাধ্যতামূলক নয়, বরং এটা সিনেমা হল কর্তৃপক্ষের ইচ্ছার ওপরেই ছেড়ে দেওয়া হোক৷ ‘‘‌বাজাতে হবে'‌' নয়‌, ‘‘‌বাজাতে পারে'‌'৷ ‘‘‌শ্যাল প্লে'‌' নয়, ‘‘‌মে প্লে'‌'৷ এবং দর্শকদের দাঁড়িয়ে ওঠাটাও আর বাধ্যতামূলক রইল না৷ সুপ্রিম কোর্ট মেনে নিলো, সিনেমা হলে লোকে বিনোদনের সন্ধানে যায়৷ সেখানে তাঁদের ইচ্ছে না-ই হতে পারে দাঁড়িয়ে উঠে জাতীয় সংগীতকে সম্মান জানানোর৷ তাতে যে দর্শক দাঁড়িয়ে উঠলেন না, তিনি যে অন্যদের তুলনায় কম দেশপ্রেমিক, তা-ও প্রমাণ হয় না৷ তা ছাড়া, কেন একজন নাগরিককে তাঁর দেশপ্রেমের প্রমাণ অঙ্গে ধারণ করে ঘুরতে হবে?‌ সুপ্রিম কোর্টই এই প্রশ্ন তুলল৷ এবং জানাল, বিষয়টি বরং কেন্দ্রীয় সরকারই ঠিক করুক যে, আদালতের আগের নির্দেশটি আরও শক্তপোক্ত করার দরকার আছে, নাকি বিষয়টি নিয়ে এত কঠোরতার কোনও প্রয়োজন নেই৷ 

‌ইতিমধ্যেই দেশের নাগরিকদের এক বড় অংশের বিরক্তি যে, এই সামান্য, অগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে বিচার বিভাগ বা সরকারের আর সময় নষ্ট করার কোনও দরকার নেই৷ দেশে আরও গুরুতর সমস্যা আছে, যেগুলিতে এখনই নজর দেওয়া প্রয়োজন৷ আইনি দেশভক্তি নিয়ে এত হইহল্লার কোনও মানেই হয় না৷ একদল আছেন, যাঁরা মনে করেন জাতীয় সংগীত বাজলে যে কোনও নাগরিকের উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান জানানো উচিত৷ আর একদল আছেন, যাঁরা মনে করেন, দেশভক্তি জাহির করার বিষয় নয়, বরং অন্তর থেকে অনুধাবনের বিষয়৷ সেটা জোর করে, আইনি চাপ দিয়ে হয় না৷ সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক নির্দেশ কার্যত সেই দ্বিতীয় মতবাদকেই সমর্থন করলো৷

কেউ কেউ মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত বদল সুপ্রিম কোর্টের পিছু হঠে যাওয়া৷ কিন্তু আইনজীবীরা অন্য কথা বলছেন। কলকাতার অভিজ্ঞ আইনজীবী কাকলি মিত্র বাগচি ডয়চে ভেলেকে জানালেন, সুপ্রিম কোর্টের এ সংক্রান্ত রায়টি পড়লে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, প্রশ্নটা জাতীয় সংগীত শুনে উঠে দাঁড়াতে হবে কিনা, সে নিয়ে নয়৷ কারণ, ভারতীয় সংবিধান বলে, আইন বলে, জাতীয় সংগীত বাজলে উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান দেখাতে হবে। এ নিয়ে কোনও আইনি দ্বিমত অন্তত নেই। কিন্তু জাতীয় সংগীত কোথায় কোথায় বাজানো হবে, তা-ও আইনে নির্দিষ্ট করে বলে দেওয়া আছে৷ সেখানে সিনেমাহলকে সেই তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হবে কি না, সুপ্রিম কোর্ট বরং সেই সঙ্গত প্রশ্নটিই তুলেছে৷ এবং বিষয়টি কেন্দ্রীয় সরকারের দিকেই ফেরত পাঠিয়েছে যে, এই সিদ্ধান্ত সরকারকেই নিতে হবে৷ আর সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সুপ্রিম কোর্টের আগের রায় যেন কোনওভাবেই প্রভাব না ফেলে, সেটাও বিশেষভাবে বলে দিয়েছে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত৷