1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ান পরিবেশের বন্ধু হয়ে

১৬ সেপ্টেম্বর ২০১১

পরিবেশ বান্ধব বাতি, গাড়ি আর হোটেলের পর, এবার পরিবেশ বান্ধব উপায়ে ছুটি কাটানোর যেন একটা হিড়িক পড়েছে জার্মানিতে৷ কিন্তু ‘ইকো-ট্যুরিজম’ বা পরিবেশ বান্ধব ভ্রমণ – সে আবার কি? এ প্রশ্ন উঠতেই পারে৷

https://p.dw.com/p/12Zo1
পরিবেশ বান্ধব ভ্রমণ মানে পরিবেশের কাছে যাওয়াছবি: DW

বেড়ানো – বেশিরভাগ জার্মানদের জন্য বেড়ানো মানেই হলো অঢেল, নিরবচ্ছিন্ন সময় আর বিশ্রাম৷ সে পাঁচ-তারা বিলাসবহুল হোটেলেই হোক অথবা কোনো সূর্যস্নাত সমুদ্র সৈকতে৷ তাই বেড়াতে যাওয়ার আগে খুব কম মানুষই ভেবে দেখেন, তাঁদের ভ্রমণ পরিকল্পনা আদৌ পরিবেশ বান্ধব কি না৷ অবশ্য কীভাবে ঘুরে-বেড়ালে সেই ভ্রমণকে পরিবেশ বান্ধব বলে আখ্যা দেওয়া যাবে – তাতে মতানৈক্য থেকেই যায়৷

রাজধানী বার্লিনে অবস্থিত ‘ইকো-ইনস্টিটিউট'-এর পরিবেশ বান্ধব ভ্রমণ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মার্টিন শ্মিড জানান, ‘‘পশ্চিমা বিশ্বে, অন্তত জার্মানিতে ‘ইকো-ট্যুরিজম' বা পরিবেশ বান্ধব ভ্রমণ বলতে বোঝায়, পরিবেশ এবং তার পারিপার্শ্বিকতাকে অটুট রেখে বেড়াতে যাওয়া৷ স্বাভাবিকভাবেই, ‘মাস-ট্যুরিজম' সেই যুক্তিতে একেবারেই পরিবেশ বান্ধব নয়৷''

অর্থাৎ, পরিবেশ বান্ধব ভ্রমণ হলো পরিবেশের কাছাকাছি, সবুজের দেশে, পরিবেশ বান্ধব উপায়ে পাড়ি দেওয়া৷ কিন্তু, এতো কোনো সুস্পষ্ট সংজ্ঞা হলো না! তাই জার্মানিতেও পরিবেশ বান্ধব ভ্রমণের নামে বিভিন্ন পর্যটন সংস্থা, ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ‘ট্যুর' পরিকল্পনা করে থাকে৷

Kaptai Lake in Bangladesh Flash-Galerie
ছবি: DW

এই যেমন, বার্লিনের একটি পর্যটন সংস্থার মালিক আব্দেলাজিজ এল মেখফি তিনটি শর্তের কথা বললেন, ‘‘পরিবেশ বান্ধব ভ্রমণের প্রথম শর্ত হলো – পরিবেশের একেবারে কাছাকাছি চলে যাওয়া৷  খোলা আকাশের নীচে, মাটির কোলে, নদীর বুকে নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়া৷ দ্বিতীয়, ভ্রমণস্থানের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচিত হওয়া৷ এবং তৃতীয়, স্থানীয় মানুষের উন্নয়নে সহযোগিতা ও আর্থিক সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকা৷''

চলতি বছরের গোড়া থেকে, এ তিনটি শর্ত অনুযায়ীই মরক্কো'তে পরিবেশ বান্ধব ভ্রমণ আয়োজন করা শুরু করেন আব্দেলাজিজ এল মেখফি৷ যাঁরা সেই ‘প্যাকেজ-ট্যুর'-এ আগ্রহী হন, মরক্কো'তে তাঁদের জন্য মেখফি ব্যবস্থা করেন বড়, বিলাসবহুল হোটেলের বদলে ছোট, ছিমছাম ‘গেস্টহাউস' বা বাড়ি৷ ট্যুরের অনবদ্য অংশ হিসেবে ভ্রমণার্থিরা অংশ নেন স্থানীয় সাংস্কৃতিক আচার-অনুষ্ঠানে৷ ঘুরে-বেড়ানোর জন্য ব্যবহার করেন সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা – অনেকটা সেই দেশের একজন হয়ে বাস করার মতো৷ এমনকি, মরুভূমি বা পাহাড়ি এলাকায় যাওয়ার জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে গাধা বা ঘোড়ার গাড়িও ভাড়া করেন মেখফি৷ সবকিছুরই উদ্দেশ্য একটা – ভ্রাম্যমাণদের মরক্কোর আসল সৌন্দর্য দেখানো, সেখানকার পরিবেশ আর মানুষের একেবারে কাছে নিয়ে আসা৷

প্রথমদিকে, জার্মানরা বিমান ছাড়া কোনো জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার কথা ভাবতেই পারতেন না৷ অনেকে জানতেনই না জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাব বা কার্বন নির্গমনের কথা৷ এখন অবশ্য দূর দেশে যাওয়ার জন্য বিমান-ভ্রমণ একেবারে বাধ্যতামূলক হলে, অনেকেই অতিরিক্ত কার্বন নির্গমনের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ দিয়ে থাকেন৷ মার্টিন শ্মিড-এর কথায়, ‘‘আপনি যদি এখন ক্যারিবিয়ান কোনো দ্বীপে ছুটি কাটাতে চান, তাহলে আপনাকে হয়তো ১০০ ইউরো ক্ষতিপূরণ দিতে হতে পারে৷ তা জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল কমানোর জন্য এই মূল্য কি সত্যিই খুব বেশি?''

জার্মানির বহু পরিবেশ সচেতন মানুষই হয়তো বলবেন – ‘একেবারেই না'৷ তাছাড়া, ক্ষতিপূরণ বাবদ পাওয়া ঐ অর্থের সবটাই যে যাচ্ছে পরিবেশ রক্ষার খাতে৷ তাই এখন, বার্লিনে অবস্থিত ‘ইকো-ইনস্টিটিউট'-এর প্রধান কাজই হচ্ছে আরো বেশি মানুষকে এ ধরনের ভ্রমণ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করা৷ যাতে আরো বেশি সংখ্যক মানুষ পরিবেশের কাছাকাছি পৌঁছতে পারে৷ এই সবুজ পৃথিবীকে ভালোবাসতে পারে, তার বন্ধু হতে পারে৷

প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন