1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বর্ণবাদের পথে পশ্চিমবঙ্গ?

২৯ মার্চ ২০১৭

ভারতের রাজধানী দিল্লি থেকে সামান্য দূরে বর্ণবিদ্বেষী আক্রমণের শিকার হচ্ছে নাইজেরীয়রা৷ তবে শুধু দিল্লি নয়, উদার বলে পরিচিত শহর কলকাতাও কিন্তু কালো মানুষদের হেনস্থা করে যথেষ্ট৷

https://p.dw.com/p/2aDA2
Indien Noida Angriff auf afrikanische Studenten
ভারতের দিল্লিতে একটি শপিংমলে আফ্রিকানদের ঘিরে নিরাপত্তা বাহিনী ও সাধারণ জনগণছবি: Getty Images/AFP

কলকাতা শহরে যেসব নতুন আবাসন গড়ে উঠেছে গত ৮-১০ বছরে, সেখানে দেখা যায় ওদের৷ এরা পশ্চিম আফ্রিকা, মূলত নাইজেরিয়া থেকে আসা ছেলে-মেয়ে, যারা সাধারণত একা নয়, দল বেঁধে থাকে৷ এলাকায় তাদের আড্ডা, ঘোরাফেরা, যাতায়াত, সবই এক সঙ্গে৷ এরা প্রায় সবাই কলকাতা এবং শহরতলীর বিভিন্ন বেসরকারি কলেজে পড়াশোনা করে, সকলেই অল্পবয়সি৷ শহরের বিভিন্ন নাইটক্লাবেও অনেকেই নিয়মিত মুখ৷

ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শিক্ষায় শিক্ষিত বাঙালি সমাজে, যেখানে এখনও কালো মেয়েদের বিয়ে হওয়া মুশকিল, সেখানে এই কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ-তরুণীদের খুব একটা ভালো চোখে দেখা হয় না৷ তার একটা কারণ অবশ্য দেশজুড়ে যে জোচ্চুরি জালিয়াতির চক্র চলে, বিশেষ করে ক্রেডিট কার্ড ও অন্যান্য আর্থিক জালিয়াতি, অনেক সময়ই তার পেছনে খোঁজ মেলে নাইজেরীয়দের৷ অল্পবয়সি ছেলে-মেয়ে বলে এদের অনেকেই নানা ধরনের মাদক নিতে অভ্যস্ত, বিশেষ করে লেট নাইট পার্টিতে৷ হাতে যথেষ্ট টাকা থাকা, সমবয়সি ছেলে-মেয়েরা অনেকেই যেরকম কিছুটা বখে যায় এ সময়৷ কিন্তু ওরা কালো বলেই হয়ত নজরে পড়ে বেশি৷

দক্ষিণ কলকাতার পিকনিক গার্ডেন অঞ্চলে এরকম বহু নাইজেরিয় ছাত্র-ছাত্রীর বাস, যাদের নিয়ে স্থানীয়রা কেউ কেউ রীতিমত বিরক্ত৷ যদিও সেই বিরক্তির কোনো কারণ নেই৷ উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন যদি কারণ হয়, তা হলে সেটা আধুনিক প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের সামগ্রিক প্রবণতা৷ তার জন্য একা কৃষ্ণাঙ্গদের দোষারোপ করা অর্থহীন৷ কিন্তু ভারতের রাজধানীর মাত্র ৪০ কিমি দূরে, গ্রেটার নয়ডায় সেই অর্থহীন বৈষম্যেরই ভয়ংকর প্রকাশ দেখা গেল৷ এক মাদকাসক্ত তরুণের অকালমৃত্যুর দায় গিয়ে পড়ল স্থানীয় নাইজেরীয় ছাত্রদের ওপর, নিগৃহিত হতে হলো তাদের, কারণ লোকের ধারণা, নাইজেরিয়া থেকে আসে এই ছেলে-মেয়েরাই এলাকায় মাদকের ব্যবসা করে!‌ গুজবের ডালপালা ছড়াতে ছড়াতে এমন জায়গায় পৌঁছাল যে, রটে গেল একটি ছেলেকে মেরে, কেটে, রান্না করে খেয়েছে নাইজেরীয়রা!‌ ফলে ওরা যখন শপিং মলের মতো জনবহুল জায়গায় আক্রান্ত হলো, কেউ ওদের বাঁচাতে এগিয়েই আসেনি৷

কলকাতা শহরে নাইজেরীয় ছাত্রদের যাতায়াত শুরু হয়েছে সেই ১৯৮০-র দশক থেকে৷ সেই তালিকায় প্রথম উল্লেখযোগ্য এবং বিখ্যাত নাম চিমা ওকেরি৷ কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে কমার্স পড়তে আসা চিমার সহজাত ফুটবল দক্ষতা ছিল, যার সুবাদে তিনি কলকাতা ময়দানের তারকা ফুটবলার হয়ে যান অচিরেই৷ চিমার দেখানো পথেই আরও অনেক তরুণ নাইজরেরীয় ফুটবলার কলকাতায় খেলতে এসেছেন৷ কৃষ্ণাঙ্গ বলে তাঁরা কেউ কখনও বিদ্বেষের শিকার হয়েছিলেন কি?‌ কলকাতার প্রবীণ ফুটবল সাংবাদিক অরুণ সেনগুপ্তকে প্রশ্নটা করায় তিনি খুব জোর দিয়ে বললেন, না৷ এমন কোনো ঘটনার কথা তাঁর জানা নেই৷ কলকাতায় তো নয়ই, ভারতের কোথাও কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড়রা বর্ণবিদ্বেষের শিকার হননি৷

‘ভারতের কোথাও কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড়রা বর্ণবিদ্বেষের শিকার হননি’

এই মুহূর্তে নাইজেরিয়ার যে তারকা ফুটবলার কলকাতার ক্লাবে খেলছেন, তিনি ওডাফা ওকোলি৷ সফল এবং জনপ্রিয় ফুটবলার ওডাফাকে একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে যেন আগ্নেয়গিরির লাভামুখ খুলে গেল৷ একের পর এক ঘটনার কথা বলে গেলেন ওডাফা, যেখানে এই কলকাতা শহরের রাস্তায় স্রেফ কালো বলে তাঁকে অপদস্থ হতে হয়েছে৷ জানালেন, কোনো কারণ ছিল না, তাঁর দিক থেকে কোনো প্ররোচনাও ছিল না, তবু রাস্তায় লোকে ‘‌কালুয়া’ বলে টিটকিরি দিয়েছে৷

হ্যাঁ, ওডাফা বাংলা জানেন না, কিন্তু ‘‌কালুয়া’ এবং আরও নানা নোংরা, অশ্রাব্য গালিগালাজ তাঁর মুখস্থ হয়ে গেছে স্রেফ শুনে শুনে৷ অর্থ না জেনেই প্রত্যেকটা গালাগাল তিনি উচ্চারণ করলেন৷ বললেন, এ সব প্রায়ই তাঁকে শুনতে হয় রাস্তায়৷ মাত্র ৩১ বছরের এই ফুটবলার প্রতিবার ক্ষোভ জানানোর পরই হতাশ গলায় বলে যাচ্ছিলেন – এটা ঠিক নয়, এটা ঠিক নয়৷ আরও একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা বললেন ওডাফা৷ বললেন, নাইজেরিয়াতে প্রচুর সংখ্যক ভারতীয় কাজ করেন৷ নাইজেরিয়া থেকে যত ছাত্র-ছাত্রী ভারতে পড়তে বা খেলতে আসে, তার থেকে অনেক বেশি৷ কেমন হবে, যদি ওখানে সেই প্রবাসী ভারতীয়দের রোজ একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়?‌ ‘‌‘এই যে আমি বাড়ি যাই, লোককে বলি এখানকার কথা, তাঁরা সবাই শোনেন, রেগে যান৷ এবার তাঁরা যদি ওখানকার ভারতীয়দের ওপর শোধ তুলতে যান, কী বলে তাঁদের আটকানো যাবে? জানি না, আমি সত্যিই জানি না৷’’ বলছিলেন, আর চূড়ান্ত হতাশা ঝরে পড়ছিল তারকা ফুটবলার ওডাফা ওকোলির গলা থেকে৷

প্রিয় পাঠক, এই বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেন নীচে মন্তব্যের ঘরে...

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য