অরুণবাবু থাকেন কলকাতা শহরে, কিন্তু প্রতি শনি-রবিবার তিনি ট্রেন ধরে পৌঁছে যান সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকায়, যেখানে স্বাস্থ্য পরিষেবা অপ্রতুল৷ প্রায় নিখরচায় সেখানকার মানুষের চিকিৎসা করেন তিনি৷ নিজের সারা জীবনের সঞ্চয় ভাঙিয়ে সুন্দরবনের সাহেবখালিতে এক টুকরো জমি কিনে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রও তৈরি করেছেন ডা. মন্ডল৷ এই সব কিছু শুধু ওই একটি বিশ্বাস থেকেই, যে সমাজ থেকে শুধু নিয়েই যেতে নেই, কিছু ফিরিয়েও দিতে হয়৷
তাঁর এই চেষ্টা এবং আন্তরিকতা দেখে অনুপ্রাণিত হয়েই ডা. মন্ডলের বেশ কয়েকজন বন্ধুও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসেন৷ তাঁদের আর্থিক সহযোগিতায় এই সেবামূলক কাজটা চালিয়ে যাওয়া কিছুটা সহজ হয়েছে ডা. মন্ডলের কাছে৷ এবং যে চিকিৎসা পরিষেবা তিনি দেন সুন্দরবনে, সেটা সম্পূর্ণ নিখরচায় পাওয়া যায় না৷ ন্যূনতম একটা অর্থ তিনি পারিশ্রমিক হিসেবে নেন রোগীদের থেকে৷ তার কারণটাও খুব সুন্দর ব্যাখ্যা করেছেন ডা. অরুণোদয় মন্ডল যে, যে জিনিসটা বিনাশ্রমে, বা বিনা খরচে পাওয়া যায়, লোকে তার দাম দিতে জানে না৷ ফলে জিনিসটার অবমূল্যায়ন হয়৷
এই কাজে সমস্যা আছে, বাধা আছে, আছে অসহযোগিতাও৷ যেমন সুন্দরবনের স্থানীয় চিকিৎসকদের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন ডা. মন্ডল, যদি তাঁরাও সপ্তাহে বা মাসে একদিন করে আসেন তাঁর ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, রোগী দেখেন৷ কিন্তু কোনো সাড়া পাননি৷ তাতে অবশ্য দমে যাননি অরুণোদয় মন্ডল৷ পাথেয় করেছেন রবি ঠাকুরের গান — যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে!