1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পেঙ্গুইনদের সুরক্ষার উদ্যোগ

২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

পেঙ্গুইন শুধু অ্যান্টার্কটিকায় নয়, দক্ষিণ আফ্রিকায়ও দেখা যায়৷ তবে এই প্রজাতির অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়ছে৷ সরাসরি সংরক্ষণের উদ্যোগ ও বাড়তি সচেতনতা সত্ত্বেও খাদ্যের অভাবে তারা লুপ্ত হয়ে যেতে পারে৷

https://p.dw.com/p/2QfxF
Neuseeländischer Goldschopfpinguin
ছবি: picture-alliance/dpa/K.Wothe

সমুদ্রে শিকারের পর এবার বিশ্রামের পালা৷ পেঙ্গুইনদের জীবন ব্যস্ততায় ভরা৷ প্রতিদিনই তারা কয়েক ঘণ্টা সমুদ্রে মাছ ধরে৷ নিজেরা খায়, সন্তানদের জন্য মাছ ধরে নিয়ে যায়৷ দক্ষিণ আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে স্টোনি পয়েন্ট-এ পেঙ্গুইনদের কলোনি গোটা মহাদেশে সবচেয়ে বড় বসতি৷ কয়েক হাজার পেঙ্গুইন সেখানে বাসা বেঁধে থাকে৷

কুয়ান ম্যাকজর্জ এই কলোনির সুরক্ষার দায়িত্বে রয়েছেন৷ তিনি রাষ্ট্রীয় প্রকৃতি সংরক্ষণ সংগঠন ‘কেপনেচার'-এর হয়ে কাজ করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এই এলাকায় এটাই একমাত্র কলোনি, যা ফুলেফেঁপে উঠছে৷ দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূলে বাকি ২৭টি পেঙ্গুইন কলোনি হয় ছোট হয়ে যাচ্ছে, অথবা বিলুপ্ত হয়ে গেছে৷''

তাই তিনি প্রতি সপ্তাহে পেঙ্গুইন গণনা করেন৷ ডিম ও পেঙ্গুইনছানারা ভালো আছে কিনা, তা পরীক্ষা করেন৷ বেঁচে যাওয়া প্রতিটি প্রাণীই অত্যন্ত মূল্যবান৷ কুয়ান বলেন, ‘‘এই প্রজাতি লড়াই করে বেঁচে আছে৷ মহাসাগরের স্বাস্থ্য জানতে হলে এই প্রজাতির অবস্থা জানা অত্যন্ত জরুরি৷ তাই তাদের সেন্টিনেল স্পিশিজ বলা হয়৷ বায়োমাসের অবস্থা খারাপ হলে সেই প্রজাতিকে টিকে থাকার সংগ্রাম করতে হয়৷ বর্তমানে আমরা আফ্রিকার পেঙ্গুইনদের মূল অংশের ২ থেকে আড়াই শতাংশের উপর নজর রাখছি৷ মনে হয়, বর্তমানে মাত্র ২০,০০০ দম্পতি বংশবৃদ্ধি করছে৷''

সমুদ্রে মাত্রাতিরিক্ত মাছ ধরার ফলে পেঙ্গুইনদের টিকে থাকতে কষ্ট হচ্ছে৷ তারা যথেষ্ট খাবার পাচ্ছে না৷ তাছাড়া পানিতে প্লাস্টিক আবর্জনা ও তেল দুষণের কারণে অনেকের মৃত্যু হচ্ছে৷ স্টোনি পয়েন্ট মূল ভূখণ্ডে দু'টি পেঙ্গুইন কলোনির অন্যতম৷ দু'টি কলোনিই মানুষের বসতির মধ্যে অবস্থিত৷ পেঙ্গুইনরা সম্ভবত বাগান ভালোবাসে৷ তাদেরই একজন দিব্যি এক বার্বিকিউ-এর মধ্যে আরামে বসে আছে৷ বিজ্ঞানীদের অনুমান, বাড়িগুলি চিতাবাঘের মতো হিংস্র প্রাণী দূরে রাখে৷ বিশেষজ্ঞরা পেঙ্গুইনদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছেন৷ তাঁদেরই একজন কাটরিন লুডিনা৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা প্রতিটি পাখির শরীরে আলাদা আইডি লাগিয়ে দেখি, তারা কতদিন বাঁচে৷ এভাবে আমরা প্রজাতি হিসেবে পেঙ্গুইনদের অস্তিত্ব হিসেব করি৷ তাদের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমছে৷ তাদের কত ঘনঘন দেখা যায়, তার ভিত্তিতে তাদের বাঁচার হার ও প্রকৃতিতে টিকে থাকার সম্ভাবনা হিসেব করতে পারি৷''

উপকূলবর্তী এলাকায় পর্যটকদের সংখ্যা বাড়ছে, যার ফলে পেঙ্গুইনদেরও উপকার হচ্ছে৷ নৌকায় করে পর্যটকরা বিভিন্ন কলোনি দ্বীপে যাচ্ছেন৷ বছর পঞ্চাশেক আগে ডায়ার আইল্যান্ড ছিল পেঙ্গুইনদের সবচেয়ে বড় ব্রিডিং কলোনি৷ প্রায় ২৫,০০০ পেঙ্গুইন দম্পতি এখানে বাসা বেঁধেছিল৷ কিন্তু পাখির বিষ্ঠা ও ডিম শিকারিদের দৌরাত্ম্যের ফলে সেই বসতি প্রায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে৷

নৌকা ভ্রমণের আয়ের অর্থ থেকে পরিবেশ সংরক্ষণকারীরা পেঙ্গুইন সুরক্ষা কেন্দ্র গড়ে তুলছেন৷ আহত প্রাণীদের সেখানে আবার নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহায্য করা হয়৷ ডায়ার আইল্যান্ড সংরক্ষণ ট্রাস্টের শুলানি লায়ো বলেন, ‘‘সিলের কামড়ের ফলে এই প্রাণীটির শরীরে একটা ক্ষত রয়েছে৷ এখন সেটা পরিষ্কার করলাম৷ সে তিন সপ্তাহ আমাদের সঙ্গে থাকবে, তারপর ছেড়ে দেবো৷ এবার তাকে খাওয়ানো হবে৷''

শক্তি ফিরে পেলে সে আবার সমুদ্রে ফিরে যেতে পারবে৷ দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূলে জীববৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে পেঙ্গুইনদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে৷ স্টোনি পয়েন্টে মানুষকে পেঙ্গুইনদের গুরুত্ব বোঝানো এই কাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ৷ কলোনির মধ্য দিয়ে হাঁটার আলাদা রাস্তা রয়েছে৷ বোর্ডে লেখা তথ্য পড়ে পর্যটকরা পেঙ্গুইনদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারেন৷  এক পর্যটক বললেন, ‘‘মানুষকে সঠিক তথ্য ও শিক্ষা দেওয়া উচিত৷ পরিবেশবান্ধব পর্যটনে ঠিকমতো ভারসাম্য আনলে বড় মাত্রার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে৷ অন্যদিকে ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ না করলে নেতিবাচক প্রভাবও পড়তে পারে৷''

বিশেষ করে সমুদ্রবক্ষে পেঙ্গুইনদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা কার্যত অসম্ভব৷ উপকূল থেকে দূরে আন্তর্জাতিক জেলেদের বহরের কাছে পেঙ্গুইনদের তেমন কোনো মূল্য নেই৷ কিন্তু সেখানেই পেঙ্গুইনদের অস্তিত্বের সংগ্রাম চলছে৷ মাছের পরিমাণ কমে গেলে পেঙ্গুইনদেরও মৃত্যু হবে৷ বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই প্রবণতা বন্ধ করা না গেলে বিশ বছরের মধ্যে এই প্রজাতি পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে৷

ইউর্গেন শ্নাইডার/এসবি
দেবারতি গুহ

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য