1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তামিল নাড়ুতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নতুন উদ্যোগ

৮ আগস্ট ২০২৩

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বড় একটি ত্রুটি হচ্ছে, এর মাধ্যমে আমাদের তৈরি করা বর্জ্যের কেবল ছোট একটি অংশই পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে আবার ফিরিয়ে আনা হয়।

https://p.dw.com/p/4Usza
ফাইল ফটো
ফাইল ফটোছবি: DW

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বড় একটি ত্রুটি হচ্ছে, এর মাধ্যমে আমাদের তৈরি করা বর্জ্যের কেবল ছোট একটি অংশই পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে আবার ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু যেসব বর্জ্য পুনর্ব্যবহার করা হয় না, সেগুলোও ল্যান্ডফিলে গিয়ে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। তামিল নাড়ুর এক উদ্যোগ সেই পরিস্থিতিতে পরিবর্তন আনতে চাচ্ছে। নজর না দেয়া বর্জ্যেও যে অনেক কিছুই পুনর্ব্যবহার করা সম্ভব, সেটিই হাতেনাতে দেখিয়ে দিচ্ছে তারা।

তামিল নাড়ুতে একটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উদ্যোগ তাদের কাজের মূল লক্ষ্য হিসাবে বেছে নিয়েছে নিম্ন-মূল্যের বর্জ্যকে। এসব বর্জ্য সাধারণত বেশিরভাগই ল্যান্ডফিলে স্থান পায়। এই উদ্যোগে বর্জ্য উপাদানগুলোকে উৎসেই আলাদা করা হয়। তারপর সেগুলোকে নতুন পণ্যে রূপান্তর করা হয়, বা মেরামত করে বিক্রি করা হয়।

এ যেন আবর্জনার সাগর। যত দূর চোখ যায়, কেবল বর্জ্য।

তামিল নাড়ুর এই সুউচ্চ ল্যান্ডফিলে প্রতিদিন প্রায় পাঁচ হাজার ছয়শ টন বর্জ্য ফেলা হয়। এর ওজন এগারোশ হাতির সমান।

চেন্নাই ভিত্তিক একটি সামাজিক উদ্য়োগ ওয়েস্টেড ৩৬০ সলিউশনস এই পরিবেশগত সংকটের সমাধানে এগিয়ে এসেছে। যেসব বর্জ্যকে সাধারণত উপেক্ষা করা হয়, তারা সেগুলো নিয়েই কাজ করে।

ওয়েস্টেড ৩৬০ সলিউশনস এর প্রতিষ্ঠাতা আন আনরা বলেন, ''সবাই জানে যে প্লাস্টিক, গ্লাস এবং কাগজ পুনর্ব্যবহার করা যায়। কিন্তু আমি যেসব বর্জ্য নিয়ে কাজ করছি, সেগুলো নিয়ে কেউ কথাও বলে না, গবেষণাও করে না। তারা সেগুলো সংগ্রহও করতে চায় না।''

এই প্রতিষ্ঠান যেসব পণ্য প্রক্রিয়াজাত করে, তার মধ্যে রয়েছে টেট্রাপ্যাক, ব্যবহৃত কাপড়, স্যুটকেস এবং প্লাস্টিক। এসব উপাদান সহজে পঁচে না এবং কয়েক শতক ধরে পরিবেশে থেকে যায়। কিন্তু এগুলোও মূল্যবান হতে পারে।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় তামিল নাড়ু

ওয়েস্টেড ৩৬০ সলিউশনস এসব পণ্যকে পুনর্ব্যবহার উপযোগী করে ব্যবসা এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে একটা সুযোগ হিসাবে তুলে ধরতে চায়। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপক আয়েশা আজমল জানান, ''এটি আমাদের বর্জ্য আলাদা করার স্থান। এখানে এসে মানুষ তাদের বর্জ্য ফেলে যায়। এখানে দেখতে পাচ্ছেন কসমেটিকের স্যাম্পলের বোতল। এর নীচের অংশ কাঁচ এবং সেটা পুনর্ব্যবহার যোগ্য। বোতলের ক্যাপ প্লাস্টিকের, সেটিও পুনর্ব্যবহারযোগ্য। আমরা এগুলো আলাদা করি। শুরুতে আমরা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বর্জ্য আলাদা করি।''

বর্জ্য থেকে পরবর্তীতে নতুন জিনিস তৈরির জন্য এগুলো আলাদা করা জরুরি। দেখুন টেট্রাপ্যাক থেকে তৈরি চেয়ার।

১০ জন কর্মী শহরে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করেন। প্রতিষ্ঠিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অনেক ত্রুটির কথা তুলে ধরেন আন আনরা। তিনি বলেন, ''আমি নিজের বাসাতেও আলাদা করে বর্জ্য ফেলতাম। এক মাস পর আমি স্থানীয় বর্জ্য বিক্রেতাকে ডাকি। তিনি এসে আমার আলাদা করা বর্জ্যকে আবার আলাদা করেন। একটা বড় স্তুপে, আরেকটা ছোট স্তুপে। আমি কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, তিনি কেবল ছোট স্তুপের বর্জ্য পুনর্ব্যবহার উপযোগী করতে পারবেন। বড় স্তুপের বর্জ্য তিনি ল্যান্ডফিলে ফেলে দিবেন। তখনও আমি ভাবলাম, আমাকে এই অবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। এভাবেই আমার যাত্রা শুরু হয়।''

শুরুটা অবশ্য সহজ ছিল না। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এমন এক ব্যবসা যেটির ব্যাপারে অনেক নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। পাশাপাশি ভোক্তাদের মানসিকতাতেও পরিবর্তন প্রয়োজন। আনা আনরা বলেন, ''সব বর্জ্যই বর্জ্য নয়। এটি আসলে সম্পদ বা কাঁচামাল। টেকসই হওয়াটা নতুন কোনো ধারণা নয়। আমাদের পূর্বপুরুষেরা, এমনকি ৯০ এর দশক পর্যন্ত সবাই তাদের ভাই-বোনের জিনিস ব্যবহার করতো। কেনাকাটাও হতো স্থানীয় পর্যায়ে। ফলে টেকসই জীবনের জন্য আমাদের পেছনে ফিরতে হবে।''

এ লক্ষ্যেই এই উদ্যোগের একটি নিজস্ব সেকেন্ড-হ্যান্ড দোকানও রয়েছে। আন আনরা চান মানুষ নিজেদের মানসিকতা পরিবর্তন করে সেকেন্ড-হ্যান্ড জিনিস কিনুক। নতুন পণ্য একেবারেই প্রয়োজনীয় হলে সেগুলো হওয়া উচিত উচ্চমানের এবং স্থায়ীত্বশীল। কারণ এতেই কমানো সম্ভব বর্জ্যের পরিমাণ।

এডিকে/কেএম