টয়লেটের ভেতরেই রান্নাঘর!
একসঙ্গে পায়খানা আর রান্নাঘর? হংকংয়ে সেটা কোনো দুঃস্বপ্ন নয়, বরং নির্মম বাস্তব৷ সব দৃষ্টিকোণ থেকেই হংকংয়ে জায়গার অভাব, কাজেই সেখানে মানুষকে যেভাবে মাথা গুঁজে থাকতে হয়, তা অবর্ণনীয়৷
রান্না করতে হলে...
বাঁ-দিকে প্রথমে টয়লেট; তার পাশে কিচেন সিংক, যার ওপর আবার মাংস বা শাকসবজি কাটার জায়গা; তার পাশে হটপ্লেট ও কড়াই, যেখানে রান্না হবে৷ ডানদিকে ওয়াশিং মেশিন, রাইস-কুকার ইত্যাদি৷ হংকংয়ের এই খুপরি ফ্ল্যাটে বাস, সেথা দম নেওয়াতেই নাভিশ্বাস...
বাসস্থান, নাকি মালগুদাম?
ক্যানাডার আলোকচিত্রী বেনি ল্যাম একটি দারিদ্র্য দূরীকরণ এনজিও-র হয়ে হংকংয়ে মানুষজন কিভাবে বাস করেন তা দেখাতে এই ছবিগুলো তোলেন৷ খেয়াল রাখবেন: টেলিভিশন, বিয়ারের ক্যান বা টয়লেট পেপার, একবিংশ শতাব্দীর সভ্যতার কোনো আনুষঙ্গিকই বাকি নেই – এমনকি দেয়ালে ফুটবলের পোস্টার অবধি৷
ছিল বাথরুম, হয়েছে রান্নাঘর
যেন সুকুমার রায়ের হাঁসজারুর কোনো আধুনিক সংস্করণ! হংকংয়ের জনসংখ্যা ৭৫ লাখ ছাড়িয়েছে, অথচ আর বাড়ি তৈরির কোনো জায়গা নেই বললেই চলে৷ কাজেই ফ্ল্যাট বা বাড়ির ভাড়া ও দাম আকাশে চড়েছে৷ সাধে কি আবাসনের দৃষ্টিকোণ থেকে হংকং বিশ্বের সবচেয়ে মহার্ঘ শহরগুলির মধ্যে পড়ে!
স্টার ওয়ার্স থেকে স্মার্টফোন
কথায় বলে, যদি হয় সুজন, তেঁতুলপাতায় ন’জন৷ আজকাল আর তেঁতুলপাতায় ন’জনকে ধরাতে হয় না, তবে জিনিসপত্র ধরাতে হয় বৈকি৷ কাজেই দেয়াল থেকে ব্যাগের পর ব্যাগ ঝোলে৷ হংকংয়ে নাকি ৮৮,০০০ এ ধরনের ফ্ল্যাট বা খোঁদল কিংবা গুদামঘরে লাখ দুয়েক মানুষ বাস করছেন৷ এরা গৃহহারা নন, চাকরিবাকরিও আছে৷ কিন্তু সে চাকরিতে এই খোঁদলের বেশি মাথা গোঁজার স্থান হয় না৷
দুই দেয়ালের মধ্যে নানান দৃশ্যকে...
সাজিয়ে নিয়ে দেখি শি জিনপিং-কে৷ ২০০৭ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে হংকংয়ের কেন্দ্রীয় এলাকায় ফ্ল্যাটের দাম দ্বিগুণ হয়ে বর্গমিটার পিছু প্রায় ১৪ হাজার ডলার কিংবা ১১ হাজার ইউরোতে দাঁড়ায়৷ কাজেই বহু খেটে খাওয়া মানুষ হংকংয়ে বাস করেন মুক্ত প্রকৃতিতে জীবজন্তুদের মতো: মাথা গোঁজার জায়গা হলেই হলো৷
তোষকের সাইজের ফ্ল্যাট
তার ওপর শুয়ে ক্যান থেকে বিনস খেতে খেতে টেলিভিশন দেখতেই বা আপত্তি কি? ডানদিকে নিয়ন লাইটের টিউবটাও খেয়াল করবেন৷ জানলা-দরজা নেই তো কী হয়েছে? ছারপোকা আর আরশোলা, নিখর্চায় দুই’ই পাচ্ছেন...
খাঁচা, নাকি শবাধার?
হংকংয়ের লোকজন এ ধরনের ফ্ল্যাটগুলিকে ঐ নামেই ডেকে থাকে৷ হংকংয়েও ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান ক্রমেই বেড়ে চলেছে৷ তবে সুবিশাল শপিং মল, অভিজাত হোটেল আর বহুতল আবাসিক ভবনের সঙ্গে এই খাঁচা বা কফিনগুলোর তফাৎ বোধহয় তার চেয়েও বেশি৷ মুম্বাই সম্পর্কে এককালে বলা হতো, সেখানে জায়গা থাকে শুধু বাসিন্দাদের হৃদয়ে৷ হংকং-এর ক্ষেত্রেও কি তা বলা উচিত?
ডিম আগে, না মুরগি আগে?
স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, ছিল বাথরুম, হয়েছে রান্নাঘর৷ তবে সাধ করে নয়৷ হংকংয়ে সরকারি আবাসন পেতে নাকি গড়ে বছর পাঁচেক সময় লাগে৷ আর একা মানুষ হলে, দশ বছরের বেশি অপেক্ষা করাটাও নাকি অস্বাভাবিক কিছু নয়৷ এই পরিস্থিতিতে ফ্ল্যাটের বদলে শুধু বাথরুমটা ভাড়া দিতে চাইলেও ভাড়াটের কোনো অভাব হয় না৷
বাঁচার তাগিদ
রাইস-কুকারের পাশেই ওয়াশিং মেশিন; তার তলায় বাক্সপ্যাঁটরা; তার তলায় বিছানা...৷ জাতিসংঘ হংকংয়ের এই খাঁচা বা কফিন ফ্ল্যাটগুলোকে বলেছে ‘মানব মর্যাদার প্রতি অবমাননা৷’ হংকং সরকার বলছেন, ২০১৭ সালের মধ্যে আরো দু’লাখ আশি হাজার সরকারি ফ্ল্যাট তৈরি হবে৷ তখন কি এই খাঁচা বা কফিনগুলো খালি পড়ে থাকবে? সাধে কি কবি বলেছেন, জীবনের ধন কিছুই যাবে না ফেলা...৷