1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ট্রাম্প পাকিস্তানের জন্য কঠোর!

২৮ জানুয়ারি ২০১৮

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার আফগানিস্তান এবং ভারতকে সাহায্য করছে৷ কিন্তু পাকিস্তানের প্রতি বিরূপ আচরণ করছে৷ অভিমত কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের৷ কিন্তু কেন? এর পিছনের কূটনীতিটি ঠিক কী?

https://p.dw.com/p/2rXlF
USA Ashraf Ghani und Donald Trump auf der UN Vollversammlung in New York
ছবি: Getty Images/AFP/B. Smialowski

উপমহাদেশে ক্ষমতার ভারসাম্য কি বদলাচ্ছে? প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল আগেই৷ প্রশ্নটি আরও জোরদার হয়েছে৷

বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্তানের প্রতি ঠিক যতটা সদয়, পাকিস্তানের প্রতি ঠিক ততটাই বিরূপ৷ শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের অভিযোগ, পার্শ্ববর্তী দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত এবং আফগানিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে ট্রাম্প সরকার পাকিস্তানকে আরও বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছে৷

ক্ষমতার দ্বিতীয় পর্বে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ঘোষণা করেছিলেন, আফগানিস্তান থেকে ক্রমশ সৈন্য সরিয়ে নেবে অ্যামেরিকা৷ আফগানিস্তানকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে৷ নিজেদের সমস্যা নিজেদেরকেই মেটাতে হবে হামিদ কারজাইয়ের সরকারকে৷ প্রেসিডেন্সির একেবারে শেষ অধ্যায়ে আফগানিস্তান থেকে ৯ হাজার সৈন্যও ফিরিয়ে এনেছিলেন ওবামা৷

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই সে কাজ করেছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট৷ কারণ আফগানিস্তানে বছরের পর বছর সেনা রেখে দেওয়া নিয়ে মার্কিন জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছিল৷ অন্যদিকে, অ্যামেরিকার এই সিদ্ধান্তে খানিক ক্ষুণ্ণই হয়েছিল আফগানিস্তান৷ তারা বুঝতে পারছিল, এই মুহূর্তে আফগানিস্তানের যা অবস্থা, তাতে মার্কিন সেনা চলে গেলে তালিবান এবং অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনগুলো সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে ঝাঁপিয়ে পড়বে, যা আফগানিস্তানের জন্য খুব ভালো হবে না৷ বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে আশঙ্কাও প্রকাশ করেছিল আফগানিস্তান৷ কিন্তু ওবামা প্রশাসন আশার আলো দেখায়নি৷ অন্যদিকে, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য দু'দেশের সঙ্গেই একরকম সমঝোতা চালিয়ে যাচ্ছিলেন ওবামা৷ একদিকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা হচ্ছিল, অন্যদিকে পাকিস্তানকে সামরিক খাতে বিপুল পরিমাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছিল৷

ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরেই ছবি বদলে যায়৷ ওবামার আফগানিস্তান নীতি সম্পূর্ণ বদলে ফেলেন ট্রাম্প৷ জানিয়ে দেন, আফগানিস্তান থেকে এখনই সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার প্রশ্ন নেই৷ কারণ, অ্যামেরিকা সৈন্য সরিয়ে নিলে সেই জায়গা দখল করবে আইএস এবং তালিবান৷ অ্যামেরিকা তা কোনোভাবেই হতে দিতে চায় না৷ তালিবানকে নিঃশেষ করতে যথেষ্ট সময় অপেক্ষা করতে রাজি আছে অ্যামেরিকা৷ হয় তারা শান্তি বৈঠকে আসুক, নইলে যুদ্ধ জারি থাকবে৷

ট্রাম্পের কথা আসলে আফগানিস্তান প্রশাসনের মনের কথা বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা৷ তাঁদের বক্তব্য, আফগানিস্তান বিভিন্ন মঞ্চে যে কথা বলতে চেয়েছিল, ট্রাম্পের প্রশাসন সে কথাই সমর্থন করছে৷ শুধু তাই নয়, ক্ষমতায় এসে আফগানিস্তানে আবার নতুন করে সেনা পাঠিয়েছেন ট্রাম্প৷ প্রয়োজনে আরও সৈন্য পাঠানো হবে বলেও জানিয়েছেন৷ এ বিষয়টি আফগানিস্তানের জন্য স্বস্তির৷ পাশাপাশি ট্রাম্প জানিয়েছেন, আফগান সৈন্যবাহিনীকে তৈরি করাও অ্যামেরিকার লক্ষ্য৷ অর্থাৎ, মার্কিন অর্থ আফগানিস্তানে পৌঁছবে৷ এবং মার্কিন সৈন্য শত্রুর হাত থেকে আফগানিস্তানকে রক্ষা করবে৷

মার্কিন-আফগান সম্পর্ক নিয়ে এ পর্যন্ত কোনো সমস্যা ছিল না পাকিস্তানের৷ যদিও কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ মনে করেন, আফগানিস্তানের দিকে নজর আছে পাকিস্তানের৷ তাঁরা জানেন, অ্যামেরিকা খুব বেশিদিন আফগানিস্তানে সৈন্য রাখতে পারবে না৷ এবং সে জায়গা দখল করবে আফগান তালিবান, হাক্কানি নেটওয়ার্কের মতো জঙ্গি সংগঠনগুলি৷ ফলে পাক-আফগান সীমান্ত সুরক্ষিত রাখতে হলে এই গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা জরুরি৷ ওবামা প্রশাসনের নীতি ঘোষণার পর সে কাজে আরও খানিকটা অগ্রসরও হয়েছিল পাকিস্তান৷ পাশাপাশি, ভারতের সঙ্গে প্রক্সি যুদ্ধের ক্ষেত্রেও এই আফগান তালিবানকে ব্যবহার করা হয় বলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বহুদিনের অভিযোগ ভারতের৷

নতুন বছরের প্রথম দিনেই এসব দাবি এবং অভিযোগকে কার্যত মান্যতা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ টুইটে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন তিনি৷ ট্রাম্প বলেন, বোকার মতো পাকিস্তানকে লক্ষ লক্ষ ডলারের সহায়তা দিয়েছে অ্যামেরিকা৷ বিনিময়ে পাকিস্তান কেবলই ফেরত দিয়েছে বিশ্বাসঘাতকতা৷ আফগান তালিবান, হাক্কানি নেটওয়ার্কের সঙ্গে পাকিস্তান যোগাযোগ রাখছে৷

ট্রাম্পের টুইটের কড়া জবাব দেয় পাকিস্তানও৷ দেশটি পক্ষ থেকে বলা হয়, ভারতের সুরে কথা বলছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, অথচ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তান সবরকম সাহায্য করেছে অ্যামেরিকাকে৷ কিন্তু অ্যামেরিকা সে কথা মনে রাখছে না৷

ট্রাম্পের টুইটের পর পাকিস্তান জুড়ে বিক্ষোভ হয়৷ তার মধ্যেই হোয়াইট হাউস জানিয়ে দেয় যে, সামরিক খাতে পাকিস্তানের সমস্ত সহায়তা বন্ধ করছে অ্যামেরিকা৷ দু'দেশের সম্পর্ক আরও তলানিতে পৌঁছায়৷

অন্যদিকে, ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সুসম্পর্ক এখন বিশ্ব রাজনীতিতে আলোচনার বিষয়৷ দু'দেশেই পরস্পরের প্রতি যথেষ্ট আতিথেয়তা দেখাচ্ছে৷ ফলে বাস্তবচিত্রটা দাঁড়াচ্ছে অন্যরকম৷ একদিকে আফগানিস্তান, অন্যদিকে ভারত, দু'দেশের সঙ্গে সমঝোতা করে পাকিস্তানকে খানিক কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে অ্যামেরিকা৷ ক্ষমতার ভারসাম্য টলছে৷ পাকিস্তানের পক্ষে যা মোটেও সুখকর নয়৷

মাসুদ সাইফুল্লাহ/এসজি

প্রতিবেদনটি সম্পর্কে আপনার কোনো মতামত থাকলে লিখুন নীচের ঘরে৷