1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘টিভি সিরিয়াল আর এফএম রেডিও ভাষা বিকৃত করছে’

২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১১

অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বাহান্ন’র ভাষা আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী৷ তবে, নিজেকে ভাষা সৈনিক বলতে নারাজ তিনি, বিশেষ করে সৈনিক শব্দটিকে ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করার পক্ষে নন তিনি৷

https://p.dw.com/p/10MDy
ছবি: DW

রফিকের মরদেহ

বাহান্নর ভাষা আন্দোলনকে ক্যামেরাবন্দী করতে পেরেছিলেন খুব কম মানুষ৷ রফিকুল ইসলাম তাদেরই একজন৷ বর্তমানে আমরা ভাষা আন্দোলনের যে আলোকচিত্র দেখি, তার অধিকাংশই তুলেছেন রফিকুল ইসলাম৷ সেসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিনি৷ ২১শে ফেব্রুয়ারি গুলিবিদ্ধ একাধিক আন্দোলনকারীকে খুব কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা রয়েছে এই শিক্ষাবিদের৷ ডয়চে ভেলে'কে তিনি সেই অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন, একটা লাশ আমি দেখেছি৷ তখন মেডিকেল কলেজের মাঝখানের প্রবেশদ্বারে দাঁড়িয়ে ছিলাম আমি এবং আমানুল হক৷ এই সময় অ্যাম্বুলেন্সে করে একটা বুলেটবিদ্ধ লাশ ওরা নামালো৷ বুলেটে তাঁর মাথার খুলি উড়ে গেছে, ঘিলু গড়িয়ে পড়ছে৷ এবং মাথা থেকে ধোঁয়া বেরুচ্ছে৷ এটা ছিল ভাষা আন্দোলনের প্রথম শহীদ রফিকউদ্দিন আহমেদের মরদেহ৷

আবুল বরকত

অপর ভাষা শহীদ আবুল বরকতকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনতে সহায়তা করেছিলেন রফিকুল ইসলাম৷ তিনি বলেন, বরকতকে আমরা যখন মেডিকেল কলেজের জরুরী বিভাগে নিয়ে যাই, তখন দেখি অসংখ্য বুলেটবিদ্ধ, তাদের মধ্যে কে মৃত কে জীবিত বোঝা কঠিন ছিল৷ আবুল বরকত সেদিন রাতেই অপারেশন থিয়েটারে মারা যান৷

Rádio Bombolom FM, Bissau, Guinea-Bissau
‘এফএম রেডিও ভাষা বিকৃত করছে’ছবি: DW

ছাত্র-জনতার আন্দোলন

রফিকুল ইসলাম জানান, দেশভাগের পর ভাষা আন্দোলনের শুরুটা শিক্ষার্থীরা করলেও ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি সেই আন্দোলনে যোগ দেয় আপামর জনতা৷ ঢাকায় ছাত্রদের উপর যখন পুলিশ গুলি ছোঁড়ে, তখন মেডিকেল কলেজের আশপাশ দিয়ে এগিয়ে আসে সাধারণ মানুষ৷ সামিল হয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে৷ সেদিন পুলিশের গুলিতে নিহতদের মধ্যে তাই সাধারণ জনতাও ছিল৷ তিনি বলেন, একুশে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার ঘন্টাখানেকের মধ্যেই সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিনত হয়৷ সেসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠ থেকে জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল মারতে শুরু করে৷ কাজেই ২১ তারিখে যখন থেকেই ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হয়, ভঙ্গকারীদের উপর পুলিশ যখন লাঠি, টিয়ার গ্যাস ছুঁড়তে শুরু করে তখনই সাধারণ জনতা এই আন্দোলনে শরিক হয়৷

নিহতের সংখ্যা

বাহান্নর ভাষা আন্দোলনে ঠিক কতজন মারা গিয়েছিল? কোন পরিসংখ্যান বা আনুমানিক তথ্য কি আপনার কাছে আছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের অনুমান যে ২১ তারিখ, ২২ তারিখ, ২৩ তারিখ - এই দু'তিন দিনে মধ্যে অন্তত আটজন মারা যান৷ তাদের মধ্যে একজন ছিলেন রিকাশা চালক, তাঁর নাম আউয়াল৷ আরেকজন বালক ছিল, নাম শফিউল্লাহ৷ এদের লাশ গুম করে ফেলেছিল৷

রফিকুল ইসলাম মনে করেন, ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্মকে খুব কমই জানানো হচ্ছে৷ বিশেষ করে ইংরেজি মাধ্যমে বা মাদ্রাসায় যে শিশুরা পড়ছে, তাদেরকে বাংলা ভাষার ইতিহাস তেমন একটা জানতে দেওয়া হয়না৷ এফএম রেডিও-র ইংরেজি বাংলা মেশানো জগাখিচুড়ি ভাষা নিয়েও আপত্তি রয়েছে এই ভাষা আন্দোলনকারীর৷ তাঁর মতে, ভাষার এই পরিবর্তন গ্রহণযোগ্য নয়৷ তবে পত্রিকাগুলোয় চলিত ভাষার ব্যবহারকে সমর্থন করেন রফিকুল ইসলাম৷ তিনি বলেন, টেলিভিশনে সিরিয়ালগুলোতে যে ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে, ওটা কোন প্রমিতও নয়, কোন অঞ্চলের উপভাষাও নয়৷ এভাবে ভাষাকে বিকৃত করা হচ্ছে৷

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন