রিজার্ভ চুরির তদন্তে এফবিআই
১৮ মার্চ ২০১৬বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর, প্রাথমিক পর্যায়ের তদন্তে আইটি বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহাও অংশ নেন৷ শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ ব্যাংকে তদন্তকারীদের একাধিক বৈঠকের পর তিনি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথাও বলেন৷
জোহা তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পে সাইবার নিরাপত্তা বিভাগের ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করতেন৷ তবে প্রকল্পটি দু'মাস ধরে অর্থ না থাকায় স্থগিত রাখা হয়৷ জোহার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টার দিকে মোবাইল ফোনে জোহা তাঁর স্ত্রী ডা. কামরুন্নাহারের সঙ্গে সর্বশেষ কথা বলেন৷ তিনি তখন অটোরিকশা করে বন্ধু ইয়ামির আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে কলাবাগানের বাসায় ফিরছিলেন৷ কিন্তু যথা সময়ে বাসায় ফিরে না আসায় রাত সোয়া ১২টায় যোগাযোগ করা হলে জোহার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়৷ পরে জোহার বন্ধু ইয়ামির ফোন করে বলেন, অটোরিকশায় বাসায় ফেরার সময় কচুক্ষেতের কাছে তাদের দুই পাশ থেকে দু'টি গাড়ি এসে অটোরিকশা থামায়৷ এরপর অজ্ঞাত ব্যক্তিরা দুই বন্ধুকেই কালো কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে আলাদা গাড়িতে তোলে৷ পরে অবশ্য ইয়ামিরকে একটা জায়গায় নামিয়ে দেয়া হয়৷ এরপর থেকে এখনও পর্যন্ত জোহার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি৷
জোহার শ্যালক মোহাম্মদ হাসান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘আমরা বুধবার রাত থেকেই রাজধানীর ধানমন্ডি, কলাবাগান, ভাসানটেক, ক্যান্টনমেন্ট থানাসহ বেশ কয়েকটি থানায় জোহাকে উদ্ধারের জন্য লিখিত অভিযোগ নিয়ে গেছি৷ কিন্তু কোনো থানাই আমাদের অভিযোগ গ্রহণ করেনি৷''
জেহার স্ত্রী ডা. কামরুন্নাহার ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘জোহা দেশের জন্য কাজ করেছে৷ তার মতো একটা সৎ মানুষের এই পরিণতি কেন হবে? আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করছি, তাকে যেন উদ্ধার করা হয়৷ সে দেশের অনেক গরুত্বপূর্ন ঘটনা তদন্তে সহায়তা করেছে৷ তার প্রতিদান যেন তাকে দেয়া হয়৷ তাকে যেন আমরা সুস্থ অবস্থায় ফিরে পাই৷''
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘জোহাকে যদি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে থাকে তাহলে তাঁকে আদালতে হাজির করা হবে৷''
জোহাকে নিয়ে অবশ্য এর আগে থেকেই বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল৷ আইসিটি মন্ত্রণালয় ১৪ মার্চ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ‘‘জোহা আইসিটি মন্ত্রণালয়ের কেউ নয়৷ তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত নিয়ে তাঁর বক্তব্য নিতান্তই ব্যক্তিগত৷''
এর প্রতিক্রিয়ায় সেই দিনই জোহা ‘বাংলা ট্রিবিউন'-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের টাকা চুরির আসল ঘটনা আমি সংবাদমাধ্যমকে বলেছি, এ কারণে আমাকে চাপ দেয়া হচ্ছে৷ আমাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে৷ তারা তদন্ত সহায়তা থেকে আমাকে সরিয়ে দিতে চাইছে৷ কারণ আমি অনেক বিষয়েই প্রশ্ন তুলছি৷ আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে পুরো ঘটনা জানাতে চাই৷''
ওদিকে রিজার্ভের ৮১ মিলিয়ন ডলার সাইবার ডাকাতির ঘটনা এখন তদন্ত করছে সিআইডি৷ সিআইডি-র ডিআইজি সাইফুল আলম জানান, ‘‘তদন্তে এফবিআই-এর সহায়তা নেয়া হচ্ছে৷ রবিবার এফবিআই আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তে সহায়তার কাজ শুরু করবে৷''
সিআইডি-র ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা এরইমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের কম্পিউটার সার্ভার জব্দ করেছে৷ অন্তত আটজন কর্মকর্তাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে বলে খবর৷
আইটি বিশেষজ্ঞ জোহাকে কি সুস্থ অবস্থায় আদৌ খুঁজে পাওয়া যাবে? লিখুন নীচের ঘরে৷