1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানির সাবেক পুব-পশ্চিম সীমান্ত এখন প্রাণবৈচিত্রের স্বর্গ

১৬ নভেম্বর ২০০৯

১৯৮৯ সাল পর্যন্ত পুব-পশ্চিম সীমান্তের কংক্রিট আর কাঁটাতারের তথাকথিত মৃত্যু-উপত্যকা জার্মানি এবং ইউরোপকে বিভক্ত করে রেখেছিল৷

https://p.dw.com/p/KYRB
ফাইল ফটোছবি: dpa

এ এলাকাটি হয়তো রাজনৈতিক উত্থানপতনের প্রতীক হয়ে আছে, কিন্তু তা এখন প্রাণবৈচিত্রের জন্য আদর্শ ভূমি হিসেবে বিকশিত হয়েছে৷

সাবেক পুব এবং পশ্চিম জার্মানির মধ্যকার ১,৪০০ কিলোমিটারের সীমান্ত শুধু একটা জাতিকেই বিভক্ত করেনি, তা বহু পরিবার এবং অঞ্চলকেও বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল৷ দেশের মধ্যভাগজুড়ে চলে যাওয়া হারৎস পর্বতমালাও তেমনি আলাদা হয়ে যাওয়া একটি অঞ্চল৷ কাঁটাতারের বেড়া, কংক্রিটের দেয়াল, ওয়াচ টাওয়ার এবং স্যুটিং রেঞ্জ মিলিয়ে সাধারণত ৫০ থেকে ২০০ মিটার চওড়া ওই সীমান্ত পশ্চিম জার্মানির শহর হোয়েগাইসকে পৃথক করেছে এর পুব জার্মান প্রতিবেশী বেনেকেনস্টাইন শহরটি থেকে৷

ফ্রিডেমান শোয়ারৎস এর বাড়ি এই তথাকথিত মৃত্যু-উপত্যকার মাত্র কয়েকশ' মিটার দূরেই৷ শোয়ারৎস বলছিলেন, তার এখনো মনে আছে সেসব সময়ের কথা যখন এই সীমান্ত দু'পারের আত্মীয়স্বজনের মধ্যে দেখা সাক্ষাৎ করাটাকে এক দুঃসহ অভিজ্ঞতার দিকে ঠেলে দিয়েছিল৷ বাস, ট্রেন, সীমান্তরক্ষীদের হয়রানি সয়ে এপার ওপার করাটা ছিল খুবই ক্লান্তিকর৷ শহর দু'টি মাত্র ৩ কিলোমিটার দূরে হলেও শোয়ারৎস জানান ১৯৭২ সালে প্রথম যেবার তিনি হোয়েগাইস-এ নিজের বাড়ি থেকে পাশের গ্রামে গিয়েছিলেন তখন ১৩ ঘণ্টা ধরে ৩০০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে তাকে সেখানে যেতে হয়েছিল৷

মেঘের আড়ালে সূর্য হাসে

এ বিভক্তি যদিও ওই এলাকার বাসিন্দাদের জন্য বিচ্ছিন্নতা আর নানা ব্যক্তিগত দুঃখ দুর্দশার কারণ ছিল, কিন্তু তা ওই এলাকার উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলের জন্য ছিল আশীর্বাদস্বরূপ৷ পুনরএকত্রীকরণের সময় থেকে ওই এলাকায় কাজ করতে থাকা প্রকৃতিবাদী কাই ফ্রোবেল এর মতে, একে অন্যের মধ্যে মিশে যাওয়া তৃণভূমি থেকে পার্বত্য বনাঞ্চল পর্যন্ত প্রাণবৈচিত্রের বিচারে প্রায় ১৭টি ভিন্ন এলাকা রয়েছে ওই সীমান্ত উপত্যকা জুড়ে৷ জার্মানিতে যেহেতু জনশূন্য এলাকা খুবই কম আর দূরদূরান্তে তাই স্থানীয়দের কাছে মিস্টার সবুজ ফিতে নামে পরিচিত ফ্রোবেল এই ভূমিটুকুকে সংরক্ষণের বিষয়ে খুবই উচ্চকণ্ঠ৷

দীঘল সবুজ ফিতে

সীমান্ত বরাবর এই দীঘল সবুজ ভূখণ্ডের প্রায় ৮৫ ভাগই এখনো এর প্রাকৃত অবস্থাতেই আছে৷ বাল্টিক সাগরতীরের বেলাভূমি থেকে শুরু করে জার্মান-চেক সীমান্তের পার্বত্যভূমি পর্যন্ত বেশিরভাগ জায়গাতেই এখনো ধূসর-বাদামি বুনো ঘাস আর ঝোপঝাড়ে ছাওয়া নিসর্গ দেখতে পাওয়া যাবে৷ তবে, কৃষি সম্প্রসারণ এবং মহাসড়ক, রেলপথের নির্মাণে প্রাকৃত এই ভূখণ্ড এবং এখানকার প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে৷

সবাই বলছে, প্রায় ৬০০ প্রজাতির বিপন্নপ্রায় উদ্ভিদ ও প্রাণী এই সবুজ উপত্যকায় নিজেদের ঠাঁই করে নিয়েছে৷ এদের মধ্যে ছোট্ট ভিনচ্যাট থেকে শুরু করে বড় ব্ল্যাকস্টোর্ক পাখি, গেছো ব্যাঙ, বুনো বিড়াল, ছোট্ট পোকামাকড় আর বিচিত্র প্রজাতির উদ্ভিদ সবই রয়েছে৷

পর্যটনের সম্ভাবনা

প্রাণবৈচিত্র যদিও জার্মানিতে বরাবরই পর্যটকদের জন্য একটি বড় আকর্ষণ কিন্তু ঐতিহাসিক গুরুত্ব সত্ত্বেও এ এলাকায় এ ক্ষেত্রটি বিকশিত হয়নি৷ ওদিকে এ এলাকার ঐতিহাসিক নিদর্শনের অনেক কিছুই নষ্ট করে ফেলা হয়েছে৷ ৮৫০টি ওয়াচ টাওয়ার আর ৩,০০০ কিলোমিটার সীমান্ত প্রাচীরের বেশিরভাগই ভেঙ্গে ফেলা শুধু পর্যটনের জন্যই অসুবিধাজনক হয়নি বরং সম্মিলিত জাতীয় ইতিহাসের বিবেচনাতেও ক্ষতিকর হয়েছে৷

এ এলাকায় পর্যটনের বিকাশে বিশেষত শিশু এবং তরুণদের জন্য নানা কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে এসেছে ফ্রাঙ্কেনভাল্ডস ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশন৷ সংস্থাটির প্রধান স্টেফান ফ্রেডলমায়ার অন্যান্য নানা বিষয়ের মধ্যে এখানে শিশুদের আমন্ত্রণ জানানো হয় কাছাকাছি নদীগুলো এপার ওপার করার জন্য সেতু আর ভেলা বানানোর জন্য৷ শিশুরা যখন এসব রোমাঞ্চে মত্ত থাকে সেই সুযোগে ফ্রেডলমায়ার তাদের কাছে ইতিহাসের ডালি মেলে ধরেন৷ তিনি তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন যে, কেন দুই দশক আগে ইচ্ছে করলেই তারা এই নদী পেরোতো পারতো না, কীভাবে স্নায়ুযুদ্ধের সময়টা জুড়ে এই এলাকাটি জার্মানি আর ইউরোপকে বিভক্ত করে রেখেছিল৷

প্রতিবেদক: মুনীর উদ্দিন আহমেদ

সম্পাদনা: আবদুস সাত্তার