1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জার্মানির সবুজ দলের ৩০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

১৩ জানুয়ারি ২০১০

আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল জার্মানির রাজনৈতিক দল ডি গ্রুনে বা সবুজ দল৷ এখন নামে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে বুন্ডনিস নয়েনসিশ/ডি গ্রুনে৷ এ সপ্তাহেই দলটি পালন করছে ৩০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী৷

https://p.dw.com/p/LTqE
সবুজ দলের প্রধান সেম ওজদেমির এবং ক্লডিয়া রথছবি: picture alliance / dpa

এই দলটিই সবুজ পৃথিবী গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে এসেছে৷ পরিবেশ নিয়ে সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে সক্ষম হয়েছে ডি গ্রুনে৷

৩০ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৮০ সালে জার্মানিতে পরিবেশ রক্ষায় সোচ্চার হয় কিছু মানুষ৷ শান্তিপূর্ণভাবে তাঁরা পৃথিবীর আবহাওয়া এবং পরিবেশকে সুস্থ রাখতে বদ্ধ পরিকর হয়৷ প্রতিষ্ঠিত হয় রাজনৈতিক দল ডি গ্রুনে৷ প্রতিষ্ঠার তৃতীয় বছরেই জার্মান সংসদে স্থান করে নেয় ডি গ্রুনে৷ সেই শুরু৷ ১৮ বছর পর অর্থাৎ ১৯৯৮ সালে আরেক রাজনৈতিক দল এস পিডি-র সঙ্গে ডি গ্রুনে মিলে গঠিত হয় জোট সরকার৷ একটানা ৭ বছর ক্ষমতায় ছিল ডি গ্রুনে৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান ইয়শকা ফিশার, পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হয় ইয়ুর্গেন ট্রিটিনকে৷ ১৯৮৩ সালে জার্মান সংসদে নিজের স্থান করে নেয়ার পর ১৯৮৫ সালে সংসদে সবুজ দলের নেতৃত্ব দেন হান্স ক্রিশ্চিয়ান স্ট্রোবেলে৷ ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ৭০ বছর বয়স্ক স্ট্রোবেলে বললেন, শুরুতে অনেক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছিল সবুজ দল৷ এরপর ধীরে ধীরে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে তারা৷ সবুজ দল অন্য সব রাজনৈতিক দলের মত নয়, তারা ভিন্ন, তারা নিজেদের সাজিয়েছিল একেবারে অন্যরূপে, অন্য রকম মাধু্র্য্যে৷ অন্য সব রাজনৈতিক দল সাধারণভাবে যা করে তার কোনটাই অনুসরণ করেনি সবুজরা৷

ডি গ্রুনে বা সবুজ দলের মূল লক্ষ্য ছিল পরিবেশ রক্ষা করা, পরিবেশ রক্ষায় সাধারণ মানুষদের সচেতন করা৷ আজ ৩০ বছর পর মানুষ সত্যিকার অর্থেই বুঝতে পারছে পরিবেশ রক্ষা কত জরুরী, কেন পৃথিবীকে সবুজ রাখা এত প্রয়োজন৷ ডি গ্রুনের এই প্রচেষ্টা শুধু জার্মানিতে নয় ছড়িয়ে পড়েছে ইউরোপের অন্যান্য দেশেও৷ শুধু পরিবেশ রক্ষায় প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে মন্ত্রণালয়, আবহাওয়া ও পরিবেশ খাতে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি, বাজেটও বৃদ্ধি পাচ্ছে উত্তরোত্তর৷ এসব কিছু সম্ভব হয়েছে সবুজ দলের কল্যাণে৷ প্রতিনিয়ত দলটি প্রচারাভিযান চালিয়ে গেছে, বুঝিয়েছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের, কর্মরত মানুষ থেকে একজন গৃহিনীও আজ বুঝতে পারেন কেন পরিবেশ রক্ষায় সবার সহযোগিতা প্রয়োজন, কেন আগামী প্রজন্মকে একটি সুন্দর সবুজ পৃথিবী উপহার দেয়া সবার কর্তব্য৷

Abfalltrennung der grüne Punkt
ময়লা পৃথকভাবে ফেলা হচ্ছে৷ সচেতনতার শুরু এভাবেইছবি: Duales System Deutschland AG

সবুজ দলের কল্যাণে রি-সাইক্লিং অর্থাৎ আবর্জনা বা ব্যবহৃত পদার্থের পুর্নব্যবহারের ওপর জোর দেয়া হয়েছে৷ প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে আবর্জনা ফেলার জন্য তিন ধরণের কন্টেইনার৷ টেটরা প্যাক, কাঁচের বোতল, কাগজ, কাঁচা শাকসব্জি কখনোই একটি কন্টেইনারে যাচ্ছে না৷ সবকিছুই আলাদা করে ফেলা হচ্ছে৷ খুব ছোট একটি বাচ্চাও জানবে কলার খোসা বা দুধের প্যাকেটটি কোথায় ফেলতে হবে৷ এই সচেতনতার পেছনে সবুজ দলের অবদান অপরিসীম৷

জার্মানির সবুজ দলের দেখাদেখি ইউরোপের অন্যান্য দেশেও গড়ে উঠেছে সবুজ আন্দোলন৷ সব দেশেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পরিবেশ রক্ষায় একটি রাজনৈতিক দল৷ আবহাওয়া এবং পরিবেশ নিয়ে তাদের কর্মকান্ড বাড়ছে, বাড়ছে ব্যস্ততা৷ সচেতনতা ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুতগতিতে, পৌঁছে যাচ্ছে গভীর থেকে আরো গভীরে৷ সবুজ দল ক্ষমতায় থাকাকালে পরিবেশ মন্ত্রী ছিলেন ইয়ুর্গেন ট্রিটিন৷ পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, আমারা চাচ্ছি জ্বালানির পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে অন্যান্য শিল্প কারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য পদার্থের ঝুঁকি কমাতে৷

Der Öko-Siedlung Vauban in Freiburg
ফ্রাইবুর্গের ইকো সিটি ফাওবানছবি: DW/Klaussner

একটি কথা না বললেই নয়, তা হল গত বছর জার্মানির দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত ফ্রাইবুর্গ শহর পৃথিবীর সবচেয়ে সবুজ শহর হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে৷ অর্থাৎ দ্যা গ্রিনেস্ট সিটি ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড৷এর মূল কারণ হল সেখানকার মানুষরা পরিবেশ বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন৷ প্রয়োজন না হলে কেউ সেখানে গাড়ি চালান না, সবাই চলাফেরা করেন পায়ে হেঁটে বা সাইকেলে৷ ছুটি কাটাতে সবাই বেরিয়ে পড়েন শহর ছেড়ে৷ প্রায় প্রতিটি বাড়ির ছাদে দেখা যাবে সোলার প্যানেল৷ ফ্রাইবুর্গের নাম দেয়া হয়েছে ইকো সিটি৷ ফ্রাইবুর্গের দেখাদেখি ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন জানিয়েছেন, গোটা ব্রিটেনে অন্তত দশটি ইকো সিটি তিনি তৈরী করতে চান৷

জার্মানিতে সবুজদের জনপ্রিয়তা কেমন ? সে প্রসঙ্গে ক্রিশ্চিয়ান স্ট্রোবেলে বললেন, বার্লিনের মত মেট্রোপলিটন শহরে সবুজদের জনপ্রিয়তার কোন কমতি নেই৷ সবুজ দল কি কখনো প্রধান রাজনৈতিক দলে পরিণত হতে পারবে ? এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় সবুজরা বার্লিনে ইতিমধ্যে সর্বসাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি দল এবং সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক দল৷

প্রতিবেদক: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদক: আব্দুস সাত্তার